দেশ বিদেশ
ঢাকায় কূটনৈতিক ব্রিফিং
আইওএম নির্বাচনে বাংলাদেশের জয় ঘোষণায় আন্তর্জাতিক সমর্থন কামনা
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৫ জুন ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:৩৬ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) -এর নির্বাচনে নৈতিকভাবে বাংলাদেশ জয়ী হয়েছে। সংস্থার নির্বাচনী বিধান অনুযায়ী এখন জরুরি হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাওয়া বাংলাদেশের প্রার্থীর দুই তৃতীয়াংশ ভোট নিশ্চিত করতে হ্যাঁ, না ভোটে যাওয়া। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ঢাকায় এক কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পাশে চান ওই নির্বাচন মনিটরিংয়ে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে ঢাকাস্থ বিদেশী কূটনীতিক নিয়ে গতকাল প্রাতঃরাশ বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠকেই নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। আইওএম এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উপ-মহাপরিচালক পদে নির্বাচনে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বাংলাদেশের হয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। গত শুক্রবার জেনেভাস্থ আইওএম হেড কোয়ার্টারে ওই নির্বাচনের ভোটাভুটি হয়। যা পঞ্চম রাউন্ড পর্যন্ত ভোট গড়ায়। চূড়ান্ত পর্ব তথা পঞ্চম রাউন্ডে সুদানকে পরাজিত করে জয় পায় বাংলাদেশ। কিন্তু সুদান পরাজয় মেনে না নেয়ায় জটিলতা তৈরি হয়, ফলে মঙ্গলবার পর্যন্ত নির্বাচন মুলতবি করা হয়। ব্রিফিং সংশ্লিষ্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, ঢাকায় যেসব দেশের দূতাবাস আছে তাদের আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। আইওএম-এর নিয়ম যাতে মানা হয়, সেজন্য তাদের সমর্থন চেয়েছি। ওই কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবারের উত্তেজনাপূর্ণ ওই নির্বাচনের ভোটাভুটির শেষ রাউন্ডে দু’জন প্রার্থীর লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রার্থী ১৪৮টি ভোটের মধ্যে ৭৫ ভোট পান। তার প্রতিদ্বন্ধি সুদানের প্রার্থী পান ৭৩ ভোট। ওই ভোটাভুটিতে ১৫০টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি (ভোটার) উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ২জন ইচ্ছাকৃতভাবে ঘোষণা দিয়ে (অ্যাবস্টেইন) ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকেন। বাকী ১৪৮জনের মধ্যে বাংলাদেশ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। আইওএম-এর ভোটের বিধান হচ্ছে দু'জন প্রর্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্ধিতায় হেরে যাওয় প্রার্থী সড়ে দাঁড়ান। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাওয়া প্রার্থীকে হ্যাঁ-না ভোটের সুযোগ করে দেন তার জয়ের অন্যতম শর্ত দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন আদায়ের জন্য। কিন্তু এটি মানতে নারাজ সুদান তথা আফ্রিকান ইউনিয়ন। জটিলতার সূচনা সেখানেই। সুদান ফের ভোট চায়। আর ঢাকা চায় আইনের প্রয়োগ, অর্থাৎ চূড়ান্ত জয়ের জন্য হ্যাঁ-না ভোট। আইওএম-এর বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ যাতে হয় সে জন্যই ঢাকাস্থ কূটনীতিকদের সমর্থন চাওয়া হয়েছে। সূত্র মতে, কূটনীতিকরা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন, কিন্তু কোন মন্তব্য করেননি। সুদান ছাড়াও আরও ৩ দেশ এই পদের প্রতিদ্বন্ধিতায় ছিল। ভোটের ফল তাদের অনুকূলে না যাওয়ায় তারা নিয়ম অনুযায়ী তা মেনে নিয়েছেন এবং পর্যায়ক্রমে সড়ে দাঁড়িয়েছেন। দেশ ৩টি হলো- ফিলিপাইন, আফগানিস্তান ও জর্ডান। বাংলাদেশ সময় গত শুক্রবার দুপুর ২টায় শুরু হওয়া ওই নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে শহীদুল দ্বিতীয় হন। প্রথমদিকেই ফিলিপাইন ও জর্দান তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়। চতুর্থ রাউন্ডেও শহীদুল দ্বিতীয় অবস্থানে থাকেন। এই রাউন্ড শেষে আফগানিস্তান প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিলে বাংলাদেশ ও সুদানের মধ্যে পঞ্চম রাউন্ডের চূড়ান্ত ভোট হয়। সেখানে শহীদুল প্রথম হন। অভিবাসন দুনিয়ায় পরিচিত মুখ শহীদুল হক আইওএমে ১১ বছর বিভিন্ন উচ্চ পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১২ সালে এ সংস্থা ছাড়েন এবং ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। সরকারের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসাবে তিনি এখনও দায়িত্ব পালন করছেন।