ইংল্যান্ড থেকে

সাইফুদ্দিন ভেবেছিলেন ‘শেষ হয়নি ম্যাচ!’

স্পোর্টস রিপোর্টার, বার্মিংহাম থেকে

৪ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:২৬ পূর্বাহ্ন

১৪ বলে প্রয়োজন ২৮ রান। হাতে তখনো দুই উইকেট বাকি। এরই মধ্যে সাইফুদ্দিন তুলে নিয়েছেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটি। হঠাৎ করেই যেন ভারতের দর্শকরা বাঁক হারা হয়ে পড়েন। গোটা এজবাস্টন স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে নেমে আসে নীরবতা। কিন্তু বুমরাহ শেষ দুই বলে আউট করে দেন রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমানকে। তাতেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন। ভারতের ক্রিকেটাররা তখন দারুণ উল্লাস করছিলেন। যেন বাংলাদেশ নয় হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকেই। কিন্তু অপর প্রান্তে থাকা সাইফুদ্দিন ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন, বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। মনে হচ্ছে তিনি ভুলে গেছেন আর কেউ নেই তাকে সঙ্গ দেয়ার। বার বার মাথায় হাত বুলাচ্ছিলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর যখন হুশ হলো তখন হাঁটতে শুরু করলেন সাজঘরের দিকে মাথা নিচু করে। ম্যাচ শেষে প্রশ্নটা ছুড়ে দেয়া হলো তার দিকে। কেন এইভাবে দাঁড়িয়েছিলেন! সাইফুদ্দিন বলেন, ‘মনের ভেতরে অনেক ইচ্ছা ছিল যে ম্যাচটা জিতাবো। যখন দুই বলে দু’জন আউট হয়ে গেল তখন মনে হয়েছিল মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ছে। মনে হচ্ছিল ম্যাচটি  শেষ হয়নি। মাথায় কোনো কিছুই কাজ করছিল না। তাই দাঁড়িয়ে ছিলাম বুঝতে পারছিলাম না কি করবো!’ দলীয় ১৭৯ রানে বাংলাদেশ হারায় ষষ্ঠ উইকেট। ৩১৫ রান তাড়া করতে নেমে ভারতের বিপক্ষে তাই দলের সামনে বড় হারের শঙ্কা। কিন্তু সেখান থেকে তরুণ সাইফুদ্দিন দেখালেন ফের স্বপ্ন। তার ঝড়ো ফিফটিতেই শেষ পর্যন্ত হারলেও হয়েছে মুখ রক্ষা। হঠাৎ করেই এমন জ্বলে ওঠার কারণ কি? তার ব্যাটিংয়ের আগ্রাসন বলছিল এর পেছনে লুকানো আছে কোনো গল্প। অবশ্য তিনি নিজ মুখেই জানালেন নেপথ্যের কারণ। সাইফুদ্দিন বলেন, ‘কিছুদিন আগে একটা বাজে নিউজ হয়েছিল, আমি বড় দলের বিপক্ষে ভয়ে ইনজুরির অজুহাত  দেখিয়ে সরে  গেছি। এটা আমার মধ্যে কাজ করেছে। চেয়েছিলাম বড় দলের বিপক্ষে ম্যাচ জিতিয়ে হিরো হবো। শুধু তাই নয়, যখন ভারতের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলাম, প্রথম বল  থেকে শেষ বল পর্যন্ত আমার ইচ্ছা ছিল ম্যাচ জেতাব। আমার নামে যে গুজব রটেছিল তা যেন ভুল প্রমাণ করতে পারি।’ তার ভিতরে এতটাই জেদ জমা ছিল যে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটি তুলে নিলেন স্ট্রেইট ড্রাইভে চার মেরে। নিজেই জানালেন এমন আক্রমনাত্মক শটের কারণ সেই কষ্ট। যার জবাব দেয়ার মঞ্চ ছিল খেলার মাঠ। সেই সুযোগ হাতছাড়া করেননি তিনি। সাইফুদ্দিন বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের কিছু করার থাকে না, জবাব দিতে হবে মাঠেই। মাঠের বাইরে জবাব দেয়ার কোনো মাধ্যম নেই। আমরা খেলোয়াড়রা চেষ্টা করি মাঠে নিজেদের জবাবটা দেয়ার।’
মঙ্গলবার ৩৮ বলে ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে জয়ের কাছাকাছি  নিয়ে গিয়েছিলেন দলকে। তবে শুধু জেদ থেকেই এমন ব্যাটিং, তাও নয়। আগেও সাইফুদ্দিন দেশের হয়ে এমন দারুণ ব্যাটিং করেছেন। তাই ফিরে গেলেন সেই অতীত অভিজ্ঞতায়। তিনি বলেন, ‘হয়তো আন্তর্জাতিক ম্যাচ জেতাইনি, তবে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সিরিজে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে একটা ম্যাচ জিতিয়েছিলাম। আমি বারবার ওই দিনের কথা স্মরণ করছিলাম, চিন্তা ছিল আজ সেরাটা দিবো। দুর্ভাগ্য হয়নি।’ ২০১৫তে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪০ বলে ৩৪ রানের অপরাজিত ইনিংসে অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে রুদ্ধশ্বাস এক জয় এনে দিয়েছিলেন সাইফুদ্দিন। ২ বল আগে পাওয়া এক উইকেটের সে জয়ের স্মৃতিটাই এজবাস্টনে ফিরে এসেছিল তার চোখের সামনে। তবে এবার পারেননি। অন্যদিকে বল হাতে নিয়েছেন এখন পর্যন্ত ১০ উইকেট। সব মিলিয়ে ব্যাটে-বলে দারুণ ছিল তার পারফরম্যান্স। বড় মঞ্চে এই পাওয়াতে কতটা সন্তষ্ট এই তরুণ? তবে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন নিজের নয় ভাবনা ছিল শুধু বাংলাদেশ নিয়ে। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে আমি কখনোই ভাবি না। যদি উইকেট না পেতাম, রানও না করতাম, তবুও যদি দল সেমিফাইনাল খেলতো, ভালো লাগতো। দল যদি সেমিফাইনালে যেত তাহলে হয়তো এসব স্মরণীয় করে রাখতে পারতাম।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status