এক্সক্লুসিভ

উইঘুরের মুসলিম শিশুদের যেভাবে আলাদা করা হচ্ছে পরিবার থেকে

মানবজমিন ডেস্ক

৬ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৮:১৩ পূর্বাহ্ন

এবার চীনের বিরুদ্ধে মুসলিম শিশুদের পরিবারের কাছ থেকে আলাদা করে মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির দীর্ঘ গবেষণা ও অনুসন্ধানের পর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উইঘুর শিশুদের জন্য আধুনিক আবাসিক স্কুল তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে তাদেরকে পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আধুনিক শিক্ষা তথা চীনের মূলধারার শিক্ষা প্রদান করা হবে। বিবিসি দাবি করেছে, শুধুমাত্র একটি শহরেই এমন ৪শ’ শিশু রয়েছে যাদেরকে এসব স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। শুধু তাদের নয় কিছু ক্ষেত্রে তাদের পিতামাতাকেও উইঘুর পুনঃশিক্ষণকেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে শুধুমাত্র সন্দেহভাজন প্রাপ্তবয়স্কদের পুনঃশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রেরণের অভিযোগ ছিল চীনের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বয়স্কদের পাশাপাশি উইঘুরদের নতুন প্রজন্মকেও চীনের মূলধারার সংস্কৃতিতে অভ্যস্থ করে তুলতে চাইছে চীন। সমালোচকরা বলছেন, এর মাধ্যমে উইঘুর শিশুরা তাদের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলবে ও নিজের শেকড় থেকে দূরে সরে যাবে।

চীন কঠিন নজরদারির মাধ্যমে শিনজিয়াং প্রদেশটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সেখানে বিদেশি সাংবাদিকদের ২৪ ঘণ্টা নজরে রাখা হয়। তাই সেখান থেকে কারো সঙ্গে কথা বলে সত্য উদঘাটন করা সম্ভব নয়। তবে তুরস্কে গেলে অনেককেই পাওয়া যায় যারা এ বিষয়ে গল্প বলতে পারবেন। সেখানে এক মা তার তিন সন্তানের কথা বলছিলেন। একটি ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, আমি জানি না ওই স্কুলগুলোতে কে তার সন্তানদের দেখাশোনা করছে। এরকম ৬০টি আলাদা সাক্ষাৎকারে উইঘুর বাবা-মা তাদের সন্তানদের এসব স্কুলে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তাদের কেউ কেউ কান্নায় ভেঙেও পরেন। তারা সবাই উইঘুর। চীনের মুসলিমদের একটি বড় অংশ উইঘুর সমপ্রদায়ের। তবে তাদের সঙ্গে তুরস্কের যোগাযোগ রয়েছে। হাজার হাজার উইঘুর এখানে পড়াশোনা ও ব্যবসা করতে আসেন। তবে আরেকটি বড় কারণ চীনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ আইন। অধিক সন্তান জন্ম দিতেও অনেকে তুরস্ক চলে আসেন।

চীনে প্রায় দেড় কোটি উইঘুর মুসলমানের বাস। তাদের প্রতি চীনের আচরণ নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে রয়েছে বেইজিং। গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সেখানকার পরিস্থিতি ‘উদ্বেগজনক’ আখ্যা দিয়ে ওই অঞ্চল সফরের প্রচেষ্টার কথা জানিয়েছিল। যুক্তরাজ্য সরকারও এনিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে চীনকে তাদের মনোভাব পরিবর্তনের তাগিদ দিয়েছে।

শিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ উইঘুর মুসলিম। এই প্রদেশটি তিব্বতের মতো স্বশাসিত একটি অঞ্চল। বিদেশি মিডিয়ার ওপর এখানে প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সূত্রে খবর আসছে যে, সেখানে বসবাসরত উইঘুরসহ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ব্যাপকহারে আটকের শিকার হচ্ছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোও জাতিসংঘের কাছে এ ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছে। উইঘুর মুসলিমদের গণহারে আটকের অভিযোগ এনেছে তারা। তবে চীন বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

সামপ্রতিক বছরগুলোতে শিনজিয়াং প্রদেশে চীনা সরকার উইঘুর মুসলিমদের বেশ কয়েকটি ক্যাম্পে আটক রেখেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দাবি, সেখানে প্রায় ২০ লাখ মানুষ সেখানে বন্দি রয়েছে। উইঘুর ছাড়াও কাজাখ, কিরগিজ সমপ্রদায়ের মানুষও সেখানে বন্দি। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মানবধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, এই ক্যাম্পগুলো আটকশিবির ছাড়া কিছুই নয়। তবে চীন এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে, এগুলো উন্মুক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।  জার্মান গবেষক অ্যাড্রিয়ান জেনজ বলেন, শিনজিয়াংয়ে স্কুল সমপ্রসারণের ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। নতুন ডরমিটরি তৈরি হচ্ছে এবং সেখানে ধারণক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু শিশুদের কিন্টারগার্টেনের ভর্তির হার ৯০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৭ সালেই এই সংখ্যা ছিল ৫ লাখেরও বেশি। শুধুমাত্র শিনজিয়াং প্রদেশেই শিশু শিক্ষার মান উন্নয়নে ১২০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে চীন। জেনজ বলেন, গত বছর এপ্রিলে প্রায় দুই হাজার শিশুকে আবাসিক স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সরকারের দাবি, শিশুরা যেন সামাজিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখে সেজন্য তাদেরকে মূলধারায় শিক্ষিত করে তোলা হচ্ছে। তবে জেনজ মনে করেন এর উদ্দেশ্য আরো গভীর। তিনি বলেন, এসব স্কুলের মাধ্যমে শিশুদের চিন্তাধারা পাল্টে দেয়া সম্ভব।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status