বাংলারজমিন

আত্রাইয়ে উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণ

আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি

২৩ জুন ২০১৯, রবিবার, ৭:৩৭ পূর্বাহ্ন

আত্রাইয়ে উন্মুক্ত জলাশয় ‘বিলসুতি’তে মাছ চাষে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হলে গত ১৯শে জুন বাঁধ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত দুটি স্ক্যাভেটর জব্দ করা হয়। কিন্তু প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন করে আবারও স্ক্যাবেটর নিয়ে এসে বাঁধ নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে। এভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হলে কয়েক হাজার কৃষক ফসলি জমি নিয়ে ও মৎস্যজীবীরা জীবিকা নির্বাহে বিপাকে পড়বেন বলে জানা গেছে। ‘জমির মালিক একজন ‘অথচ’ মাছ চাষ করবেন আরেক জন’ এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগীরা দ্রুত বাঁধটি ভেঙে সমান করে দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। এ দিকে উপজেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়েছেন প্রভাবশালীদের নামে তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। জানা গেছে, জেলার আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন ও রাজশাহীর বাঘমারা উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে উন্মুক্ত জলাশয় ‘বিলসুতি’। প্রায় সাত বছর আগে এ উপজেলার উন্মুক্ত জলাশয়ের অংশে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খাল খনন করা হয়েছে। ফলে এ বিলের পানি গজমতখালী খাল দিয়ে নেমে শুঁটকিগাছা হয়ে আত্রাই নদীতে গিয়ে নামে। এ জলাশয়ে আষাঢ় থেকে অগ্রহায়ণ (৬ মাস) পর্যন্ত পানি থাকে। এ পানি দিয়ে ওই ইউনিয়নের বড় শিমলা, চকশিমলাসহ কয়েকটি গ্রামের কৃষক প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমির বোরো ও আউশের আবাদ করে থাকেন। এছাড়া ওইসব গ্রামের প্রায় ৫০০ মৎস্যজীবী এ জলাশয়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। গত দুই বছর থেকে ওই জলাশয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আমজাদ হোসেনসহ প্রায় শতাধিক প্রভাবশালী বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করেছেন। কিন্তু এ বছর আত্রাই উপজেলার উন্মুক্ত জলাশয়ের অংশে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খালের মুখ বন্ধ করে ১৫-২০ দিন থেকে দুটি স্ক্যাভেটর মেশিন দিয়ে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের কাজ করছেন। এভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হলে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খাল খননের উপকার থেকে বঞ্চিত বিলসুতি বিল। এছাড়া বোরো মওসূমে পানি বিল থেকে বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতার কারণে বোরো চাষ ব্যাহত হবে বলে মনে করেন কৃষকরা। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, তাদের জমির মাটি কেটে নিয়ে প্রভাবশালীরা ক্ষমতার জোরে বাঁধ নির্মাণ করছেন। অথচ তাদের সঙ্গে একটা আলোচনা করার কোনো বিষয় মনে করেনি। বাঁধ নির্মাণ করা হলে বর্ষা মৌসুমে পানি জলাশয় দিয়ে নামতে পারবে না। এতে করে স্বল্প সময়ে বন্যার সৃষ্টি হবে। ফসল ডুবে ক্ষতি হবে। আবার জলাশয় ওই প্রভাবশালীদের দখলে থাকবে। মৎসজীবীরা মাছ শিকার করতে পারবে না। বাঁধ নির্মাণকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন বলেন, বিলসুতি বিলে গত কয়েক বছর যাবৎ মাছ চাষ করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে বাঁশের বেড়া (বানা) দিয়ে মাছ চাষ করা হতো। এবারে সেটা কয়েকশ সদস্য মিলে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করে মাছ চাষ করার লক্ষে এই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে কৃষক ও মৎস্যজীবীদের কোনো ক্ষতি হবে না বরং তারা উপকৃত হবেন। আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ছানাউল ইসলাম বলেন, বিলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে এমন সংবাদে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্ক্যাবেটর মেশিন জব্দ করা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধে আইনগতভাবে যা করা দরকার, সেভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এটি একটি অবৈধ কাজ। উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এতে করে স্থানীয় কৃষক ও মৎসজীবীদের সমস্যায় পড়তে হবে। যারা এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও মৎস্য কর্মকর্তাকে প্রধান করে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে প্রতিদেন তৈরি করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status