ফেসবুক ডায়েরি
‘পুরুষ হিসেবে গা গুলিয়ে আসছে’
রাজু নুরুল
৭ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ৩:০৯ পূর্বাহ্ন
আমি খুব মর্মাহত হৃদয়ে এই কথাটা লিখছি যে, গত ছয় মাসে ৬৩০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। একজন পুরুষ হিসাবে এ কথাটা লিখতে আমার গা গুলিয়ে আসছে, আমার শরীর রীতিমত কাঁপছে এবং আমি চূড়ান্ত অপমাণিত বোধ করছি। কিন্তু লেখা ছাড়া বলার মতো আমার আর কোন ভাষা নাই।
এই ৬৩০ জনের মধ্যে আছে ৭ মাস বয়সী থেকে ৭ বছরের শিশু। আছে শিক্ষক, কর্মজীবি নারী, আছে শিক্ষার্থী! যাদের শরীরে কোন উত্তেজক অঙ্গ এখনো স্পস্ট হয় নাই, তারাও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণ করে অনেককে মেরে ফেলা হয়েছে, অনেকের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।
কোথায় ধর্ষিত হয়েছে এরা?
এরা রাস্তাঘাটে, বাসে, নিজের বাসায়, স্কুলে, মাদ্রাসায়, তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, প্রতিবেশীর ঘরে, কর্মক্ষেত্রে, শ্রেণীকক্ষে এরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। একজন শিশু খেলতে গিয়ে প্রতিবেশীর হাতে দিনের পর দিন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের তথ্য লুকাতে গিয়ে, তাকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। দিনের পর দিন মাদ্রাসার শিক্ষক তার ছাত্রীদেরকে ধর্ষণ করে যাচ্ছে। তারপর তথ্য যাতে ফাঁস না হয়, কোরআন শরীফে হাত রেখে শপথ পাঠ করানো হয়েছে।
এসবতো কিছু ঘটনা, যেগুলো কোন না কোনভাবে প্রকাশ হয়েছে। এই দেশে যে ধর্ষণ করে, তার চেয়ে বড় অপরাধী হলো, যে ধর্ষণের শিকার হয়! কেননা, ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর এরপর যা শুরু হয়, সেটা হলো, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, আদালত, সমাজ কর্তৃক ধর্ষণ! এই ধর্ষণ অনন্তকাল ধরে চলতে থাকে। যতক্ষণ না মেয়েটার বিনাশ না হয়, যতক্ষণ সে আত্মহত্যা না করে, আর যদি খুব সাহসী হয়, তাহলে যতক্ষণ সে টোটাল সোসাইটি থেকে বিচ্ছিন্ন না হচ্ছে?
তাহলে তথ্য প্রকাশ হয়নি, অথচ ধর্ষণের শিকার হওয়ার সংখ্যা ঠিক কত?
আমাদের কী কিছুই করার নাই? আমাদের দেশে আইন আছে, আদালত আছে। নারী নির্যাতন বিষয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আছে। সেসব জায়গায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির কেন আমরা দেখতে পাচ্ছি না? কেন আমরা এটা দেখছি না যে, ৭ বছরের শিশু ধর্ষিত হলে, অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামী গ্রেপ্তার হচ্ছে, তার বিচার হচ্ছে, তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
এই দেশে, এই সময়ে এসে ধর্ষণ এক মহামারীর চেয়েও ভয়ানক ব্যাধি! ডেঙ্গু হলে মশারি টানাবেন কিন্তু ধর্ষককে ঠেকাবেন কি দিয়ে? একজন বাবা মা কোন্ ভরসায় তার সন্তানকে স্কুলে পাঠাবে, কোন ভরসায়, কার কাছে রেখে কাজে বেরুবে? এটা এক ভয়ানক সামাজিক অবক্ষয়। এই অবক্ষয়ের ত্রাণ কোথায়? কে ঠেকাবে এদেরকে? কারো কি কোন দায় নাই?
সরকারের বাইরে সাধারণ মানুষ চুপ কেনো? আইন আদালত কাজ না করলে সামাজিক প্রতিরোধই মুক্তির সবচেয়ে বড় উপায়! অথচ প্রতিরোধ দেখছি না।
৭ মাসের শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরেও যদি আমাদের বিবেক জাগ্রত না হয়, প্রতিবাদ করতে গলা শুকিয়ে যায়, তাহলে আর কীসে আমাদের বিবেক জাগ্রত হবে? কবে? এখনো কি আমরা নারীর পোশাককে দায় দিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবো?
লেখক: ডিরেক্টর- প্রোগ্রাম, পলিসি এন্ড এডভোকেসি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ
এই ৬৩০ জনের মধ্যে আছে ৭ মাস বয়সী থেকে ৭ বছরের শিশু। আছে শিক্ষক, কর্মজীবি নারী, আছে শিক্ষার্থী! যাদের শরীরে কোন উত্তেজক অঙ্গ এখনো স্পস্ট হয় নাই, তারাও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণ করে অনেককে মেরে ফেলা হয়েছে, অনেকের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।
কোথায় ধর্ষিত হয়েছে এরা?
এরা রাস্তাঘাটে, বাসে, নিজের বাসায়, স্কুলে, মাদ্রাসায়, তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, প্রতিবেশীর ঘরে, কর্মক্ষেত্রে, শ্রেণীকক্ষে এরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। একজন শিশু খেলতে গিয়ে প্রতিবেশীর হাতে দিনের পর দিন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের তথ্য লুকাতে গিয়ে, তাকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। দিনের পর দিন মাদ্রাসার শিক্ষক তার ছাত্রীদেরকে ধর্ষণ করে যাচ্ছে। তারপর তথ্য যাতে ফাঁস না হয়, কোরআন শরীফে হাত রেখে শপথ পাঠ করানো হয়েছে।
এসবতো কিছু ঘটনা, যেগুলো কোন না কোনভাবে প্রকাশ হয়েছে। এই দেশে যে ধর্ষণ করে, তার চেয়ে বড় অপরাধী হলো, যে ধর্ষণের শিকার হয়! কেননা, ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর এরপর যা শুরু হয়, সেটা হলো, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, আদালত, সমাজ কর্তৃক ধর্ষণ! এই ধর্ষণ অনন্তকাল ধরে চলতে থাকে। যতক্ষণ না মেয়েটার বিনাশ না হয়, যতক্ষণ সে আত্মহত্যা না করে, আর যদি খুব সাহসী হয়, তাহলে যতক্ষণ সে টোটাল সোসাইটি থেকে বিচ্ছিন্ন না হচ্ছে?
তাহলে তথ্য প্রকাশ হয়নি, অথচ ধর্ষণের শিকার হওয়ার সংখ্যা ঠিক কত?
আমাদের কী কিছুই করার নাই? আমাদের দেশে আইন আছে, আদালত আছে। নারী নির্যাতন বিষয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আছে। সেসব জায়গায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির কেন আমরা দেখতে পাচ্ছি না? কেন আমরা এটা দেখছি না যে, ৭ বছরের শিশু ধর্ষিত হলে, অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামী গ্রেপ্তার হচ্ছে, তার বিচার হচ্ছে, তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
এই দেশে, এই সময়ে এসে ধর্ষণ এক মহামারীর চেয়েও ভয়ানক ব্যাধি! ডেঙ্গু হলে মশারি টানাবেন কিন্তু ধর্ষককে ঠেকাবেন কি দিয়ে? একজন বাবা মা কোন্ ভরসায় তার সন্তানকে স্কুলে পাঠাবে, কোন ভরসায়, কার কাছে রেখে কাজে বেরুবে? এটা এক ভয়ানক সামাজিক অবক্ষয়। এই অবক্ষয়ের ত্রাণ কোথায়? কে ঠেকাবে এদেরকে? কারো কি কোন দায় নাই?
সরকারের বাইরে সাধারণ মানুষ চুপ কেনো? আইন আদালত কাজ না করলে সামাজিক প্রতিরোধই মুক্তির সবচেয়ে বড় উপায়! অথচ প্রতিরোধ দেখছি না।
৭ মাসের শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরেও যদি আমাদের বিবেক জাগ্রত না হয়, প্রতিবাদ করতে গলা শুকিয়ে যায়, তাহলে আর কীসে আমাদের বিবেক জাগ্রত হবে? কবে? এখনো কি আমরা নারীর পোশাককে দায় দিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবো?
লেখক: ডিরেক্টর- প্রোগ্রাম, পলিসি এন্ড এডভোকেসি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ