তারকা সাক্ষাতকার

লোকসানের ভয়ে বাংলাদেশকে ডাকে না অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড

ইশতিয়াক পারভেজ,বার্মিংহাম থেকে

৩ জুলাই ২০১৯, বুধবার, ৮:৪৭ পূর্বাহ্ন

১৯৯৭-এ ভারতের একটি স্কুলে পড়ার সময় বাংলদেশে এসেছিলেন জিমি অল্টার। বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে এসে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেও। বেশকিছু কেনা-কাটাও করেছিলেন। যা এখনো আছে তার সংগ্রহে। সেই সময় থেকেই তার মনে গেঁথে আছে ‘বাংলাদেশ’। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ এখন  পেশায় সংবাদিক। ইসপিএনক্রিকইনফো, ক্রিকবাজ ছেড়ে তিনি এখন ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে কর্মরত রয়েছে দিল্লির ‘জি ডিজিটাল’ নিউজে। শুধু পেশাগত কারণেই নয়, ছোট্টবেলার সেই প্রথম  বেড়াতে যাওয়ার মধুর স্মৃতির কারণে টাইগারদের ক্রিকেটকে অনুসরণ করেন আলাদাভাবে। রাখেন বেশ খোঁজ খবরও । বিশেষ করে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের সবগুলো ম্যাচই দেখেছেন প্রেসবক্সে থেকে। দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে তা নিয়ে তুলে ধরেছেন নিজের বিশ্লেষণ। সেই সঙ্গে কথা বলেছেন টাইগারদের ক্রিকেটের উন্নতিতে নানা বাধা নিয়েও। তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: একজন সংবাদকর্মীর দৃষ্টিতে কেমন দেখলেন বাংলাদেশকে!  
জিমি: দারুণ! সত্যি কথা বলতে কি বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটে বড় ধরনের পরিবর্তনটা চোখে পড়ছে ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে। এরপর আগে যা ছিল তা বিচ্ছিন্নভাবে। সেই থেকে ধারাবাহিকভাবে তারা এগিয়েছে। যার প্রতিফলন এই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে দারুণভাবে পড়েছে। এখন পর্যন্ত তারা যে তিনটি ম্যাচ জিতেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেখানে তাদের বড় উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। বলবো জয়গুলো এসেছে প্রভাব বিস্তার করেই। আরো ভালো অবস্থানে থাকতে পারতো যদি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে যেতো আর শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে না যেতো।
প্রশ্ন: শেষ পর্যন্ত কি ওই দুই ম্যাচ নিয়ে আক্ষেপ করতে হবে টাইগারদের?
জিমি: সেমিফাইনালে যেতে না পারলেতো অবশ্যই দু’টি ম্যাচ নিয়ে আক্ষেপ করতে হবে মাশরাফিকে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে পারতো। কিন্তু নিজেদের ভুলেই ম্যাচ হেরেছে। আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচ নিয়েতো কিছু বলার নেই। সেটি ভাগ্যকে দুষতে হবে। এই দু’টি ম্যাচই বলবো ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশের।
প্রশ্ন: আপনি যে উন্নতির কথা বলছেন সেটি আসলে কেমন?
জিমি: ২০০৫ অস্ট্রেলিয়া বা ২০০৭-এ বাংলাদেশ যখন ভারতকে হারায় তখন সেটিকে আপসেট বললে মেনে নেয়া যেতো। এখন যে ক্রিকেট তারা খেলছে সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারালে, অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডকে হারালেও আমি সেটিকে আপসেট মনে করবো না। এমন কথাও কিন্তু হয়েছে এবার। কিন্তু একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই নয়, ক্রিকেট অনুসারী হিসেবে এমনটা মানতে পারি না। এখন বাংলাদেশ সত্যিকারের ভালো খেলে, প্রতিপক্ষের উপর প্রভাব বিস্তার করে জয় তুলে নিচ্ছে। এখানেই আমি উন্নতির কথা বলছি।
প্রশ্ন: ধারাবাহিকতার ঘাটতি রয়েই গেছে,  সেটা কেন?
জিমি: প্রথমত হিসেব করে দেখেন দেশের মাটিতে বাংলাদেশ কতগুলো জয় পেয়েছে শেষ চার বছরে। যদি হিসেব করেন সেখানে তারা দারুণ ধারাবাহিক। কিন্তু দুর্বলতা বিদেশের মাটিতে! কিন্তু আমি সেখানেও বাংলাদেশকে দোষ দেবোনা। তারাতো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াতে খেলারই সুযোগ পায়না।  নিউজিল্যান্ডে সফর করেছে, কিন্তু সেটিও নিয়মিত নয়। একটা উদাহরণ দিচ্ছি, এই বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দল আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছে। সেখানে তারা টানা তিনবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে হারিয়েছে। আমি বলবো সেটার কারণেই এখানে এতটা প্রভাব বিস্তার করে খেলতে পারছে। যদি বাংলাদেশ দল এই সব দেশে নিয়মিত খেলার সুযোগ পেতো ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো তাহলে আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশকে এখানে হারানো যে কোনো দলের জন্য কঠিন হয়ে যেতো। বিশেষ করে টেস্ট খেলার সুযোগ পেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উন্নতি চোখে পড়ার মতো হতো।
প্রশ্ন কেন অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড বাংলাদেশকে টেস্ট খেলার আমন্ত্রণ জানায় না!
জিমি: কথাটা শুনতে হয়তো খারাপ লাগবে, আমি বলবো টাকার জন্য। এই সবকিছুর পিছনেই অর্থ জড়িত। লোকসানের ভয়েই তারা বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায় না। ওরা এশিয়ানদের মতো চিন্তা করে না, নিজেদের স্বার্থ ছাড়া। সব সময় লাভ খোঁজে, এটাই সত্যি!
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়াতো বাংলাদেশ সফরেও যেতে চায় না। তার কারণ কী মনে হয়?
জিমি: এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত । এতদিনের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টতা থেকে যতটা বুঝতে পেরেছি তা থেকে বলছি। অস্ট্রেলিয়া বল ইংল্যান্ড বল বা বিগ থ্রি বল তারা কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে চায়না। যদি সফরে যায়ও দু’টি টেস্ট খেলে। আমি বিশ্লেষণ থেকে বলছি যদি তিন বা পাঁচ ম্যাচের টেস্ট খেলে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া তারা হেরে যাবে বেশির ভাগ ম্যাচ। বাংলাদেশ সিরিজ জিতে যাবে। দুই ম্যাচের সিরিজ হলে একটি হারলেও আরেকটিতে তারা ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে তারা টানা তিনটি বা পাঁচ টেস্ট খেলতে পারবে না এটা আমি মনে করি ক্রিকেটীয় বিশ্লেষন থেকে। আর সেই কারণেই তারা  সেখানে গিয়ে নিজেদের ঝুঁকি বাড়াতে চায়না। রেটিং পয়েন্ট কমাতে চায়না। এটাই আমার কাছে বড় কারণ মনে হয়।
প্রশ্ন: এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের শক্তি ও দুর্বলতা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
জিমি: ব্যাটিংটা দারুণ করেছে। এই বিশ্বকাপে ৩’শ তাড়া করে জেতা দল। তামিম না, পারলেও সাকিব আল হাসান অসাধারণ খেলছে। সৌম্য হয়তো বেশি রান করতে পারেনি কিন্তু শুরুটা ভালো করছে। মুশফিকতো বলবো তোমাদের ভরসা। লিটন,  মোসাদ্দেক ব্যাট হাতে ভালো করেছে। কিন্তু বোলিংটা ভালো হয়নি। মোস্তাফিজকে নিয়ে যতটা আশা ছিল সেটি সে করতে পারেনি। মাশরাফির বয়স হয়েছে তার পক্ষে আমার মনে হয় না একটা টুর্নামেন্টে এত ইনজুরি নিয়ে টানা ভালো করা সম্ভব। রুবেল প্রথম থেকে খেলেনি তাই ছন্দ খুঁজে পায়নি বলেই মনে হচ্ছে। সাইফুদ্দিনের এখনো অনেক শেখার বাকি। যদিও উইকেট পাচ্ছে। মিরাজ উইকেট পেলেও সে ওয়ানডে নয় টেস্টেই ভালো, আমার কাছে মনে হয়। আমি বলবো তোমরা সেমিফাইনালে না যেতে পারলে এই বোলিংটা  নিয়েও আক্ষেপ করবে।
প্রশ্ন: তারুণদের পারফরম্যান্স কেমন?
জিমি:  সাকিব, তামিম, বা মাশরাফির জায়গা নিতে হলে তাদের পরিশ্রম করতে হবে। তবে প্রতিভা আছে, যেমন লিটন তার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে যেভাবে খেলেছে, আমি বলবো একটা সময় বাংলাদেশের ব্যাটিং ভরসা হবে সে। সৌম্য ছোট ছোট রান করছে কিন্তু যতক্ষণ ক্রিজে থাকে যে কোনো বোলারদের চিন্তার কারণ হয়। মোসাদ্দেক মনে হয় মাহমুদুল্লাহর জায়গাটা ভালভাবেই নিতে পারবে। তবে সাব্বিরতো দেখেছিলাম ভালো খেলে। এবার তার কী হয়েছে! শুনেছি ব্যক্তি জীবনে নানা বিতর্ক আছে তার। মনে হয় সে কারণেই হারিয়ে যাচ্ছে! মিরাজ, মোস্তাফিজ, সাইফুদ্দিনদের আরো বেশি যত্ন নিতে হবে। তা না হলে সিনিয়র যারা আছে তারা সরে গেলে দায়িত্ব নিতে পারবেনা তারা।
প্রশ্ন: মাশরাফির অভাব কতটা বোধ করবে বাংলাদেশ?
জিমি: এটাই প্রকৃতির নিয়ম। আর ক্রিকেটে কেউ না কেউ তার জায়গা নিয়েই নিবে। যদিও তার মতো হবেনা। জানি এটি তার  শেষ বিশ্বকাপ। তবে আমার মনে হয় তার ওয়ানডে ক্রিকেটকে এখনই বিদায় বলার সময় এসেছে। কারণ এখন বয়স হয়েছে, তার উপর ভয়ঙ্কর সব ইনজুরি। এখন সে দেশের হিরো! মাঠে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে পথ দেখানোর চালিকা শক্তিও। তারপরও বলবো এটাই সময় তার বিদায় বলার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status