প্রথম পাতা

দুই বান্ধবীর শেষ বিদায়

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৬ জুন ২০১৯, বুধবার, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন

সানজিদার লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা রাশিদা। বারবার বলছিলেন- আমি তো মৃত মুখ দেখতে  চাইনি। ‘আমার কলিজার টুুকরো কিছু না বলে চলে গেলো।’ রাশিদা বেগমের আর্তনাদে গতকাল ভারী হয়ে উঠেছিল সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর। এমন মৃত্যুতে গোটা পরিবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মা রাশিদা বারবারই বলতেন- ‘গাড়িতে যেও না। ট্রেনে যেও। নিরাপদে যেতে পারবা।’ কিন্তু এই ট্রেনই কেড়ে নিলো তার আদরের মেয়ে সানজিদাকে। কফিনবন্দি মেয়ের লাশ নিয়ে গতকাল দুপুরে কেঁদে কেঁদে সিলেট ছাড়লেন রাশিদা বেগম। কিন্তু তার এই কান্নায় চোখের জল কেড়েছেন সবার। হাউমাউ করে কেঁদেছে সানজিদা ও ফাহমিদার সহপাঠীরা। এক দুর্ঘটনায় দুই বান্ধবীকে হারিয়ে তারা দিশাহারা। সিলেট নার্সিং কলেজ ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শোকাতুর পরিবেশ নেমে এসেছে। গতকাল থেকে দুটি প্রতিষ্ঠান তিন দিনের শোক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সিলেট নার্সিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সানজিদা আক্তার ও ফাহমিদা ইয়াসমীন। গতকাল তাদের সহপাঠীরা জানিয়েছেন- সানজিদা ও ফাহমিদা দু’জনই মেধাবী শিক্ষার্থী। তারা একে অপরের ভালো বন্ধু। দুই বন্ধু এক সঙ্গে মিলে মাতিয়ে রাখতো নার্সিং কলেজের হোস্টেল ও ক্যাম্পাস। কখনো কখনো ফাহমিদা তার বান্ধবীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি জালালপুরে বেড়াতে যেত। তারা দুই জন ছিলেন শ্রেণি কক্ষের প্রাণ। ঘটনার দিন দুই বান্ধবী ঢাকার একটি সেমিনারে যাওয়ার জন্য হোস্টেল থেকে বের হয়। যাওয়ার সময় বলেছিল- ‘দোয়া করিস, যেন ভালোভাবে পৌঁছাতে পারি।’ রাতের উপবন ট্রেনের বড়ছড়ায় পড়ে যাওয়া বগিতেই তারা ছিলেন। দুর্ঘটনার পর ট্রেনের নিচে একাংশ থেকে স্থানীয়রা তাদের বের করেন। যখন তাদের উদ্ধার করা হয় তখন তারা মৃত। তাৎক্ষণিক তাদের কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে স্বজনরা গিয়ে তাদের লাশ শনাক্ত করেন। ফাহমিদা ইয়াসমিনের বাড়ি সিলেটের জালালপুরে। স্বজনরা জানিয়েছেন- দুর্ঘটনার পর থেকেই তারা ফাহমিদার খোঁজ করছিলেন। কিন্তু পাচ্ছিলেন না। এরপর তারা তার খবর নেন কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে গিয়ে তারা ফাহমিদার লাশ খুঁজে পান। পরদিন দুপুরের আগেই তারা মরদেহ বাড়ি নিয়ে আসেন। ফাহমিদার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাদের অনেক সহপাঠী ছুটে যান গ্রামের বাড়িতে। সেখানেও তারা প্রিয় সহপাঠীর মুখ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ওই দিন বিকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় বাগের হাটের সানজিদার মরদেহ। খবর পেয়ে বাগের হাট থেকে ছুটে আসেন মা রাশিদা বেগম। তিনি বুধবার ভোররাতে সিলেট এসে পৌঁছেন। গতকাল সকালে হাসপাতালে  যান। সেখানে মেয়ের লাশ দেখে কান্নায় লুটে পড়েন। লাশ দেখে অঝোরে কাঁদেন মা। সেখানে সিলেট নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা তাকে সান্ত্বনা জানান। এ সময় তারাও কেঁদে ফেলেন। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘সানজিদার মায়ের আর্তনাদে কেঁদেছেন সবাই। এমন মৃত্যু আমরা কেউ চাই না। আমাদের দুটি বোন এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে স্বপ্নেও ভাবিনি। তাদের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। এ কারণে আমরা তিন দিনের শোক কর্মসূচি পালন করছি।’ মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ইউনুছ রহমান লাশ হস্তান্তর করেন। রাশিদা বেগম মেয়ের লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে রওনা দেন। সেখানেই দাফন হবে সানজিদার। লাশ হস্তান্তরকালে উপস্থিত ছিলেন ওসমানী হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক রেনু আরা আক্তার, নার্সিং মেডিকেলের প্রিন্সিপাল ফয়সাল আহমদ চৌধুরী, সিলেট নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক, যুগ্ম সম্পাদক সুলেমান আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দু চন্দ্র দাস, নার্সিং স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অনিক দে, সাধারণ সম্পাদক সিঁথি শিকদার, কোষাধ্যক্ষ তানজিনা তিথি। সঙ্গে ছিলেন সানজিদার সহপাঠীরা। সানজিদার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট থানার ভানদরখোলা গ্রামে। আর ফাহমিদা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জালালপুরের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের আব্দুল বারীর মেয়ে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status