বিনোদন
প্রযোজকদের লগ্নিকৃত অর্থ অন্যের পকেটে
কামরুজ্জামান মিলু
১৩ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৭:৫৭ পূর্বাহ্ন
বর্তমানে একটা চলচ্চিত্র নির্মাণে এক কোটিরও বেশি টাকা লগ্নি করেন একজন প্রযোজক। ছবি মোটামুটি চললেও বিনিয়োগকৃত অর্থ কিছু হলেও ফেরত পাবার কথা। কিন্তু অধিকাংশ প্রযোজকের অভিযোগ যে, মুক্তি পাওয়া ছবি ব্যবসা করলেও নানান কারণে লগ্নিকৃত টাকা অন্যের পকেটে চলে যাচ্ছে। প্রেক্ষাগৃহে ছবি অনেক সময় ভালো ব্যবসা করার পরও অর্থ ফেরত পান না প্রযোজকরা। জানা যায়, ঢাকার চলচ্চিত্রে প্রেক্ষাগৃহ মালিক ও প্রযোজকদের মধ্যে টিকিটের আয় (শেয়ার মানি) বণ্টন নিয়ে আছে নানা ঝামেলা। প্রতিটি টিকিট বিক্রির টাকা থেকে প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপনা খরচ, এসি চার্জ, পৌর কর, ভ্যাট বাদ দিয়ে বাকি টাকা হল মালিক ও প্রযোজকের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। একজন প্রযোজক যে অংশটুকু পাচ্ছেন, তা থেকে আবার প্রেক্ষাগৃহে প্রজেকশন মেশিন ভাড়া, ব্যানার, হলের পোস্টার খরচ, বুকিং এজেন্ট কমিশনসহ বিভিন্ন খরচ একজন প্রযোজককেই বহন করতে হয়। চলচ্চিত্র প্রযোজক শামসুল আলম সবশেষ ‘রাত্রীর যাত্রী’ ছবিটি প্রযোজনা করেছেন। হাবিবুল ইসলাম হাবিব পরিচালিত এবং প্রিয়দর্শিনীখ্যাত মৌসুমী অভিনীত এ ছবিটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তির পর তেমন কোনো অর্থ সিনেমা হল থেকে ফেরত পাননি বলে জানান প্রযোজক। শামসুল আলম বলেন, ছবিতে আমি ও ছবির পরিচালক হাবিব ভাই প্রযোজনা করেছি। তবে প্রায় ৯০ ভাগ বিনিয়োগ আমার ছিল। এ ছবির বাজেট ছিল ৭৫ লাখ টাকা। ছবিটি মুক্তির পর বেশকিছু সিনেমা হলে ভালো ব্যবসা করেছে। রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স থেকেও ভালো সাড়া পেয়েছি আমরা। তবে কষ্টের কথা হচ্ছে সব সিনেমা হলে ই-টিকেটিং সিস্টেম না থাকার কারণে টিকিট বিক্রির সঠিক হিসাবে পাওয়া যায়নি। টাকা চলে গেছে অন্যের পকেটে। সিনেমাটি প্রযোজনা করার পর সিনেমা হল, টিভি চ্যানেলে ছবির স্বত্ব বিক্রিসহ সব মিলে ২০ লাখেরও কম টাকা ফেরত পেয়েছি। আমাদের এ ছবির পরিচালক হাবিব ভাই বর্তমান সরকার বরাবর দেশের ৩০০ আসনে ৩০০টি সিনেপ্লেক্স করার জন্য একটি চিঠি দিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, যদি সারা দেশে ৩০০ এর জায়গায় নতুন ২০০ সিনেপ্লেক্সও হয় তাহলে আমাদের প্রযোজকদের ছবিতে লগ্নিকৃত অর্থ ফিরে আসবে। এদিকে চলচ্চিত্রের আরেক প্রযোজক রমিজ উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, অপূর্ব রানা পরিচালিত ‘ইনোসেন্ট লাভ’ ছবিটি সবশেষ আমি প্রযোজনা করেছিলাম। এ ছবিটি ২০১৭ সালের শেষদিকে মুক্তি পায়। এর বাজেট ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ছবি মুক্তির পর পেয়েছি মাত্র ৫ লাখ টাকা। ছবিটি মোটামুটি চললেও টাকা ফেরত পাইনি। এর কারণ হচ্ছে সিনেমা হলের টিকিট সেল অনুযায়ী টাকার হিসাব প্রযোজক হিসেবে আমি সঠিকভাবে পাইনি। বুকিং এজেন্ট ও ম্যানেজার যে হিসাব আমাকে দিয়েছে তাই বিশ্বাস করতে হয়েছে। অথচ সিনেমা হল ভিজিট করতে গিয়ে দেখেছি বেশ কিছু সিনেমা হলে ছবিটি ভালো চলেছে। দেশের সব সিনেমা হল তো আর আমার ভিজিট করা সম্ভব না। একটা চক্র টাকাগুলো খেয়ে ফেলেছে আমার। অন্যদিকে আরেক প্রযোজক নাসির উদ্দিন দিলু বলেন, নতুন প্রযোজকরা অনেকে সিনেমায় লগ্নি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি কার্যকর না থাকা। সবার স্বার্থ রক্ষার জন্য তাই নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে সমিতি। আসছে ২৭শে জুলাই অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাচন। এ সমিতির নতুন কমিটি আসলে সারা দেশে সিনেপ্লেক্স চালু করা, প্রেক্ষাগৃহ থেকে প্রযোজকদের ঠিকমতো পাওনা আদায়সহ অনেক সমস্যার সমাধানও হবে বলে মনে করছেন অনেক প্রযোজক।