শেষের পাতা

গোপনে ‘কাজী’ নিয়োগ চলছেই

দীন ইসলাম

২ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি প্রচার না করেই গোপনে ‘কাজী’ নিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা মহানগরীর বেশ কয়েকটি নবগঠিত ওয়ার্ডে নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার নিয়োগ করেছেন ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার দীপক কুমার সরকার। নতুন করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নবগঠিত ৪৮ নং ওয়ার্ডের নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তিনি। এবারও সেই একই পদ্ধতি। কাগজে কলমে বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। গত ১২ ই জুন জারি করা নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, নবগঠিত ৪৮ নং ওয়ার্ডের নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার নিয়োগের আবেদন করতে ১৫ কার্য দিবস সময় দেয়া হয়েছে। যদিও গতকাল পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তির কপি জেলা রেজিস্ট্রার নোটিশ বোর্ড বা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নোটিশ বোর্ডের কোথাও টানানো হয়নি। বিষয়টি সর্ম্পকে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা রেজিস্টার দ্বীপক কুমার সরকারকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এছাড়া ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও জবাব পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, যেসব ওয়ার্ড নিয়ে রীট মামলা চলমান ওই সব ওয়ার্ডেও নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার নিয়োগ করা হচ্ছে। এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নবগঠিত ৬১ ও ৬২ নং ওয়ার্ডে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্যানেল কাজী নিয়োগ দেয়। পরে ওই ওয়ার্ডে মো. বনি আমিন নামে এক ব্যক্তি নিকাহ রেজিস্টার দাবি করে হাইকোর্টে (নং-১১৮৩১/১৮) রিট পিটিশন দায়ের করেন। উক্ত রিট পিটিশন হাইকোর্ট বিভাগের যৌথ বেঞ্চে দীর্ঘ শুনানিতে স্থগিতাদেশ দেয়। এসব মামলার রায় গোপন রেখে প্যানেলে কাজী নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয় এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কপিও যথাস্থানে সময়মতো বোর্ডে না টাঙিয়ে গোপনে প্যানেল গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোপনে নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার নিয়োগের সঙ্গে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর শরিফ মিয়া সরাসরি জড়িত। আইন মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে শরিফ নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করছেন। ৬১ ও ৬২ নং ওয়ার্ডে কাজী নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন রাখা হয়। গেল বছরের ৫ ই ফেব্রুয়ারি জেলা রেজিস্টার অফিসের ওই কম্পিউটার অপারেটরের কাছে ফারহান হক নামে এক নিকাহ রেজিস্টার প্রার্থী এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। কিন্তু পরদিন ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় নোটিশ বোর্ডে ওই বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়। যেখানে উল্লেখ ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি শেষ দিন। অর্থাৎ আবেদনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ওই বিজ্ঞপ্তি নোটিশ বোর্ডে টাঙানো হয়। একইভাবে ৬৯ ও ৫২ নং ওয়ার্ডেও কাজী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণখান ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের (বর্তমানে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড) নিকাহ রেজিস্টার নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর ওই এলাকায় নিয়োগ দেয়া হয় এইচএম গোলাম ছাদেককে। এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে দুটি রিট এখন বিচারাধীন। আরেকটি নথিতে দেখা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নবগঠিত ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে (পূর্বতন মাতুয়াইল ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড) অস্থায়ী নিয়োগ পেয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন মোহাম্মদ নূর আলম। এ নিয়োগের পক্ষে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। তার পরও এ অধিক্ষেত্রে নতুন করে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিষয়টি উল্লে করে গত বছরের ১১ ই ফেব্রুয়ারি জেলা রেজিস্টার দপ্তরে চিঠি দেন মোহাম্মদ নূর আলম। কিন্তু তাতেও নিয়োগ প্রক্রিয়া থামানো হয়নি। এরপর গোপনে আরও কয়েকটি নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার নিয়োগ করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status