দেশ বিদেশ
কর কমিয়েও রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব?
মানবজমিন ডেস্ক
২১ জুন ২০১৯, শুক্রবার, ৯:৩১ পূর্বাহ্ন
১৯৭৪ সালে অর্থনীতিবিদ আর্থার ল্যাফার এক ডিনার টেবিলে বসে ন্যাপকিনে একটি ডায়াগ্রাম এঁকেছিলেন। তখন হয়তো তিনিও ভাবেননি ডিনার টেবিলে বসে খামখেয়ালিভাবে তৈরি করা এই ডায়াগ্রাম পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে কর আরোপ নীতিমালায় কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে। ল্যাফার তার ডায়াগ্রামে দেখিয়েছিলেন কীভাবে আয়কর শূন্যের কোঠায় আনলে সরকার কোনো রাজস্ব পাবে না। কিন্তু আয়কর শতভাগ বৃদ্ধি করলেও কোনো রাজস্ব পাবে না। কারণ, সেক্ষেত্রে জনগণ কাজ করতে আগ্রহ বোধ করবে না। সে হিসেবে, আয়করের পরিমাণ হতে হবে এমন পরিমাণে, যেটা একেবারে শূন্য নয় আবার খুব বেশিও নয়। একটা ‘সুইট স্পট’ খুঁজে বের করতে হবে সরকারকে, যার মাধ্যমে সর্বোচ্চ রাজস্ব বের করে আনা যায়। সাধারণত রাজস্ব বাড়ানোর জন্য দেশগুলো করের পরিমাণ বাড়িয়ে থাকে। বাংলাদেশের সামপ্রতিক প্রস্তাবিত বাজেটেও তেমন দৃশ্যই প্রতীয়মান। ল্যাফারের যুক্তি ছিল, কর হার বেশি হলেই রাজস্ব বেশি হবে এমন নয়। তার মতে, এমনটাও সম্ভব যে, একইসঙ্গে কম কর আরোপের মাধ্যমে সর্বোচ্চ রাজস্ব বের করে আনা যাবে। সেক্ষেত্রে হ্রাস পাওয়া করের জায়গা ভরবে ব্যয়ের অর্থ দিয়ে। এমনকি কর না কমালে যে রাজস্ব পাওয়া যেত তার চেয়ে বেশি রাজস্ব পাওয়া সম্ভব এ পদ্ধতিতে। কিন্তু আদতে তেমনটা সম্ভব কিনা সে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। ডিনার টেবিলে ল্যাফারের ওই হিজিবিজি ডায়াগ্রাম আঁকার প্রায় ৪৫ বছর পর, প্রায় ১৫ হাজার আর্টিকেলে উল্লেখ করা হয়েছে ‘ল্যাফার কার্ভ’ শব্দটি। ল্যাফারকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডাল অব ফ্রিডম’ সম্মাননায় ভূষিত করার কথা রয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামেপর। এখানে উল্লেখ্য, ল্যাফার ট্রাম্পের ২০১৬ নির্বাচনের প্রচারণা শিবিরের উপদেষ্টা ছিলেন ও ‘ট্রাম্পোনোমিকস’ বইয়ের লেখকও। এক ঘোষণায় হোয়াইট হাউস তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদদের একজন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ল্যাফারের সঙ্গে একমত নন বাজেট বিশেষজ্ঞরা। সরবরাহ-পার্শ্ব অর্থনীতিবিদরা বহু আগ থেকেই ল্যাফার কার্ভ ব্যবহার করে করহার হ্রাস করার প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছেন। এর মধ্যে ১৯৮১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের আমলে ও ২০০১ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে এরকম কর হ্রাস করা হয়েছিল। উভয়বারই রাজস্বের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়েছিল। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ট্রাম্প প্রশাসন আয়কর কমিয়েছে। পাশাপাশি কর্পোরেট করহারও ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২১ শতাংশে নামিয়ে আনে। তৎকালীন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুনচিন দাবি করেছিলেন, এই পরিকল্পনায় ব্যয়ের হার বাড়বে, যার ফলে হ্রাস হওয়া করের রাজস্ব আপনাআপনি উঠে আসবে। এমনকি বাড়বে ঋণ শোধের হারও। কিন্তু সে প্রতিশ্রুত রাজস্বের দেখা আজও মেলেনি। বরঞ্চ, ২০১৮ সালে হ্রাস পায় কেন্দ্রীয় কর রাজস্বের হার। মার্কিন সরকারের বাজেট পর্যবেক্ষণকারী সরকারি সংস্থা কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস সমপ্রতি জানিয়েছে, চলমান পরিকল্পনায় ২০২৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ বাড়বে জিডিপির ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত। ২০১৫ সালে এই ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ শতাংশ। ল্যাফার নীতির এমন মারাত্মক ভুল প্রয়োগ অন্যান্য দেশেও হয়েছে। ২০১৭ সালে সুইডিশ মুক্ত-বাজার বিষয়ক থিংকট্যাংক টিমব্রোর এক অর্থনীতিবিদ জ্যাকব লুন্ডবার্গ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তাতে তিনি ২৭টি ওইসিডি-ভুক্ত দেশের ক্ষেত্রে ল্যাফারের নীতি প্রয়োগ করলে কী অবস্থা দাঁড়াবে তা দেখানোর চেষ্টা করেছেন। সুইডেনের মোট আয় বণ্টন ও বিভিন্ন করহারের ক্ষেত্রে করদাতাদের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তা অনুমান করেন তিনি। লুন্ডবার্গ জানান, তার তালিকায় থাকা পাঁচটি দেশের আয়করের হার তাদের সর্বোচ্চ রাজস্বের হারের চেয়ে বেশি থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র সুইডেনই ল্যাফার নীতি প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত দেশ। তাদের পক্ষে আয়করের হার কমিয়েও রাজস্ব আয় সর্বোচ্চ রাখা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আয়কর কমাতে হবে উচ্চ-মাত্রায় আয় করেন এমন ব্যক্তিদের ওপর থেকে। অন্যদিকে, বেশিরভাগ দেশই তাদের সর্বোচ্চ কর হার হয়তো ল্যাফার নীতিতে সর্বাপেক্ষা কাম্য যে পরিমাণের কথা বলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি পরিমাণে বা তার চেয়ে কম পরিমাণে আরোপ করেছে। লুন্ডবার্গের প্রতিবেদন থেকে ল্যাফার কার্ভের সমস্যা প্রতীয়মান হয়। একইসঙ্গে এটাও প্রমাণ হয় যে, কেন অর্থনীতিবিদরা ল্যাফারের সরবরাহ-পার্শ্ব নীতি সমর্থন করেন না। ২০১২ সালে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর ‘বুথ স্কুল অব বিজনেস’র গবেষণা কেন্দ্র ‘ইনিশিয়েটিভ অন গ্লোবাল মার্কেটস’ ৪০ জন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞকে জিজ্ঞেস করেছিল- যুক্তরাষ্ট্রে আয়কর হ্রাস করে পাঁচ বছরের মধ্যে ওই ঘাটতি পূরণ করার জন্য পর্যাপ্ত রাজস্ব সংগ্রহ করা সম্ভব কিনা! একজন অর্থনীতিবিদও এই পরিকল্পনায় সায় দেননি। গত বছর অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী রিচার্ড থ্যালার তার উত্তরে বলেছিলেন, এটা একটি ল্যাফার! (দ্য ইকোনমিস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সম্পাদিত ভাবানুবাদ)
ল্যাফারের সঙ্গে একমত নন বাজেট বিশেষজ্ঞরা। সরবরাহ-পার্শ্ব অর্থনীতিবিদরা বহু আগ থেকেই ল্যাফার কার্ভ ব্যবহার করে করহার হ্রাস করার প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছেন। এর মধ্যে ১৯৮১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের আমলে ও ২০০১ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে এরকম কর হ্রাস করা হয়েছিল। উভয়বারই রাজস্বের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়েছিল। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ট্রাম্প প্রশাসন আয়কর কমিয়েছে। পাশাপাশি কর্পোরেট করহারও ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২১ শতাংশে নামিয়ে আনে। তৎকালীন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুনচিন দাবি করেছিলেন, এই পরিকল্পনায় ব্যয়ের হার বাড়বে, যার ফলে হ্রাস হওয়া করের রাজস্ব আপনাআপনি উঠে আসবে। এমনকি বাড়বে ঋণ শোধের হারও। কিন্তু সে প্রতিশ্রুত রাজস্বের দেখা আজও মেলেনি। বরঞ্চ, ২০১৮ সালে হ্রাস পায় কেন্দ্রীয় কর রাজস্বের হার। মার্কিন সরকারের বাজেট পর্যবেক্ষণকারী সরকারি সংস্থা কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস সমপ্রতি জানিয়েছে, চলমান পরিকল্পনায় ২০২৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ বাড়বে জিডিপির ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত। ২০১৫ সালে এই ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ শতাংশ। ল্যাফার নীতির এমন মারাত্মক ভুল প্রয়োগ অন্যান্য দেশেও হয়েছে। ২০১৭ সালে সুইডিশ মুক্ত-বাজার বিষয়ক থিংকট্যাংক টিমব্রোর এক অর্থনীতিবিদ জ্যাকব লুন্ডবার্গ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তাতে তিনি ২৭টি ওইসিডি-ভুক্ত দেশের ক্ষেত্রে ল্যাফারের নীতি প্রয়োগ করলে কী অবস্থা দাঁড়াবে তা দেখানোর চেষ্টা করেছেন। সুইডেনের মোট আয় বণ্টন ও বিভিন্ন করহারের ক্ষেত্রে করদাতাদের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তা অনুমান করেন তিনি। লুন্ডবার্গ জানান, তার তালিকায় থাকা পাঁচটি দেশের আয়করের হার তাদের সর্বোচ্চ রাজস্বের হারের চেয়ে বেশি থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র সুইডেনই ল্যাফার নীতি প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত দেশ। তাদের পক্ষে আয়করের হার কমিয়েও রাজস্ব আয় সর্বোচ্চ রাখা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আয়কর কমাতে হবে উচ্চ-মাত্রায় আয় করেন এমন ব্যক্তিদের ওপর থেকে। অন্যদিকে, বেশিরভাগ দেশই তাদের সর্বোচ্চ কর হার হয়তো ল্যাফার নীতিতে সর্বাপেক্ষা কাম্য যে পরিমাণের কথা বলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি পরিমাণে বা তার চেয়ে কম পরিমাণে আরোপ করেছে। লুন্ডবার্গের প্রতিবেদন থেকে ল্যাফার কার্ভের সমস্যা প্রতীয়মান হয়। একইসঙ্গে এটাও প্রমাণ হয় যে, কেন অর্থনীতিবিদরা ল্যাফারের সরবরাহ-পার্শ্ব নীতি সমর্থন করেন না। ২০১২ সালে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর ‘বুথ স্কুল অব বিজনেস’র গবেষণা কেন্দ্র ‘ইনিশিয়েটিভ অন গ্লোবাল মার্কেটস’ ৪০ জন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞকে জিজ্ঞেস করেছিল- যুক্তরাষ্ট্রে আয়কর হ্রাস করে পাঁচ বছরের মধ্যে ওই ঘাটতি পূরণ করার জন্য পর্যাপ্ত রাজস্ব সংগ্রহ করা সম্ভব কিনা! একজন অর্থনীতিবিদও এই পরিকল্পনায় সায় দেননি। গত বছর অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী রিচার্ড থ্যালার তার উত্তরে বলেছিলেন, এটা একটি ল্যাফার! (দ্য ইকোনমিস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সম্পাদিত ভাবানুবাদ)