ইংল্যান্ড থেকে

শতবছরের ক্রিকেট আত্মা যেন ‘লর্ডস’

ইশতিয়াক পারভেজ, লর্ডস (লন্ডন) থেকে

৬ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৮:৪৯ পূর্বাহ্ন

লন্ডন শহর থেকে অনেকটা ভেতরে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডস। ক্রিকেট জানেন-বুঝেন যারা, তারা একবার হলেও এই স্টেডিয়ামে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। দেখবেনই না কেন! এখানে ক্রিকেট যে গড়ে তোলা হয়েছে সযতনে, সন্তানের মায়ায়। এখানে ক্রিকেটের রয়েছে পরতে পরতে মায়া আর ঐতিহ্যের বন্ধন। বাংলাদেশে গতকাল এ মাঠে প্রথমবার ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামে। এর আগে অবশ্য টেস্ট খেলেছিল। তাই এখানে সংরক্ষিত আছে বাংলাদেশের নাম। প্রবেশ পথে সম্মানের সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীরা জানিয়ে দিলেন বেশ কয়েকটি নিয়ম-কানুন। ক্রিকেটার ছাড়া অন্য কেউ ঘাস মাড়াতে পারবেন না। মাঠের পাশ দিয়েও যাওয়া যাবে না। ফলে মাঠের এক প্রান্তে থাকা প্রেসবক্স থেকে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে যেতে হলো গোটা স্টেডিয়াম ঘুরে। সেখান থেকে বের হয়ে খুঁজতে শুরু করলাম জাদুঘর। খুঁজে পেয়ে যেন তর সইছিল না। কারণ এখানেই শতবছরের পুরো ভবনে রাখা আছে ক্রিকেটের ইতিহাস। যেখানে আছে বাংলাদেশও। এক কোণে চোখ পড়তেই দেখতে পেলাম বাংলাদেশের ১৯৯৯ বিশ্বকাপ জার্সি। আছে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ব্যাট, হেলমেটও। ক্রিকেটের প্রথম ব্যাট-প্যাড থেকে শুরু করে বর্তমানের সবকিছুই। এই লর্ডসকে শত বছরের ক্রিকেটের আত্মা বললেও ভুল হবে না! ইংল্যান্ডেই ক্রিকেটের জন্ম। সেখানে লর্ডস তার ধারক। ১৭৮৭ থেকে ১৮১৪ পর্যন্ত তৈরি হওয়া বিখ্যাত তিনটি স্টেডিয়ামের মধ্যে এটি তৃতীয়। ১৮১৪ সালে লন্ডনের সেন্ট জন’স উডসে এটি তৈরি করা হয়। এই স্টেডিয়ামটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান ‘মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব’। মেরিলেবোন বা এমসিসির মালিক টমাস লর্ড স্টেডিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার নামের কারণেই নামকরণ করা হয় ‘লর্ডস’। ১৮১৪ সালে স্টেডিয়ামের ইতিহাসের প্রথম ম্যাচটি হয় মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব ও হার্টফোর্ডশায়ারের মাঝে। ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ ও ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের গর্বিত আয়োজক এই মাঠ। এর মধ্যে ২০১৪ লর্ডস পা রেখেছে ২০০ বছরে। যার প্রতিটি স্মৃতি জাদুঘরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সযতনে।
ওসব নিয়ে পরে কথা বলা যাবে। সেই জাদুঘরে আমার চোখ খুঁজছিল বাংলাদেশকেই। একতলায় হতাশ হয়ে ছুটলাম দ্বিতীয় তলায়। সেখানেই এক কোণে কাচে সংরক্ষিত ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের একটি জার্সি। পাশেই রাখা আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অটোগ্রাফ সংবলিত একটি ব্যাট ও হেলমেট। ২০০০ সালের ১১ই নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে আমিনুলের বিশ্বরেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি এসেছিল এই ব্যাটেই, মাথায় ছিল এই হেলমেট। শচীন টেন্ডুলকারের ১০ নম্বর জার্সির ঠিক পাশেই আছে ওটা। ২০১৮ সালের ২রা মার্চ বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের ডকইয়ার্ডে ব্যাট-বল দিয়ে ক্রিকেট খেলেছিল চার কিশোর শ্রমিক। শৌখিন ফটোগ্রাফার সৈয়দ মাহবুবুল কাদেরের তোলা সেই ছবিও এখানে আছে।
বাংলাদেশ যেহেতু আছে তাহলে বলতে পারেন লর্ডসের জাদুঘরে কি নেই! অ্যাশেজের সেই ট্রফির কথা তো বলাই হয়নি! আকারে ছোট হলেও ক্রিকেটে যার মূল্য টাকা দিয়ে হিসাব করা যাবে না। যা এই জাদুঘরে যেন ক্রিকেটেরই জয়গান গাইছে। বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা সংবাদকর্মী হিসেবে এই জাদুঘরে বিনামূল্যে প্রবেশ করা গেলেও অন্য সময়ে টিকিট লাগবে। অন্যদিকে লর্ডসকে বাইরে থেকে দেখে বেশ আধুনিক মনে হবে। কারণ এর প্রেসবক্সটি বানানো হয়েছে বর্তমানে স্পেসশিপের আদলে। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করলে চমকে উঠতে হবে। ২শ বছরের পুরনো ভবনগুলো এখানে দাঁড়িয়ে। তবে লাল ইটের দালানগুলো এমনভাবে চকচক করছে যেন মনে হবে কিছুদিন হলো বানানো হয়েছে। আছে অভিজাত সব নিয়ম-কানুন। শুধু এ স্টেডিয়ামের দেখভালের জন্য আছে শ’খানেক দক্ষ কর্মী ও আধুনিক যন্ত্রপাতি। যান্ত্রিক গাড়ি দিয়েই গোটা স্টেডিয়াম চত্বর পরিষ্কার রাখা হয়।
এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হচ্ছে বেলকনিটা! যেখানে দাঁড়িয়ে যেকোনো দেশের অধিনায়ক ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পারলে নিজেকে গর্বিত মনে করেন। ক্রিকেটাররা সেই বেলকনিতে বসতে পারলে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের অংশ মনে করেন। বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটার সাইফুদ্দিন সেখানে বসেই ছবি দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। জানিয়েছেন স্বপ্ন পূরণের কথা। হ্যাঁ, ক্রিকেটের তরুণ প্রজন্মের জন্য লর্ডস স্বপ্নই। তবে এতকিছুর পর থাকলো চাপা দীর্ঘশ্বাস। কই আমাদের ক্রিকেট ইতিহাস দেখতে পাবো কোথায়! সেই সঙ্গে থেকে গেল লডর্সের ঘাসে পা রাখা না পারার কষ্টও।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status