দেশ বিদেশ

মাদ্রাসা শিক্ষকের ছোড়া বেতে চোখ হারালো ইমরান

পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

২৫ জুন ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:৩৭ পূর্বাহ্ন

পাকুন্দিয়ায় এক মাদ্রাসা শিক্ষকের ছোড়া বেতের আঘাতে ইমরান (১১) নামের এক শিক্ষার্থীর একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মাহমুদের বিরুদ্ধে। গত ২৮শে মে উপজেলার চরকাওনা হামিদ মেম্বারের বাড়ির বেড়িবাঁধ হাফিজিয়া মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে ওই শিক্ষক ও মাদ্রাসার পরিচালক মো. মোনায়েমের বিরুদ্ধে গতকাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীর বাবা মো. ইদ্রিছ আলী।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে উপজেলার চরকাওনা নয়াপাড়া গ্রামের ইদ্রিছ আলী তার ছেলে ইমরানকে ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। ইমরান নিয়মিত পড়াশোনা করে আসছিল। গত ২৮শে মে দুপুরে মাদ্রাসায় শিক্ষক মাহমুদের পাঠদানকালে ইমরান কিছুটা অন্যমনস্ক ছিল। এতে ওই শিক্ষক রাগান্বিত হয়ে ইমরানকে লক্ষ্য করে তার হাতে থাকা বেত ছুড়ে মারেন। ছোড়া বেতটি ইমরানের ডান চোখে গিয়ে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে ইমরান চিৎকার করতে থাকে এবং তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে। পরে তাকে বাইরে নিয়ে চোখে পানি দেয়া হয়। ঘটনাটি কাউকে না বলতে ইমরানকে ভয় দেখায় শিক্ষক। ওই দিন বিকালে ইমরানের দাদা আবদুল মালেক মাদ্রাসার সামনের রাস্তা দিয়ে পার্শ্ববর্তী নয়াবাজারে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে তাকে ওই শিক্ষক জানান, আপনার নাতির চোখে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাকে বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসা করান। আবদুল মালেক বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে মাদ্রাসায় গিয়ে দেখেন ইমরান বাড়িতে চলে গেছে। বাড়িতে গিয়ে আবদুল মালেক দেখতে পান ইমরানের চোখ ফুলে গেছে। চোখের তীব্র ব্যথায় চিৎকার করছে ইমরান। পরদিন ইমরানের চাচা জালাল তাকে চিকিৎসার জন্য গাজীপুরের কাপাসিয়া লায়ন আলম চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক ইমরানের চোখের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। পরে ঢাকা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে নিয়ে ইমরানকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ১৪ দিন চিকিৎসার পর চিকিৎসক ইমরানের ডান চোখটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান।
এ ব্যাপারে ইমরানের চাচা মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি কাউকে না বলে সেজন্য ইমরানকে ভয় দেখিয়েছে শিক্ষক মাহমুদ। প্রথমে ইমরান আমাদের কিছু বলেনি। ঘটনার তিনদিন পর তার সহপাঠীদের মাধ্যমে জানতে পারি শিক্ষক মাহমুদের ছোড়া বেতের আঘাতে তার চোখ নষ্ট হয়েছে। পরে ইমরানকে অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পর বিষয়টি খুলে বলে। এ ঘটনা জানার পর শিক্ষক মাহমুদ পালিয়ে যায়।
শিক্ষক হাফেজ মাহমুদের ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার ওপর আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি তাকে আঘাত করিনি। তার চোখে এমনিতেই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। আমি তার দাদাকে বলেছি বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য। আমি ২৭শে রমজান ওই মাদ্রাসা থেকে চলে এসেছি। চলে আসার পর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
মাদ্রাসার পরিচালক মো. মোনায়েম বলেন, বিষয়টি আমি ঘটনার তিনদিন পর শুনেছি। ছাত্রের খোঁজখবর নিয়েছি। শিক্ষক হাফেজ মাহমুদকে শুধু রমজান মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে আনা হয়েছিল। ছাত্রের পরিবারের সঙ্গে বসে একটা মীমাংসা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status