ক্রিকেট বিশ্বকাপ-২০১৯

স্টেডিয়াম নাকি পাঁচতারা হোটেল!

ইশতিয়াক পারভেজ, সাউদাম্পটন থেকে

২৫ জুন ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

হোটেলে রুমের জানালাতে বসেই দেখছেন ক্রিকেট খেলা! মন চাইলেই সোজা নেমে চলে যাচ্ছেন মাঠে। গ্যালারিতেও ঢুকে যাচ্ছেন খেলা দেখতে। হোটেলে থাকার সুবাদে দর্শকদের সঙ্গে ক্রিকেটারদেরও সাক্ষাৎ হয়ে যাচ্ছে। আবার এখানে ক্রিকেট ম্যাচ কভার করতে আসা সংবাদকর্মীদের প্রেসবক্সে যেতে হচ্ছে হোটেল লবি ধরে। ভুল করে কেউ কেউ চলে যাচ্ছেন হোটেল গেস্টদের রুমের সামনে। নিরাপত্তাকর্মীরা না দেখালে বা চিহ্ন না থাকলে ভুল করে কোনো রুমে নক করে বিরক্ত করে ফেলতে পারেন তাদের। হ্যাঁ, এটিই ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনের রোজ বোল স্টেডিয়ামের চিত্র। এখানে এসে শুরুতেই ধাক্কা খেতে হবে এই ভেবে যে এটি স্টেডিয়াম নাকি পাঁচতারা হোটেল! কেউ কেউ গলফ কোর্স ভেবেও পড়েছেন বিড়ম্বনায়। পাহাড় ও বন কেটে তৈরি হয়েছে এই মাঠটি। তাই দূর থেকে কেউ বন বলেও ভুল করেন। সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা যখন প্রেস কোথায় জানতে চাইলেই নিরাপত্তাকর্মীরা বলছিলেন হিলটন হোটেলে যাও। ভেবেই পাচ্ছিলাম না কেন তারা এই পাঁচ তারা হোটেলের নাম বলেছেন! অবশেষে জানা গেল সেই রহস্য। এই হোটেলের লবি ধরেই যেতে হবে প্রেসবক্সে। ইংল্যান্ডের স্টেডিয়াম মানেই ঐতিহ্যের ধারক। প্রায় প্রতিটি মাঠেই ২’শ থেকে পাঁচশ’ বছরের পুরোনো ভবন আছে। আছে শতবছরের ক্রিকেটের ইতিহাসও। কিন্তু রোজ বোলকে বলা যেতে পারে ইংলিশদের আধুনিকতার প্রতীক। তবে হ্যাঁ, একেবারে ঐতিহ্যের ছোঁয়া থাকবে না তা কী হয়! এই মাঠের মালিক যে হ্যাম্পশায়ার ক্রিকেট ক্লাব। যাদের আছে ক্রিকেটে শত বছরের গৌরবের ইতিহাস।
২৫শে মে ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ যাত্রা। সেখানেই সোফিয়া গার্ডেন স্টেডিয়ামে প্রস্ততি ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় বিশ্বকাপ মিশন। এরপর একেক করে লন্ডনের ওভাল, ব্রিস্টল কাউন্টি গ্রাউন্ড, টনটনের সমারসেট, নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজ ঘুরে বাংলাদেশ দল আসে সাউদাম্পটনের রোজ বোল স্টেডিয়ামে। এখানে একটু ধাক্কাই খেতে হলো! হ্যাঁ, এখানে আপনার চোখে পড়বেনা শত বছরে একটিও লাল ছাদ আর হলুদ পাথরের ভবন। সবকিছুই তৈরি হয়েছে আধুনিক ইংল্যান্ডের স্থাপত্য নকশাতে। যার

মালিকানা এখন কাউন্টি ক্লাব হ্যাম্পশায়ারের হাতে। যাদেরকে অর্থ দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করছে হিলটন হোটেল। এখানে প্রথম দিন প্রবেশ করেই দেখা মিলেছে আফগান ক্রিকেটারদের। কারণ বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগে এখানেই তারা ডেরা বেঁধেছে। আফগান অধিনায়ক গুলবদিন নায়েবকে দেখা গেল হোটেল রুমে না গিয়ে প্রেসবক্সে এসে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখছেন বাংলাদেশ দলের অনুশীলন। প্রেস বক্সে এসেছিলেন তাদের ক্যারিবিয়ান কোচ ফিল সিমন্সও। কারণ প্রেসবক্সের ফ্লোরেই তাদের হোটেলে থাকার রুম। যে কারণে লবি, বার থেকে শুরু করে লিফটে উঠলেই সারাদিনই দেখা মিললো কোনো না কোনো আফগান ক্রিকেটারের। অন্যদিকে হ্যাম্পশায়ারের নাম শোনেনি এমন ক্রিকেট ভক্ত নেই বললেই চলে। যারা নূন্যতম ক্রিকেটের খোঁজ খবর রাখেন তারা বেশ ভালোভাবেই জানেন এই ক্লাবটির নাম। ১৮৬৩ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ারের অভিষেক হয়। কিন্তু নতুন এই রোজ বোল স্টেডিয়ামটির জন্ম মাত্র দেড় যুগ আগে। ২০০১ সালে হোটেল হিলটনের জায়গাতেই নির্মিত হয় এই আধুনিক স্টেডিয়ামটি। ২০০৬ এ দ্বিতীয় দফার নির্মাণে আরো আধুনিক করে তোলা হয় মাঠের ভবনগুলোকে। টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় ম্যাচটির আয়োজকও এই রোজ বল। এটি হ্যাম্পাশায়ারের জন্যও নতুন মাঠ। কারণ তাদের ঐতিহ্যের বড় একটা অংশ আছে সাউদাম্পটনের এক কোনে ছোট্ট একটি মাঠে। সেখান থেকে তারা এখন নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাস নিয়ে এসেছে আধুনিক রোজ বোলে। তবে ক্লাবটির হিরো কিন্তু কোনো ইংলিশ নয়! প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কে! আগে একটু জানিয়ে রাখা ভালো ১৮৬৩ থেকে এ পর্যন্ত ৫৫০ ক্রিকেটার খেলেছেন এই ক্লাবে। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে সেখানে শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার লেগস্পিনার শেন ওয়ার্ন। ক্লাবটির হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২০০০-২০০৭, এই ৮ বছরে ২৭৮ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তার হাত ধরেই দলটি পেয়েছে অভাবনীয় সাফল্য। সেই কারণেই ড্রেসিং রুমের পাশের স্ট্যান্ডটিই তার নামে নামকরণ করা হয়েছে । এই মাঠের সঙ্গে অবশ্য বাংলাদেশ দলের সম্পর্ক বেশ পুরানো। ২০০৪ এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে এসেছিল বাংলাদেশ দল। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বড় ব্যবধানেই হেরে যায় রাজিন সালেহর দল। শুধু তাই নয় এখানে বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ এডি বার্লো এসেছিলেন হুইল চেয়ারে করে শিষ্য টাইগারদের নিয়ে। এবারের বিশ্বকাপের কোনো সদস্যই সেবার দলে ছিলেন না। তাই তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীমদের জন্য একেবারেই নতুন।




   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status