এক্সক্লুসিভ

যেভাবে গ্রেপ্তার হলো পাথরখেকো বশর মিয়া

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

১৩ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৭:৫৫ পূর্বাহ্ন

গত বছর শারপিনটিলার ঘটনা। ওয়ারেন্টভুক্ত সন্ত্রাসী ফারুককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হাতে হ্যান্ডকাফও লাগিয়েছিল। কিন্তু এলাকা থেকে ফারুককে নিয়ে আসতে পারেনি। তার ভাই আলোচিত বশর পুলিশের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। পুলিশকে মারধর করে ছিনিয়ে নেয় ফারুককে। এ ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। এই ঘটনায়ও মামলার আসামি ছিল আলোচিত বশর। কিন্তু গ্রেপ্তার হয়নি। ওই ঘটনার পর শারপিনটিলায় তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ যায়নি। হামলার আশঙ্কা ছিল পুলিশের। অবশেষ সেই বশর গ্রেপ্তার হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে র‌্যাব সদস্যরা ঘেরাও করে শারপিনটিলা বাজারের নিকটবর্তী তার আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। একই সঙ্গে উদ্ধার করেছে আগ্নেয়াস্ত্রও। বশর গ্রেপ্তারের পর তার নিয়ন্ত্রিত বাহিনীর সদস্যরা গা-ঢাকা দিয়েছে। শান্তি ফিরেছে এলাকায়। বশর শুধু সন্ত্রাসী নয়, সে কোম্পানীগঞ্জের আলোচিত শারপিনটিলার পশ্চিম অংশের নিয়ন্ত্রকও। শারপিনটিলা থেকে গায়ের জোরে বশর ও তার সহযোগীরা কোটি কোটি টাকার পাথর লুটপাট করেছে। তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার গর্তে মারা গেছে বহু পাথর শ্রমিক। নিরীহ এসব পাথর শ্রমিকের লাশ গুমের নায়কও ছিল এই বশর। গতকাল বিকালে র‌্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার মেজর শওকাতুল মোনায়েম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- কোম্পানীগঞ্জের আলোচিত বশর মিয়া ২০ মামলার আসামি। সে ওয়ারেন্টভুক্ত ছিল। তাকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার রাত সাড় ১০টার দিকে শারপিনবাজার সংলগ্ন জালিয়ার পাড়ে বশরের আস্তানায় অভিযান চালায়। এ সময় একটি দেশীয় পাইপগান, দুটি কার্তুজ, দুটি ধারালো চাকুসহ বশরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ পরিবেশ ধ্বংসের ২০টি মামলা রয়েছে। গতকাল বিকালে র‌্যাব সদস্যরা বশরকে কোম্পানীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছে বলে জানান। স্থানীয়রা জানান- পাথরখেকো বশর জালিয়ারপাড় এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। এলাকায় প্রভাবশালী পরিবার হওয়ার কারণে সে ছিল বেপরোয়া। তার ভাই কালা, ফারুক, মাসুক, গফ্‌ফার মিলে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। শারপিনটিলার পশ্চিম অংশ তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। গত ১০ বছর ধরে শারপিনটিলার পাথরখেকো হিসেবে তারা পরিচিত। পুলিশ জানায়- ২০১৬, ২০১৭  ২০১৮ সালজুড়ে শারপিনটিলায় মৃত্যুর মিছিল হয়। ওই সময় সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়   বশর ও তার ভাইদের মালিকানাধীন গর্তে। বশর ও তার লোকজনের কাছে অসহায় ছিলেন সবাই। এরই মধ্যে তারা প্রভাব খাটিয়ে অন্তত ১০ কোটি টাকার পাথর লুট করেছে। মানুষ মৃত্যুর ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলেও বশর ছিল ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এমনকি পুলিশের ওপর হামলার পর সে এলাকায় দাপট খাটিয়ে সরব ছিল। ট্রাক্টর থেকে চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগের হোতাও সে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি তাজুল ইসলাম গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- বশর কোম্পানীগঞ্জের আলোচিত সন্ত্রাসী। সে পুলিশের তালিকায় পলাতক আসামি। তার বিরুদ্ধে পাঁচ মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এর বাইরেও সে আরো ১২ মামলার আসামি। তিনি জানান, শারপিনটিলা এলাকায় বিভিন্ন সময় পাথর উত্তোলনকালে মৃত্যুর ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এখন তাকে ওয়ারেন্ট তামিল দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানান ওসি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে খুব সহজেই র‌্যাবের হাতে ধরা দেয়নি বশর মিয়া। তাকে গ্রেপ্তারের সময় বিপুল সংখ্যক র‌্যাব সদস্য ওই এলাকায় উপস্থিত ছিল। এ সময় তারা বশরের অবস্থান করা পুরো ভবন ঘিরে ফেলে। এ দৃশ্য দেখতে আশপাশের শত শত মানুষ ভিড় জমায়। অভিযানের সময় র‌্যাব সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। এ সময় তারা তার আস্তানায় আগ্নেয়াস্ত্রও পায়। স্থানীয়রা জানান, শারপিনটিলায় একের পর এক মানুষ মৃত্যুর ঘটনায় প্রায় দুই বছর আগে পরিবেশ অধিদপ্তর ও কোম্পানীগঞ্জের প্রশাসন ৪৮ পাথরখেকো চক্রের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল। ওই তালিকায় বশরের নাম রয়েছে। এ ছাড়া শারপিনটিলার পাথরখেকো মোহাম্মদ আলী, আঞ্জু, আইয়ূব, ছোয়াবসহ আরো কয়েকজন আলোচিত পাথরখেকো সিন্ডিকেটের নাম রয়েছে। এসব সিন্ডিকেটের পাথর লুটপাটের কারণে ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে শারপিনটিলা।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status