শেষের পাতা

কোলের শিশুকে নদীতে ফেলে দিলো সৎমা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

৬ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৮:৩৯ পূর্বাহ্ন

বিকাল ৩টা। সুরমা নদীর ওপর কুমারগাঁও ব্রিজ। কালো বোরকা পরা মাঝ বয়সী এক মহিলা। কোলে ৫ বছরের এক কন্যা শিশু। হঠাৎ করে মহিলা কোলে থাকা শিশুটিকে মারধর করে। এতে নজর কাড়ে সবার। ব্রিজের ওপর এবং এর আশেপাশে লোকজনের। তাদের সামনেই কোলের শিশুটিকে নদীতে ফেলে দেয় মহিলাটি । হায় হায় করে উঠেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। একি করলেন- প্রশ্ন ছুড়েন মহিলার দিকে। উপস্থিত থাকা লোকজনের কেউ কেউ দৌড়ে গিয়ে নদীতে নামেন। ঢল ছিল নদীতে। উজানের ঢলের তোড়ে হারিয়ে যায় শিশুটি। স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজি করেও শিশুটিকে পাননি। খবর দেয়া হয় ডুবুরিকে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা গিয়ে শিশুটির খোঁজে তল্লাশি চালায়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তল্লাশি করা হয়। কিন্তু শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সিলেটের কুমারগাঁওয়ে। ঘটনার পর স্থানীয় জনতা আটক করে ওই মহিলাকে পুলিশে দিয়েছে। এমন ঘটনায় হতবাক কুমারগাঁওবাসী। মা তার কোলের শিশুকে এভাবে নদীতে ছুড়ে ফেলার ঘটনাও বিরল। ফলে, শেষ বিকালে সিলেটে খবরটি নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। আটক মহিলার নাম সালমা বেগম। বয়স প্রায় ৩০ বছর।

তার বাড়ি সিলেটের জালালাবাদ থানার ফতেহপুর গ্রামে। স্বামী স্থানীয় কৃষক জিয়াউল হক। সুরমা নদীতে সলিল সমাধি হওয়া শিশুটির নাম মাহা বেগম। বয়স ৫ বছর। সালমা বেগমের সৎ-সন্তান সে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে- বিকাল ৩টার দিকে বোরকা পরিহিত সালমা বেগম কোলে শিশুটিকে নিয়ে ব্রিজের ওপর আসেন। তিনি ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে হেঁটে আসেন। এ সময় কোলে থাকা শিশুটি কান্না করছিল। হঠাৎ সালমা বেগম তার কোলে থাকা শিশুটিকে নিচে ফেলে দেন। ব্রিজ থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার সময় শিশুটি চিৎকার করছিল। এ দৃশ্য দেখে তারা তাৎক্ষণিক সালমাকে আটক করে। এবং শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। কিন্তু ডুবে যাওয়া স্থলে শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশ এসে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলকে খবর দেয়। ডুবুরিরা এসে তিন ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েও শিশুটিকে পায়নি। প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহিম জানিয়েছেন- শিশুটিকে নদীতে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা ওই মহিলাকে আটক করে। এরপর পুলিশ এসে তাকে আটক করে জালালাবাদ থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে ফতেহপুর গ্রামের লোকজনও সেখানে আসে। তারা জানিয়েছে- ফতেহপুর গ্রামের জিয়াউল হক এক দরিদ্র কৃষক। অভাব-অনটনের সংসার তার। জিয়াউল হক আগে এক বিয়ে করেছিল। ওই স্ত্রীর ঔরসজাত দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। আর সালমা বেগমের গর্ভে দুই বছরের আরো একটি মেয়ে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে জিয়াউল হক পুত্র সন্তান চাইছিলেন।

কিন্তু তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ দেখা দিলে তিন বছর আগে তাদের ডিভোর্স হয়। দুই কন্যা সন্তানকে স্বামীর ঘরে রেখে চলে যান প্রথম স্ত্রী। এরপর জিয়াউল হক বিয়ে করেন সালমাকে। সালমার ঘরেও আরো একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। অভাব-অনটনের সংসার হওয়ার কারণে বিভিন্ন সময় জিয়াউল ও সালমার মধ্যে বিরোধ বাঁধে। এই বিরোধের জের ধরে জিয়াউল হক প্রায় সময় দ্বিতীয় স্ত্রী সালমাকে মারধর করে। গতকাল দুপুরেও জিয়াউল ও সালমার মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এ সময় জিয়াউল স্ত্রী সালমাকে মারধরও করে। এক পর্যায়ে সৎ মেয়ে মাহাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সালমা। আর ব্রিজের ওপর এসে মাহাকে নদীতে ফেলে দেয়।

এরপরই স্থানীয়রা তাকে আটক করে। সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি ওকিল উদ্দিন আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সালমাকে তারা আটক করে রেখেছেন। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত সালমার স্বামী কিংবা পিতার বাড়ির কেউ আসেনি। প্রাথমিক ভাবে সালমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সে জানিয়েছে- স্বামীর ওপর রাগ করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় মামলার পর জিজ্ঞাসাবাদে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান ওসি। এদিকে- জালালাবাদ থানার এসআই সাইফুর রহমান জানিয়েছেন- ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা এসে সুরমা নদীতে প্রায় তিন ঘণ্টা তল্লাশি চালান। এ সময় স্থানীয়রাও নৌকা নিয়ে তল্লাশি করেন। কিন্তু কোথাও শিশু মাহাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ছুড়ে ফেলে দেয়ার পর মাহা নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে আশপাশের এলাকা, থানা পুলিশকে ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে। শিশুটিকে পাওয়া গেলে জালালাবাদ থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status