দেশ বিদেশ

অর্থমন্ত্রীর সমালোচনায় মতিয়া

সংসদ রিপোর্টার

২১ জুন ২০১৯, শুক্রবার, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

 প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের উৎস কর বৃদ্ধির জন্য অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেছেন সরকারদলীয় এমপি বেগম মতিয়া চৌধুরী। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এতে হাত দিলেন কেন? এটা তো অবৈধ নয়, বৈধ টাকা। এসব সঞ্চয়পত্র কেনেন গ্রামের বিধবা, দুঃস্থ ও অসহায় মহিলারা। বড় ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেন, ঋণ মওকুফ করেন, গাড়ি-বাড়ি কেনার সুযোগ দিচ্ছেন, অথচ পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের ওপর হাত দিলেন, এটা মানতে পারবো না। একইসঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলের সদস্যরা। প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে গতকাল সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় আরো অংশ নেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সরকারি দলের মেহের আফরোজ চুমকি, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, আনোয়ারুল আবেদীন খান, আবদুস সোবহান মিয়া, বেনজীর আহমদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, শামীম হায়দার পাটোয়ারি, সালমা ইসলাম প্রমুখ। আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী প্রস্তাবিত বাজেটে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের উপর উৎস কর বৃদ্ধির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এটা তো প্রধানমন্ত্রীর স্ক্রীম, এখানে হাত দিলেন কেন? বড় বড় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিচ্ছেন, ঋণ মওকুফ করছেন, গাড়ি-বাড়ি কেনার সুযোগ দিচ্ছেন। অথচ পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের ওপর হাত দিলেন, এটা মানতে পারবো না। তিনি বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নায়ক ছিলেন জিয়াউর রহমান দাবি করে তিনি বলেন, তিনি ইনডেমনিটি আইন করে ঘাতকদের দায়মুক্ত করেছিলেন। এ দেশে ১৬০টি মদের লাইসেন্স দেয়া হয় জিয়ার আমলে। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষের মানুষদের নির্যাতন ও হত্যা করেন। তার আমলে ‘মানি ইজ নো প্রবেলম’ নীতি চালু হয়ে, দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। কারফিউ চালু করে নির্য়াতন নিপীড়ন বাড়ান। সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল করে স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর রাজাকারদের বিচার শুরু করেন। কিন্তু খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হয়েও তার স্বামী জিয়াউর রহমানের হত্যার বিচার করেননি, সেই বিচারের ফাইল এখনো চট্টগ্রাম কোর্টে পড়ে আছে। তিনি বলেন, বিএনপি অভিযোগ করে আমরা নাকি খালেদা জিয়াকে জেলে মারতে চাইছি! বেগম জিয়াকে মারতে যাবে কে? তিনি বলেন, বিএনপি আমলে বিদ্যুতের চিত্র ছিল শুধু খাম্বা আর খাম্বা। তার নেই, বিদ্যুৎ তো দূরের কথা। আর সেই খাম্বা ওয়ালারা দুর্নীতির দায়ে পালিয়ে বিদেশে বসে আছে। আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের সঙ্গে তারা হাত মেলাচ্ছে। দেশের সমস্ত অগ্রগতিকে তারা নস্যাৎ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, একদিন যারা সংখ্যাগরিষ্ঠার জোরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার ঠেকাতে ইনডেমনিটি জারি করেছিলেন, সময়ের ব্যবধানে তাদের (বিএনপি) এখন সংসদে ৬-৭ জন সংসদ সদস্যও নেই। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সরাসরি তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবার জড়িত ছিল। এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়ে এখন কারাগারে। অনেক জ্ঞানপাপী এসব দণ্ডিত দুর্নীতিবাজদের মুক্তি চান! কিন্তু অপরাধী অপরাধীই, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ভুল রাজনীতির কারণে বিএনপিকে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভুল রাজনীতি থেকে ফেরত না এলে মাইক্রোসকোপ দিয়েও বিএনপিকে একদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না।
প্রস্তাবিত বাজেটকে গণমুখী, জনকল্যাণকর অনন্য অসাধারণ বাজেট উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে শেখ হাসিনার বিকল্প একমাত্র শেখ হাসিনাই। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজমুদার বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, তারা বর্তমান সরকারকে অবৈধ বলে এই সংসদে বক্তব্য দেন। আবার শপথ নিয়ে সংসদে এসে নিজের জন্য প্লট চান, নিজের এলাকার উন্নয়ন চান। আবার এই সংসদকে অবৈধ বলেন, বাজে কথা বলেন। কিন্তু দেশের মানুষ বুঝে গেছে আপনারা চোর ছিলেন, যার জন্য দৌড়ে (নির্বাচন) পালিয়েছেন। যার জন্য আন্দোলন করতে পারেন না, মাঠে নামতে পারেন না। মাঠে নামার শক্তি নেই। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকতে যারা কৃষককে বীজ দেয়নি, তেল দেয়নি, সার দেয়নি- তারা আবার বলে এই সরকার অবৈধ। আড়াই লাখ মেট্রিক টন ধান প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে কেনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এই কাজগুলো অব্যাহত থাকলে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবে। তবে এটা স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধান করতে হলে উৎপাদন ব্যয় কমাতে হবে, ধান কাটার জন্য যান্ত্রিক পদ্ধতিতে যেতে হবে। বিদ্যুতে ভর্তুকি কৃষকরা পায় না। সেটা সেচ যন্ত্রকারীরা পায়। কাজেই নতুন করে ভাবতে হবে। ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমাদের কৃষকরা বছরে মাত্র ৪০ দিন কাজ পায়, তার সঙ্গে অন্য কাজ যুক্ত করে ১৫০ দিনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে কৃষকরা বাঁচতে পারবে। দেশে যারা অতি ধনী হচ্ছেন, তাদের সুবিধা ও সম্মান দেয়া হয়েছে। এ বাজেটে গরিব ও আদিবাসী, সেইসঙ্গে চরে যে এক কোটি মানুষ বাস করে তাদের কোনো গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তাদের জন্য কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাজেটে নেই। এ বাজেটে বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ২০৩০ সালে আরো তিন কোটি যুবক বেকার হবে। সেজন্য বাজেটে প্রতি বছর কতজনের কর্মসংস্থান করা হবে তা সুনির্দিষ্ট করতে হবে। জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম বলেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করে না, বিদেশে পাচার করে কিংবা পালিয়ে যায়- তারা যেন ভবিষ্যতে কোনো ঋণ না পায় এবং কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিলেও বেশিরভাগ ব্যাংক সেটি মানছে না। তিনি ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি জানান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status