দেশ বিদেশ
ব্র্যাকের জরিপ
দুই তৃতীয়াংশের অভিমত পণ্যের দাম বাড়ে- ১৭ শতাংশ জানেই না বাজেট কী!
স্টাফ রিপোর্টার
২৬ জুন ২০১৯, বুধবার, ৯:২২ পূর্বাহ্ন
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে-দুই তৃতীয়াংশ লোক মনে করেন বাজেট ঘোষণার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে। পাঁচ ভাগের এক ভাগ মনে করেন বাজেটের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব জনজীবনে পড়ে না। আর ১৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানেনই না-বাজেট কী ! দেশের দরিদ্র ও অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর জাতীয় বাজেট কী ধরনের প্রভাব ফেলে এবং এতে কী ধরনের ন্যূনতম পরিবর্তন আনা হলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে-সে বিষয়ে ব্র্যাক, গবেষণা সংস্থা আইসোশ্যাল ও উন্নয়ন সমন্বয় সম্মিলিতভাবে একটি গবেষণা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা এই তথ্য জানান। গবেষণার অংশ হিসেবে পরিচালিত একটি জরিপের ফলাফল জানাতে তারা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। আয়োজকরা জানান, গবেষণার অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো সূচককে সমন্বিত করে একটি নিবিড় ডাটা মডেল তৈরির কাজ চলছে। এই মডেলের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর বাজেটের সামগ্রিক প্রভাব সম্পর্কে ধারাবাহিক ও নিবিড় সমীক্ষা করা সম্ভব হবে। এই গবেষণা ২০১৯ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলবে। তিনটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে-প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তসমূহে কী ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন তা নিরূপণ করা; জাতির অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে সুসমন্বিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, কৌশল, পদ্ধতি ও কার্যক্রমে বিদ্যমান সমস্যা ও অন্তরায়গুলোকে চিহ্নিত করা এবং ২০১৯ সাল থেকে ২০২৫ এই সাত বছরব্যাপী বিস্তৃত ডাটা মডেলটিকে আরো সুষ্ঠু ও নিখুঁত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা। গবেষকরা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সব সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক এবং নীতিগত পদক্ষেপকে আমলে নিয়ে ডাটা মডেলটির তাত্ত্বিক ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে। পরিবার পর্যায়ের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা ও অর্থনৈতিক ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এসব সূচক ও নীতিগত পদক্ষেপ কী ধরনের প্রভাব বিস্তার করে তার নিবিড় পর্যবেক্ষণ হচ্ছে এই গবেষণাকর্মের অন্যতম প্রধান কাজের ক্ষেত্র। ফলে, এই ডাটা-মডেলটির প্রধানতম লক্ষ্য জাতীয় অর্থনীতি ও পারিবারিক অর্থনীতির মধ্যেকার জটিল সম্পর্ককে একটি যথাসম্ভব বিশদ ও বুদ্ধিগ্রাহ্য কাঠামোর মাধ্যমে উপস্থাপন করা। প্রাথমিক জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা, জাতীয় বাজেটে বিদ্যমান বিভিন্ন অগ্রাধিকার সম্পর্কে জনভাবনা ও প্রান্তিক খানাগুলোতে দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা। সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা বিষয়ে জরিপে প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য ফলাফল: হচ্ছে- ৪ হাজার ৮০০ খানার মধ্যে ১০ শতাংশ অন্তত একটি সামাজিক সুরক্ষা সেবা গ্রহণ করেছে, সামাজিক সুরক্ষা সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ নারী। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা - এই চার ধরনের সামাজিক সুরক্ষা সেবায় অতিরিক্ত জোর দেয়া হয়েছে বলে জরিপে প্রতীয়মান হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে একটি প্যানেল আলোচনায় যোগ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইডিএস-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, আইসোশ্যাল-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. অনন্য রায়হান ও ব্র্যাকের পরিচালক কেএএম মোরশেদ।