এক্সক্লুসিভ
চীনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে ২২ রাষ্ট্রদূতের কড়া চিঠি
মানবজমিন ডেস্ক
১২ জুলাই ২০১৯, শুক্রবার, ৮:০৪ পূর্বাহ্ন
সিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমসহ অন্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চীনের নির্মম আচরণের প্রতিবাদে জাতিসংঘে কমপক্ষে ২২টি দেশের রাষ্ট্রদূত নিন্দা জানিয়েছেন। তারা এ বিষয়ে যৌথভাবে একটি চিঠি লিখেছেন জাতিসংঘে। তাতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের স্বাধীনভাবে চলাচল করার অনুমতি দিতে চীনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রতি কমপক্ষে ২২টি দেশের পক্ষে ওই চিঠি পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রদূতরা। এর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, বৃটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান প্রভৃতি। ২২টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করে তা পাঠিয়ে দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদের প্রেসিডেন্ট কোলি স্যেক ও মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের কাছে। উল্লেখ্য, চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ সিনজিয়াং। সেখানে বসবাসকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই উইঘুর মুসলিম। কিন্তু চীন সরকার তাদের বিরুদ্ধে নানা রকম নিষ্পেষণ চালাচ্ছে। তাদের কমপক্ষে ১০ লাখ সদস্যকে বিভিন্ন অন্তর্বর্তী শিবিরে আটকে রাখা হয়েছে। মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, তাদেরকে বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু চীন সরকার বলছে, তাদেরকে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে আরো মর্মান্তিক খবর বেরিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বহু সংখ্যক শিশুকে আটকে রেখেছে চীন। তাদেরকে পিতামাতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে আটকে রাখা হয়েছে।
ওইসব শিবিরকে নির্যাতন চালানোর ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’ বলে বর্ণনা করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ ও তাতে থাকা সাবেক বন্দিরা। তারা বলেছে, ওই সব বন্দিশিবিরে আটক ব্যক্তিদের বেশির ভাগই মুসলিম উইঘুর। এ ছাড়া আছে কিছু অন্যান্য সংখ্যালঘু। তাদেরকে চীনের জাতিগত হ্যান সমাজের সঙ্গে জোর করে মিশিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। জাতিসংঘে লেখা ওই চিঠিতে রাষ্ট্রদূতরা উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, সেখানে খেয়াল-খুশিমতো আটকের বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট আছে। ব্যাপক নজরদারি করা হয়। নানারকম বিধিনিষেধ আছে। বিশেষ করে এসব প্রয়োগ করা হয় সিনজিয়াংয়ের উইঘুর ও অন্য সংখ্যালঘুদের উপরে। চিঠিতে খেয়ালখুশি মতো আটক বন্ধ করতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ওইসব রাষ্ট্রদূত। তারা উইঘুর, উইঘুর মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবাধ চলাচলের অনুমতি দেয়ার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন চীন সরকারের প্রতি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতরা এই চিঠি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত। তারা এই চিঠিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের একটি অফিসিয়াল ডকুমেন্ট হিসেবে গণ্য করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই কাউন্সিলের ৪১তম অধিবেশন শুক্রবার শেষ হচ্ছে জেনেভায়। এই পরিষদ বা কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা ৪৭। কোনো দেশের রেকর্ড নিয়ে সমালোচনা করে এই পরিষদে কূটনীতিকদের খোলা চিঠি পাঠানোর ঘটনা বিরল। এবার তাই ঘটলো। তারা সিনজিয়াংয়ের মুসলিমদের বিরুদ্ধে চালানো নির্যাতনের বিষয়ে চুপ থাকতে পারেননি। তাই খোলাচিঠি লিখেছেন জাতিসংঘের প্রতি।
এর আগেই বিবিসি পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় মুসলিম উইঘুর সংখ্যাগরিষ্ঠ শিনজিয়াং অঞ্চলে এমনটা ঘটছে। নতুন গবেষণার বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বিবিসি। খবরে বলা হয়, লাখ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমকে যখন বিশাল আকারের শিবিরে আটক করে রাখার পাশাপাশি, শিনজিয়াং প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে বহু আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করার কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। প্রকাশ্যে উপলভ্য নথি ও বিদেশে বসবাসরত কয়েক ডজন পরিবারের সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বিবিসি এ দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
রেকর্ড অনুযায়ী, কেবল একটি শহরেই ৪ শতাধিক শিশুর পিতা ও মাতা উভয়েই ওই শিবির অথবা কারাগারে বন্দি। এই শিশুদের রাষ্ট্রীয়ভাবে দেখভাল প্রয়োজন কিনা তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ণ চালানো হচ্ছে।
শিনজিয়াং-এর প্রাপ্তবয়স্কদের পরিচয় বদলে দেয়ার প্রচেষ্টা চালানোর পাশাপাশি, বিভিন্ন প্রমাণ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, শিশুদেরকে তাদের আদি সংস্কৃতি থেকে দূরে রাখার আরেকটি প্রয়াসও চালানো হচ্ছে। শিনজিয়াং-এ ভীষণ কঠোর নজরদারি চালায় চীন। বিদেশি সাংবাদিকদের সেখানে ২৪ ঘণ্টা নজরে রাখা হয়। ফলে সরাসরি সেখান থেকে কারও সাক্ষ্য গ্রহণ অসম্ভব। তবে তুরস্ক থেকে অনেকের সাক্ষ্য নেয়া সম্ভব হয়েছে। ইস্তাম্বুলে একটি বড় হলে উপস্থিত হয়ে কয়েক ডজন মানুষ সারিবদ্ধ হন নিজেদের কষ্টের কথা জানাতে। এদের অনেকের হাতেই শিশুদের ছবি, যাদেরকে শিনজিয়াং-এ নিজ বাড়িতে আর পাওয়া যাচ্ছে না।
এক সন্তানের মা বলেন, ‘আমি জানি না এখন তাদের দেখভাল করে কে।’ তার হাতে নিজের ৩ কন্যার ছবি। তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই নেই।’ আরেক মায়ের হাতে ৩ ছেলে ও ১ মেয়ের ছবি। অশ্রু মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি যে, তাদেরকে একটি এতিমখানায় নেয়া হয়েছে।’ মোট ৬০টি পৃথক সাক্ষাৎকারে পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজন শিংজিয়াং-এ প্রায় ১০০ শিশুর অন্তর্ধানের মর্মন্তুদ বর্ণনা দিয়েছেন।
এরা সকলেই উইঘুর। শিনজিয়াং-এর সর্ববৃহৎ সম্প্রদায়ের সদস্য। মুসলিম ধর্মাবলম্বী এই গোষ্ঠীর সঙ্গে তুরস্কের দীর্ঘ ভাষা, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় সম্পর্ক রয়েছে। হাজার হাজার উইঘুর তুরস্কে এসেছেন পড়াশুনা বা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য। কেউ এসেছেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে। কেউ বা এসেছেন চীনের জন্মনিয়ন্ত্রণ সীমা ও ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় নির্যাতন থেকে বাঁচতে। গত ৩ বছরে তুরস্কে অবস্থানরত উইঘুররা বেশ বিপাকে পড়ে যান। এই কয়েক বছরে চীন লাখ লাখ উইঘুরকে বন্দি করে প্রকাণ্ড শিবিরে আটকে রেখেছে। চীনা কর্মকর্তারা বলছেন, ধর্মীয় চরমপন্থা রোধে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে উইঘুরদের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রমাণ থেকে দেখা যায়, শুধু নিজেদের ধর্মীয় নিয়মকানুন অনুসরণের জন্য (যেমন, নামাজ পড়া বা হিজাব পরা) কিংবা তুরস্কের মতো বিদেশে সম্পর্ক থাকার দায়ে বহু মুসলমানকে এসব শিবিরে আটক রাখা হয়েছে। ফলে তুরস্ক বা বিদেশে অবস্থানরত উইঘুররা দেশে ফিরলে নিশ্চিত আটকের ঝুঁকিতে রয়েছেন। ফোন যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে বিদেশে অবস্থানরত স্বজনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলাও শিনজিয়াং-এর উইঘুর বাসিন্দাদের জন্য বিপজ্জনক।
এক ব্যক্তির স্ত্রী আটক রয়েছেন। তিনি জানান, তার ৮ সন্তান। কিন্তু তার আশঙ্কা, এদের অনেককেই হয়তো রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে নিয়ে নেয়া হয়েছে। তার ভাষ্য, ‘আমার মনে হয় তাদের শিশু শিক্ষা শিবিরে নেয়া হয়েছে।’
এসব শিশু কেমন আছে, কী অবস্থায় আছে, তার কিছু চিত্র বিবিসি পরিচালিত নতুন গবেষণায় ওঠে এসেছে। শিনজিয়াং-এ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমদের গণবন্দিত্ব পূর্ণ মাত্রায় ফাঁস করার কৃতিত্ব দেয়া হয় জার্মান গবেষক আদ্রিয়ান জেঞ্জকে। প্রকাশ্যে উপলভ্য নথির বরাতে তিনি একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন। সেই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শিনজিয়াং-এ নজিরবিহীন গতিতে আবাসিক স্কুল গড়া বা বিস্তৃত করার কাজ চলছে। বহু বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ বড় করা হয়েছে। নতুন ডরমেটরি নির্মাণ ও পুরাতন ডরমেটরির সঙ্কুলান বৃদ্ধি করা হয়েছে ব্যাপক হারে। শিনজিয়াং-এ রাষ্ট্র বিপুল সংখ্যক শিশুর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। পাশাপাশি, বন্দিশিবির তো আছেই। আর উভয় ক্ষেত্রে মাত্র একটি জনতাত্ত্বিক গোষ্ঠী অর্থাৎ উইঘুরদেরই টার্গেট করা হচ্ছে।
ওইসব শিবিরকে নির্যাতন চালানোর ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’ বলে বর্ণনা করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ ও তাতে থাকা সাবেক বন্দিরা। তারা বলেছে, ওই সব বন্দিশিবিরে আটক ব্যক্তিদের বেশির ভাগই মুসলিম উইঘুর। এ ছাড়া আছে কিছু অন্যান্য সংখ্যালঘু। তাদেরকে চীনের জাতিগত হ্যান সমাজের সঙ্গে জোর করে মিশিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। জাতিসংঘে লেখা ওই চিঠিতে রাষ্ট্রদূতরা উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, সেখানে খেয়াল-খুশিমতো আটকের বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট আছে। ব্যাপক নজরদারি করা হয়। নানারকম বিধিনিষেধ আছে। বিশেষ করে এসব প্রয়োগ করা হয় সিনজিয়াংয়ের উইঘুর ও অন্য সংখ্যালঘুদের উপরে। চিঠিতে খেয়ালখুশি মতো আটক বন্ধ করতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ওইসব রাষ্ট্রদূত। তারা উইঘুর, উইঘুর মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবাধ চলাচলের অনুমতি দেয়ার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন চীন সরকারের প্রতি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতরা এই চিঠি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত। তারা এই চিঠিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের একটি অফিসিয়াল ডকুমেন্ট হিসেবে গণ্য করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই কাউন্সিলের ৪১তম অধিবেশন শুক্রবার শেষ হচ্ছে জেনেভায়। এই পরিষদ বা কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা ৪৭। কোনো দেশের রেকর্ড নিয়ে সমালোচনা করে এই পরিষদে কূটনীতিকদের খোলা চিঠি পাঠানোর ঘটনা বিরল। এবার তাই ঘটলো। তারা সিনজিয়াংয়ের মুসলিমদের বিরুদ্ধে চালানো নির্যাতনের বিষয়ে চুপ থাকতে পারেননি। তাই খোলাচিঠি লিখেছেন জাতিসংঘের প্রতি।
এর আগেই বিবিসি পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় মুসলিম উইঘুর সংখ্যাগরিষ্ঠ শিনজিয়াং অঞ্চলে এমনটা ঘটছে। নতুন গবেষণার বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বিবিসি। খবরে বলা হয়, লাখ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমকে যখন বিশাল আকারের শিবিরে আটক করে রাখার পাশাপাশি, শিনজিয়াং প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে বহু আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করার কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। প্রকাশ্যে উপলভ্য নথি ও বিদেশে বসবাসরত কয়েক ডজন পরিবারের সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বিবিসি এ দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
রেকর্ড অনুযায়ী, কেবল একটি শহরেই ৪ শতাধিক শিশুর পিতা ও মাতা উভয়েই ওই শিবির অথবা কারাগারে বন্দি। এই শিশুদের রাষ্ট্রীয়ভাবে দেখভাল প্রয়োজন কিনা তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ণ চালানো হচ্ছে।
শিনজিয়াং-এর প্রাপ্তবয়স্কদের পরিচয় বদলে দেয়ার প্রচেষ্টা চালানোর পাশাপাশি, বিভিন্ন প্রমাণ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, শিশুদেরকে তাদের আদি সংস্কৃতি থেকে দূরে রাখার আরেকটি প্রয়াসও চালানো হচ্ছে। শিনজিয়াং-এ ভীষণ কঠোর নজরদারি চালায় চীন। বিদেশি সাংবাদিকদের সেখানে ২৪ ঘণ্টা নজরে রাখা হয়। ফলে সরাসরি সেখান থেকে কারও সাক্ষ্য গ্রহণ অসম্ভব। তবে তুরস্ক থেকে অনেকের সাক্ষ্য নেয়া সম্ভব হয়েছে। ইস্তাম্বুলে একটি বড় হলে উপস্থিত হয়ে কয়েক ডজন মানুষ সারিবদ্ধ হন নিজেদের কষ্টের কথা জানাতে। এদের অনেকের হাতেই শিশুদের ছবি, যাদেরকে শিনজিয়াং-এ নিজ বাড়িতে আর পাওয়া যাচ্ছে না।
এক সন্তানের মা বলেন, ‘আমি জানি না এখন তাদের দেখভাল করে কে।’ তার হাতে নিজের ৩ কন্যার ছবি। তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই নেই।’ আরেক মায়ের হাতে ৩ ছেলে ও ১ মেয়ের ছবি। অশ্রু মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি যে, তাদেরকে একটি এতিমখানায় নেয়া হয়েছে।’ মোট ৬০টি পৃথক সাক্ষাৎকারে পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজন শিংজিয়াং-এ প্রায় ১০০ শিশুর অন্তর্ধানের মর্মন্তুদ বর্ণনা দিয়েছেন।
এরা সকলেই উইঘুর। শিনজিয়াং-এর সর্ববৃহৎ সম্প্রদায়ের সদস্য। মুসলিম ধর্মাবলম্বী এই গোষ্ঠীর সঙ্গে তুরস্কের দীর্ঘ ভাষা, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় সম্পর্ক রয়েছে। হাজার হাজার উইঘুর তুরস্কে এসেছেন পড়াশুনা বা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য। কেউ এসেছেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে। কেউ বা এসেছেন চীনের জন্মনিয়ন্ত্রণ সীমা ও ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় নির্যাতন থেকে বাঁচতে। গত ৩ বছরে তুরস্কে অবস্থানরত উইঘুররা বেশ বিপাকে পড়ে যান। এই কয়েক বছরে চীন লাখ লাখ উইঘুরকে বন্দি করে প্রকাণ্ড শিবিরে আটকে রেখেছে। চীনা কর্মকর্তারা বলছেন, ধর্মীয় চরমপন্থা রোধে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে উইঘুরদের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রমাণ থেকে দেখা যায়, শুধু নিজেদের ধর্মীয় নিয়মকানুন অনুসরণের জন্য (যেমন, নামাজ পড়া বা হিজাব পরা) কিংবা তুরস্কের মতো বিদেশে সম্পর্ক থাকার দায়ে বহু মুসলমানকে এসব শিবিরে আটক রাখা হয়েছে। ফলে তুরস্ক বা বিদেশে অবস্থানরত উইঘুররা দেশে ফিরলে নিশ্চিত আটকের ঝুঁকিতে রয়েছেন। ফোন যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে বিদেশে অবস্থানরত স্বজনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলাও শিনজিয়াং-এর উইঘুর বাসিন্দাদের জন্য বিপজ্জনক।
এক ব্যক্তির স্ত্রী আটক রয়েছেন। তিনি জানান, তার ৮ সন্তান। কিন্তু তার আশঙ্কা, এদের অনেককেই হয়তো রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে নিয়ে নেয়া হয়েছে। তার ভাষ্য, ‘আমার মনে হয় তাদের শিশু শিক্ষা শিবিরে নেয়া হয়েছে।’
এসব শিশু কেমন আছে, কী অবস্থায় আছে, তার কিছু চিত্র বিবিসি পরিচালিত নতুন গবেষণায় ওঠে এসেছে। শিনজিয়াং-এ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমদের গণবন্দিত্ব পূর্ণ মাত্রায় ফাঁস করার কৃতিত্ব দেয়া হয় জার্মান গবেষক আদ্রিয়ান জেঞ্জকে। প্রকাশ্যে উপলভ্য নথির বরাতে তিনি একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন। সেই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শিনজিয়াং-এ নজিরবিহীন গতিতে আবাসিক স্কুল গড়া বা বিস্তৃত করার কাজ চলছে। বহু বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ বড় করা হয়েছে। নতুন ডরমেটরি নির্মাণ ও পুরাতন ডরমেটরির সঙ্কুলান বৃদ্ধি করা হয়েছে ব্যাপক হারে। শিনজিয়াং-এ রাষ্ট্র বিপুল সংখ্যক শিশুর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। পাশাপাশি, বন্দিশিবির তো আছেই। আর উভয় ক্ষেত্রে মাত্র একটি জনতাত্ত্বিক গোষ্ঠী অর্থাৎ উইঘুরদেরই টার্গেট করা হচ্ছে।