বাংলারজমিন

‘আমাকে লাশ বানিয়ে তোমাদের কাছে পাঠাবে’

বোরহানউদ্দিন (ভোলা) প্র্রতিনিধি

৯ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ৭:৫৮ পূর্বাহ্ন

ভোলার বোরহানউদ্দিনে চাঞ্চল্যকর বর্ণালী মৃত্যু নিয়ে ক্রমশ রহস্য দানা বেঁধে উঠেছে। নিহত বর্ণালী মৃত্যুর আগে তার মাকে কাকুতি-মিনতি করে বলেন, মাগো আমাকে আর জোর করে ঢাকায় পাঠিও না- আমার স্বামী প্রতিদিন আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। একা বাসায় কাঁদতে কাঁদতে চোখের জলও শুকিয়ে গেছে আমার। প্রতিদিন নির্যাতন করে বলে তুই মর। তুই মরলে আমি তোর চেয়ে সুন্দরী বিয়ে করবো। তোর বাবা-মা আমার বাবার সম্পদ দেখে তোকে আমার কাছে বিয়ে দিয়েছে। আমি অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করলে তাতে তোর কি? এভাবেই মেয়েকে প্রতিদিনের নির্যাতনের বর্ণনা সংবাদকর্মীদের সামনে দিয়েছেন নিহত বর্ণালী মজুমদার বন্যার মা শিখা রানী সেন। অপরদিকে ৫ জনকে আসামি করে অভিযোগ দিলেও শুধুমাত্র নিহতের স্বামী মিথুনকে আসামি করে মামলা নেয়া হয়।
৫ বছর পূর্বে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের বাবুল মজুমদারের মেয়ে বর্ণালী মজুমদারের সঙ্গে পৌর ৬নং ওয়ার্ডের চুনি লাল দের ছেলে মিথুন দে (রাহুলের) পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে প্রায় প্রতিনিয়ত মিথুন ও মিথুনের পরিবার নিহত বর্ণালীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। নির্যাতন করে কয়েকবার বাসা থেকেও বের করে দেয়। পরে বর্ণালী ঢাকায় স্বামীর বাসা থেকে চলে আসে বোরহানউদ্দিনে। বর্ণালী স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে বোরহানউদ্দিনে এলে বর্ণালীর স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি বর্ণালীর মা-বাবাকে অনুরোধ করে বর্ণালীকে অনেকটা জোর করেই ঢাকায় বনশ্রীতে স্বামীর বাসায় পাঠায়। পাঠানোর সময় বর্ণালী তার মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আর ঢাকা যাবো না। আমার স্বামী ও শ্বশুর শাশুড়ি আমাকে লাশ বানিয়ে তোমাদের কাছে পাঠাবে। শেষ পর্যন্ত বর্ণালীর কথাই সত্যি প্রমাণিত হলো। লাশ হয়েই বাপের ভিটায় ফিরলেন বর্ণালী মজুমদার বন্যা! গত ২রা জুলাই রাতে বনশ্রী এ ব্লকের ২ নম্বর সংলগ্ন একটি বাসা থেকে রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় বর্ণালীর স্বামী মিথুন তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে বর্ণালীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বামী মিথুন বর্ণালীর লাশ হাসপাতালে রেখে রহস্যময়ভাবে আগেই রমপুরা থানায় গিয়ে আটকের নাটক করে বলে অভিযোগ করেন বর্ণালীর পরিবার। অভিযোগ রয়েছে, স্বামী মিথুনের খালাতো ভাই এসআই দিপক দে ঢাকা কমিশনার অফিসে কর্মরত থাকায় সে নিজেই মিথুনকে রামপুরা থানায় নিয়ে যায়। পরে মৃত বর্ণালীর পরিবার রামপুরা থানায় গেলে দেখেন এসআই দিপক থানায় যাতে মামলা দিতে না পারে তার জন্য তদবির চালাচ্ছেন। বর্তমানে মৃত বর্ণালীর দেড় বছরের কন্যা সন্তান ও কাজের মেয়ে এসআই দিপকের বাসায় আছে বলে মানবজমিনকে জানায়। এ ব্যাপারে এসআই দিপককে বর্ণালীর মেয়ে ও কাজের মেয়ে তার বাসায় কেন ফোনে জিজ্ঞেস করলে বলেন, তারা কোথায় থাকবে? আপনার কোনো কিছু জানার থাকলে আমার কাছে আসেন। নিহত বর্ণালীর পরিবার আরো জানান, তারা রামপুরা থানার অভিযোগে বর্ণালীর স্বামী মিথুন দে (রাহুল), শাশুড়ি দীপ্তি রানী দে, শ্বশুর চুনি লাল দে, প্রিতম দে ও কাজের মেয়েসহ মামলা করতে গেলে ওসি বলেন, শুধু মিথুনকে আসামি করে এজাহার দায়ের করলে আমি গ্রহণ করবো। বাকিদের নাম দিলে আমি এজাহার নেবো না।
এ ব্যাপারে ওসি আ. কুদ্দুস ফকিরের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমরা কি কারণে বর্ণালীর মৃত্যু হয়েছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর প্রকৃত ঘটনা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেবো। বর্তমানে বর্ণালী কি কারণে মারা গেছেন তার সঠিক তদন্ত রামপুরা থানায় হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে অছেন বর্ণালীর মা-বাবা। তারা মামলার সঠিক তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status