বাংলারজমিন

জাবিতে হল নির্মাণে কাটা পড়বে হাজারো গাছ

জাবি প্রতিনিধি

১৩ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৮:০৯ পূর্বাহ্ন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় পাঁচটি হল নির্মাণে কাটা পড়তে যাচ্ছে হাজারেরও বেশি গাছ। এই নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া  জানাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ছেলেদের জন্য ৩টি ও মেয়েদের ২টিসহ মোট পাঁচটি হল নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকৃত জায়গায় রয়েছে বটগাছ, একাশীয়া, শালবৃক্ষ, বিভিন্ন ফলদগাছসহ প্রায় ১১৩২টি গাছ। হল নির্মাণে কাটতে হবে এই হাজারো অধিক গাছ।
এদিকে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সম্প্রতি ‘অপরিকল্পিতভাবে’ শিক্ষার্থীদের হল নির্মাণের স্থান পুনঃনির্ধারণের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে অপরিকল্পিতভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ এবং প্রাণ প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস না করে কার্যকর উন্নয়নের দাবি জানিয়েছে ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ’। এছাড়া গত সোমবার একই ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং ৭ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেয়। একইদিনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা অপরিকল্পিতভাবে হল নির্মাণের প্রতিবাদে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি প্রদান করে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, গত ৩০শে জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪৪৫ কোটি টাকার ২৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১০তলা বিশিষ্ট পাঁচটি হল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। ছাত্রদের তিনটি হল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের দক্ষিণ পার্শ্বে (টারজান পয়েন্ট) ছাত্রীদের জন্য দুটি নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের উত্তরে হল নির্মাণের কারণে (শান্তিনিকেতন) ৫৩৯টি গাছ কাটা পড়বে। যেখানে ফলদ গাছের মধ্যে ৬৩টি গোলাপজাম, ১৭টি অমলকি, ১১টি কামরাঙা, ১২টি চালতা গাছ ছাড়াও রয়েছে প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির বিভিন্ন গাছ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আগে নির্ধারিত জায়গায় হল নির্মাণের জন্য কেটে ফেলতে হবে ৩৫৮টি গাছ। যেখানে কিছু সংখ্যক কাঠগাছ ছাড়া রয়েছে মেহগনি ও বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আগে পার্শ্বের খেলার মাঠেও হতে যাচ্ছে আরেকটি হল। মাঠের মধ্যে হল নির্মাণের ফলে মাঠের পাশে ২৮টি গাছ কাটা পড়ছে। আবার হলের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য জায়গা হিসেবে থাকছেনা কোনো খেলার মাঠ। এদিকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের দক্ষিণ পার্শ্বে (টারজান পয়েন্ট) ছাত্রীদের জন্য দুটি হল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে একটি বটগাছ, ১২৩টি কাঁঠাল গাছসহ রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২০৭টি গাছ।
ফলে পাঁচটি হল নির্মাণের কারণে সর্বমোট ১১৩২টি গাছ কাটা পড়বে। গাছ কেটে হল নির্মাণের সিদ্ধান্তকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্বার্থ পরিপন্থী’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, ইতিমধ্যে অপরিকল্পিত নির্মাণের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জায়গা নষ্ট হয়েছে এবং পরিবেশেরও ক্ষতি হয়েছে। আর কোনো ক্ষতি আমরা গ্রহণ করতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিকল্পনা যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার তাই প্রশাসনের উচিত তা জনসম্মুখে তুলে ধরা। সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংলাপে বসে মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পর নির্মাণ কাজ শুরু করা উচিত।
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অপরিকল্পিত কাজ অদূরদর্শী প্রসূত। কেননা, মহাপরিকল্পনা প্রয়োজন অনুযায়ী পুনঃনিরীক্ষণ হবে এটাই নিয়ম। পৃথিবীতে যেকোনো স্থাপনার পরিকল্পনা করা হলে এর পরিবেশ এবং এর ইকোসিস্টেমকে প্রাধান্য দিয়েই করা হয়। পরিকল্পনা করার সময় পরিবেশের অবস্থা পর্যালোচনা করে সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে। তা সমাধানের মাধ্যমে স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। প্রশাসন এই অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ বন্ধ করে মহাপরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে বলে দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিকল্পনা প্রকাশ করেনি বিষয়টি সত্য নয়। তবে প্রশাসন যা ভালো মনে করেন তাই করছেন বলে জানান তিনি।
যোগাযোগ করা হলে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, মহাপরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়নি বিষয়টি সত্য নয়। গত সাড়ে তিন বছর ধরে সিনেট সভাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে উন্নয়নের পরিকল্পনার বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে এবং এবং গত ১২ই জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসে কনসার্ট অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যায়েল ‘থ্রি-ডি মাস্টার প্ল্যান’ সকলকে দেখানো হয়েছে। কিন্তু তখন কোনো ধরনের সহযোগিতা বা পরামর্শ আমরা পাইনি। এখন কেন বলছেন ত্রুটি আছে? তাহলে কি আপনারা বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছেন? চূড়ান্ত হয়ে একনেকে পাশ হওয়া পরিকল্পনা পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে জানান উপাচার্য। গাছ কেটে হল নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু গাছ কাটা যাবে তার মধ্যে একাশীয়া, কামরাঙা বা জামরুল গাছ রয়েছে। যেসব গাছ পরিকল্পিতভাবে রোপণের তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ফলন দেবে। তবে যেখানে বৃক্ষ আছে সেখানে আমরা চিন্তাভাবনা করে পরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ করছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status