তারকা সাক্ষাতকার

টাইগারদের প্রেমে অস্ট্রেলীয় নারী সাংবাদিক

ইশতিয়াক পারভেজ,ইংল্যান্ড থেকে

১৩ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৮:১৬ পূর্বাহ্ন

দল বিদায় নিলেও টাইগারদের নিয়ে আলোচনা থেমে নেই। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা বিভিন্ন দেশের সংবাদকর্মীদের মন জয় করে নিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট ও  সমর্থকরা। তাদের অন্যতম মিলিন্ডা ফ্যারেল। অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম হলেও এখন এই নরী সংবাদকর্মী ব্রিটিশ নাগরিক। কাজ করছেন জনপ্রিয় ক্রীড়া সংবাদমাধ্যম ইএসপিএনক্রিকইনফোর প্রতিনিধি হিসেবে। ওয়েলসের কার্ডিফে বাংলাদেশের প্রস্তুতি থেকেই প্রায় সব গুলো ম্যাচই তিনি দেখেছেন। করেছেন পর্যবেক্ষণও। প্রায় সময়ই তাকে দেখা যায় সহকর্মীদের সঙ্গে টাইগারদের নিয়ে আলোচনা করতে, অনেকটা শুভাকাঙ্ক্ষীর মতোই। আর দৈনিক মানবজমিনের অনুরোধে সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গেলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে। অকপটে জানালেন টাইগারদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ও  ভালোবাসার কথাও। কথা শুনে মনে হলো তিনি পড়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেমেই। তার সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: বিশ্বকাপের শুরু থেকেই বাংলাদেশ দলের প্রায় সব ম্যাচে আছেন, টাইগারদের নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন হলো?
মিলিন্ডা: প্রথমেই তোমাকে জানাচ্ছি আমি ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ দলকে ফলো করি। বিশেষ করে ক্যানবেরাতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি আমার এখনো মনে গেঁথে আছে। আমার কাছে মনে হয়েছে সেই বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচের একটি ছিল। এছাড়াও অ্যাডিলেডে তারা ইংল্যান্ডকে দারুণভাবে খেলে হারিয়ে দেয়। আমি বলবো ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ স্বপ্নই তারা সেবার ধ্বংস করে দিয়েছিল। তবে আমি খুবই বিস্মিত ও হতাশ এই দেখে যে বাংলাদেশ দল অস্ট্রেলিয়াতে দ্বি-পক্ষীয় সিরিজ খেলার সুযোগ পায়না, ইংল্যান্ডেও না।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বাংলাদেশকে ডাকেনা বলে আপনি হতাশ, কিন্তু এর পেছনের কারণ কী মনে করেন?
মিলিন্ডা: আমার হতাশার কারণ বাংলাদেশে অনেক প্রতিভা আছে। তারা দারুণ একটি দল বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে। তাদের সমর্থকরা যে কোনো ক্রিকেটকে রঙিন করে তোলে। এই বিশ্বকাপে যতক্ষণ তারা ছিল, মনে হয়েছে বিশ্বকাপটা জেগে ছিল। এই দলে সাকিব আল হাসানের মতো একজন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার আছে। ফিজের (মোস্তাফিজ) মতো একজন দারুণ পেসার আছে। দারুণ কিছু তরুণ প্রতিভা এর মধ্যে সৌম্য সরকারের নাম বলতেই হয়। আমি মনে করি বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানো খুবই দুঃখজনক। কারণ তারা (অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত) সব সময় ক্রিকেটকে এগিয়ে নেয়ার কথা বলে, ক্রিকেটকে সাহায্য করার কথা বলে। কিন্তু কাজে তার কোনো প্রমাণ নেই। আমি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু হতাশাই মিলেছে, আমি কোনভাবে বুঝতে পারিনা একটি দল শেষ অস্ট্রেলিয়াতে দ্বি-পক্ষীয় সিরিজ খেলেছে ২০০৮এ। ইংল্যান্ডে খেলেছে ২০১০এ। হ্যা, খুব শুনতে খারাপ লাগলেও অপ্রিয় সত্য কথাটা বলতেই হচ্ছে বড় দলগুলো আর্থিক ক্ষতির কথা চিন্তা করে। কিন্তু আমার প্রশ্ন অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের কি অর্থের এতই অভাব!
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়া ডাকে না, এমনকি বাংলাদেশে নানা অজুহাতে যেতেও চায়না...
মিলিন্ডা: আমিতো বলেছি যে অস্ট্রেলিয়া বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে সঠিক কোনো উত্তর পাইনি। তাই তাদের পক্ষ থেকেতো কিছু বলতে পারবো না। তবে বাংলাদেশে সফরে গেলেতো তাদের ক্ষতি হওয়ার কথা না। আমি অবাক হয়ে দেখেছি তাদের বাংলাদেশ সফর নিয়ে নানা অজুহাতে বাতিল করা দেখে। এটি ক্রিকেটের উন্নতির পথে ক্ষতিকর। বার বারই বলতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার মতো ক্রিকেটের দেশ শুধু টাকার কথাই ভাবে মনে হয়। তাদের ব্রডকাস্টারদের ক্ষতিটাই মুখ্য বলতে পারেন। সত্যি আমি একা না আমার মতো অনেক অস্ট্রেলীয় মুখিয়ে আছে বাংলাদেশের খেলা দেখার জন্য। আমি মনে প্রাণে চাই বাংলাদেশ দল অস্ট্রেলিয়াতে আসুক। কারণ ক্রিকেটের উন্নতি চাইলে তাদের বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। কারণ ক্রিকেটের অংশ তারা।
প্রশ্ন: বড় দলগুলো আমন্ত্রণ না জানানোয় কি প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে?
মিলিন্ডা: আমিতো বাংলাদেশ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার জন্য এই বড় দলগুলোকে দায়ী করবো। কারণ অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের ফাস্ট অ্যান্ড বাউন্সি কন্ডিশনে যদি বাংলাদেশ নিয়মিত খেলতে পারতো তাহলে এই বিশ্বকাপে ফলাফল অন্যরকমই হতো বলে আমি মনে করি। এখানে তারা নিয়মিত না খেলেও  যেভাবে পারফরম্যান্স করেছে তা সত্যি অসাধারণ। প্রায় প্রতিটি ম্যাচে  কোনো প্রতিপক্ষ জিতবেই আশা করে মাঠে নামেনি বলে আমার মনে হয়েছে। কারণ সবাই জানে বাংলাদেশকে হারানো কত কঠিন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৩৩ রান করা কোনো ছোট ঘটনা নয়। যদি তারা এই কন্ডিশনে খেলে অভ্যস্ত থাকতো তাহলে হয়তো সেমিফাইনালে নয়, ফাইনালেই খেলতো বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া  ও ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ভক্তরাও চায় টাইগাররা এখানে খেলুক। আমি অস্ট্রেলিয়ার বাচ্চাদের বলি যে তোমরা সাকিবকে ফলো করো। ওর মতো অলরাউন্ডার হও।
প্রশ্ন: এসব বিষয়ে আইসিসির কোনো ভূমিকা থাকা উচিত কিনা?
মিলিন্ডা: অবশ্যই থাকা উচিত। তবে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজটা দুই দেশের বোর্ডের উপরই নির্ভর করে। এখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে আরো যোগাযোগ বাড়াতে হবে। চাপ প্রয়োগ করতে হবে। আইসিসি এফিটিপিতে হয়তো অনুরোধ করতে পারে বা তাদের মনে করিয়ে দিতে পারে ক্রিকেটের ভালোর জন্য কী করতে হবে।
প্রশ্ন: এরপরও বাংলাদেশের কী দুর্বলতা আপনার সামনে এসেছে?
মিলিন্ডা: যদি তারা বাংলাদেশের মাটিতে না পারে সেটি নিয়ে সামালোচনা হতে পারে। কিন্তু এখানে তাদের অন্যতম দুর্বলতা ছিল কন্ডিশন। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডে বাইরের  কেউ এত সহজেই জিততে পারবেনা এটাই স্বাভাবিক। হ্যা, যারা এখন দলে আছে তাদের আরো দ্রুত শিখতে হবে। তাদের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। তবে দলে দারুণ সব প্রতিভা আছে। যেমন সাকিব সত্যি সুপার হিরো। আমি অনেক বোদ্ধা-বিশ্লেষককে বলতে শুনেছি টাইাগাররা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে।
প্রশ্ন: ১০ দলের বিশ্বকাপ নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
মিলিন্ডা: মাত্র ১০টি দল নিয়ে বিশ্বকাপকে সত্যিকার অর্থে ‘বিশ্বকাপ’ বলা কঠিন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ৮ আর এখানে মাত্র দুটি দল বেশি। তাহলে অন্য দলগুলো কেন ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী হবে? বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেতেই ছোট দলগুলো উন্নতির পথে হাঁটে। আমি মনে করি আইসিসির উচিত ক্রিকেটটাকে আরো উন্মুক্ত করে দেয়া। তখন তাদের বলা ‘বিশ্বায়ন’ শব্দটা সত্যিকারের সফল হবে নয়তো নয়। আইসিসির ১০ দলের বিশ্বকাপ গণ্ডি ভেঙে বের হতে হবে ক্রিকেটকে গোটা বিশ্বের খেলা হিসেবে পরিচিত করতে হলে। যেমনটা ফুটবল পেরেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে কখনো গিয়েছেন?
মিলিন্ডা: আমি মুখিয়ে আছি বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য। এবং সেটি যেন অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর হয়। আমার সহকর্মী  আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমি চাই দ্রুত বাংলাদেশে যেন যেতে পারি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে  আপনার প্রিয় ক্রিকেটার কে?
মিলিন্ডা: ‘ফিজ’, একজন দারুণ পেসার। আমি মোস্তাফিজুরের একজন ভক্ত, ওকে আমার দারুণ লাগে। সাকিবকে ভালো লাগে, আর মাশরাফিতো দারুণ একজন লড়াকু অধিনায়ক।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে মিস করছেন?
মিলিন্ডা: সত্যি মিস করছি। তাদের ক্রিকেট ও তাদের সমর্থকদের। এমন ক্রিকেট পাগল জাতি আমি দেখিনি। এরাই সত্যিকারে ক্রিকেটকে ভালবাসে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status