বাংলারজমিন
মা’কে পেটানো ছেলে কারাগারে
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
৯ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:০২ পূর্বাহ্ন
মা’কে মারপিটের অভিযোগে আটক ছেলে ফারুক হোসেন (৪২)কে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। ৮২ বছরের বৃদ্ধ মা হাফেজা বেওয়ার মামলার প্রেক্ষিতে গত রোববার বিকালে জেলা শহরের রৌশনাবাগ এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গত শনিবার রাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়নের গলেহা ফুলপাড়া এলাকার নির্যাতিত বৃদ্ধ হাফেজা বাদী হয়ে ছোট ছেলে ফারুক হোসেন, তার স্ত্রী ইনসানা বেগম ও নাতি হৃদয়ের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধ হাফেজাকে দেখতে যান। অশ্রুসিক্ত বৃদ্ধা নিজের ছেলে ও বউমার নির্যাতনের কথা শোনান জেলা প্রশাসককে। এ সময় জেলা প্রশাসক চিকিৎকদের কাছে বৃদ্ধার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেয়াসহ চিকিৎসার জন্য তাকে ১০ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা দেন। এছাড়া তার ছেলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এহতেশাম রেজা, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. প্রতীক কুমার বণিক উপস্থিত ছিলেন। স্বামীর ভিটাবাড়ি ছেড়ে অন্য ছেলের বাড়ি না যাওয়ায় গত শনিবার দুপুরে বৃদ্ধা মা হাফেজা বেওয়াকে তার ছোট ছেলে ফারুক হোসেন, বউমা ইনসানা (৩২) ও নাতি হৃদয় মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বিকালে বৃদ্ধার মেজো ছেলে শফিউল্লাহ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার এসআই মো. শাহিনুজ্জামান শাহিন বলেন, নির্যাতিত বৃদ্ধা হাফেজা বেওয়ার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছেলে-বউমা ও নাতিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মারপিটের একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। অভিযুক্ত ছেলে ফারুক হোসেনকে গ্রেপ্তার করার পর আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নির্যাতিত বৃদ্ধা হাফেজা বেওয়া জানান, প্রায় ১২ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। স্বামীর স্মৃতি বুকে নিয়ে তার ভিটাবাড়িতে একাই থাকতেন। একই বাড়িতে ছোট ছেলে পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও বৃদ্ধা মা প্রতিদিনের খাবার খেতেন পাশের আরেক ছেলের বাড়িতে। ৫ ছেলে ও ৫ মেয়ের জননী হাফেজা বেওয়া সকলের বিয়ে দিয়েছেন। অন্য ছেলে-মেয়েরা মাকে তাদের বাড়ি নিতে চাইলেও স্বামীর ভিটা ছেড়ে যেতে রাজি হননি। তিনি ছোট ছেলে ফারুক হোসেনের ঘর ঘেঁষে স্বামীর ভিটায় একটি কুঁড়েঘরে একাই থাকেন। খাওয়া-দাওয়া করেন মেজো ছেলে শফিউল্লাহর বাড়িতে। ছোট ছেলে ও তার স্ত্রী বৃদ্ধার কুড়ে ঘরটি দখলে নিতে দীর্ঘদিন ধরে বৃদ্ধা মা’কে মারপিটসহ নানাভাবে নির্যাতন করতো। শনিবার দুপুরে বৃদ্ধার টয়লেট যাওয়ার রাস্তায় আবর্জনা জড়ো করে রেখে দেয় ফারুকের স্ত্রী ইনসানা বেগম। বৃদ্ধা কষ্টে সেই আবর্জনা সরিয়ে দেন। এ নিয়ে বৃদ্ধার সঙ্গে রাগ করে টয়লেটে যাওয়ার সময় ক্ষুব্ধ হয়ে তার হাত থেকে পানিভর্তি বদনা নিয়ে আছড়ে ভেঙে ফেলে ফারুকের স্ত্রী ইনসানা। একপর্যায়ে ছেলে ফারুকের উপস্থিতিতে তার স্ত্রী ইনসানা বৃদ্ধার বুকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। পরে বৃদ্ধার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসে।
ছেলে শফিউল্লাহ তাকে উদ্ধার করে ওইদিন বিকালে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ছেলে শফিউল্লাহ তাকে উদ্ধার করে ওইদিন বিকালে হাসপাতালে ভর্তি করেন।