বাংলারজমিন

দোহারে গৃহবধূর নগ্ন ভিডিও ধারণ

ফিটিংবাজি করেই চলতো ওরা

শামীম আরমান, দোহার ( ঢাকা) থেকে

২৩ জুন ২০১৯, রবিবার, ৮:১৩ পূর্বাহ্ন

ঢাকার দোহার উপজেলায় এক গৃহবধূর নগ্ন ভিডিও কৌশলে মোবাইলে ধারণ করে চাঁদা দাবি করার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত সেই  আব্দুস সালাম ও মো. মাসুদ রানার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ পাওয়া গেছে। গৃহবধূর নগ্ন ভিডিও ধারণ করার কয়েক মাস আগে এই দুই যুবক লটাখোলা কবুতর কান্দার মো. বাধন নামে এক কিশোরকে পকেটে ইয়াবা দিয়ে পুলিশের ভয় দেখিয়ে তার মায়ের কাছে চাঁদা দাবি করে। কিন্তু তার মা গরিব বিধায় টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করে। আর এতেই পুলিশের হাতে ইয়াবাসহ তুলে দেয় বাধনকে। এছাড়া লটাখোলা বিলেরপাড় ও লটাখোলা কবুতর কান্দা সহ আশপাশে মাসুদ ও সালাম সহ আরো কয়েকজন এই এলাকাগুলোতে বিভিন্ন সময়ে অপরাধ সংগঠিত করে আসছিল। কিন্তু তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলে কিছু বলতে পারে না।
স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাগো এলাকায় অনেকের টিনশেটের বাড়িতে দেখবেন যে ঘরের টিনের বেড়া কাটা। এরা রাত গভীর হলেই অনেকের বাড়ির জানালা দরজা সহ বেড়া কেটেও কৌশলে চেষ্টা করে গৃহবধূদের আপত্তিকর ছবি ধারণ করে ব্লাক মেইল করার জন্য। এছাড়া চুরি থেকে মাদক ও সন্ত্রাসী তাণ্ডব করে এই চক্রটি লটাখোলা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। এরা নাকি প্রভাবশালী এক ব্যক্তির ছত্রছায়ায় থেকে এ ধরনের অপরাধ দিনের পর দিন করে যাচ্ছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত পহেলা বৈশাখের সময় মাসুদ রানা, আব্দুস সালামসহ তিন যুবক মাদকসহ আটক করা হয়। তবে পরে তাদের আবারও এলাকায় দেখা যায়। এলাকাবাসী বলছে, মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে আমাদের এই এলাকা। ভয়ে কেউ কোন কথা বলতে পারে না। আমরা শুনি পুলিশ অমুকরে ধরছে তমুকরে ধরছে পরে আবার তাদের এলাকায় দেখা যায়। তবে মাসুদ রানা ও আব্দুস সালামকে ধরার পরে মানুষ অনেকটা স্বস্তি বোধ করছে। তাদের দাবি শুধু মাসুদ কিংবা সালাম নয় এই এলাকার সব ধরনের বখাটে যুবক ও মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে কঠিন বিচার করা হোক। তবে এদের মধ্যে থেকে অনেকেই আবার মনে করছেন এরা জেল থেকে বের হলে তাদের জন্য আতংক হতে পারে। তাই এরা জেল থেকে মুক্তি পেলে যাতে করে এদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরে রাখেন। এলাকাবাসী দাবি করেন- এরা ফিটিং বাজি করেই চলতো।
উল্লেখ্য, ২৭শে মে রাতে দোহারের এক গৃহবধূ তার নিজ ঘরে কাপড় বদলানোর সময় আগে থেকে ওত পেতে থাকা স্থানীয় মাসুদ রানা ও আব্দুস সালাম নামে দুই বখাটে গৃহবধূর ঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে কৌশলে ওই গৃহবধূর নগ্ন ছবি মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে তা সংরক্ষণ করে। এরপর ২৯শে মে সকালে বখাটেরা একটি খামের ভিতরে গৃহবধূর আপত্তিকর দুটি ছবি প্রিন্ট করে তা গৃহবধূর ঘরের দরজার সামনে রেখে যায়। খামের ওপরে নগ্ন ভিডিও ধারণ করা কথা লিখে টাকা দাবি করে বখাটেরা। এরপর বিভিন্ন সময়ে বখাটেরা গৃহবধূকে তার নগ্ন ছবি দেখিয়ে এবং তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করলে প্রথম ধাপে তাদের ২০ হাজার টাকা দেয় গৃহবধূ। এভাবে গৃহবধূকে মানসিকভাবে টর্চারিং করার এক পর্যায়ে গৃহবধূ আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু পরিবারের লোকজনের উপস্থিতিতে সেই চেষ্টা ব্যার্থ হয়। পরবর্তীতে আবার চাঁদা চেয়ে গৃহবধূকে চাপ দিলে সে স্থানীয়দের সহায়তায় দোহার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। পুলিশ ওই গৃহবধূকে দিয়ে ফাঁদ পেতে চাঁদা দিবে বলে ওই দুই বখাটেকে কৌশলে ডেকে আনে। এসময় স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ তাদের রোববার রাতে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। সেইসঙ্গে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দুটি মেমোরি কার্ডসহ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূ রোববার দিবাগত রাতেই তিনজনের নামসহ অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে আসামি করে পর্নোগ্রাফী আইনে দোহার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার সকালে ওই দুই বখাটেকে আদালতে পাঠানো হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status