দেশ বিদেশ

দাম বাড়লো চিনি তেল ও মসলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২০ জুন ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

 প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে বাড়তি শুল্ক আরোপের কারণে বাজারে বাড়তে শুরু করেছে চিনি, ভোজ্যতেল ও মসলার দাম। বাজেট ঘোষণার পর ৪ দিনের ব্যবধানে চিনির দাম মণপ্রতি বেড়েছে ১২০ টাকার বেশি। অর্থাৎ কেজিপ্রতি দুই টাকার বেশি। একই হারে বেড়েছে সয়াবিন, পাম তেল ও মসলার দাম। ভোজ্যতেলের দামও মণপ্রতি ৯০ টাকার বেশি বেড়েছে। যা কেজিতে প্রায় আড়াই টাকা।
নতুন বাজেটে চিনির ওপর বাড়তি কর আরোপ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। হিসাব করে দেখা গেছে, নতুন কাঠামোয় প্রতি কেজি চিনিতে কর দাঁড়াবে ২১ টাকার মতো, যা আগের চেয়ে প্রায় ৫ টাকা বেশি। এবার বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় নতুন করে কর আরোপ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট, আমদানিকৃত অপরিশোধিত চিনির শুল্ক টনপ্রতি ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা, পরিশোধিত চিনির শুল্ক সাড়ে ৪ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি সম্পূরক শুল্ক (আরডি) ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। একইভাবে ভোজ্যতেলে ভ্যাট অব্যাহতি থাকলেও নতুন বাজেটে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে সয়াবিন তেলের ওপরও ৩ টাকার মতো বাড়তি কর দাঁড়াবে।
গতকাল ঢাকার কাওরান বাজারে প্রতি কেজি চিনি ৫৪-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। যা আগে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা ছিল। একইভাবে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ৮০ টাকায় উঠেছে, যা আগের চেয়ে ২ টাকা বেশি। অন্যদিকে পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার পাইকারিতে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হয়েছিল ১,৭০০ থেকে ১,৭১০ টাকায়। এখন চিনির পাইকারি দাম মণপ্রতি ১,৮১০ টাকায় উঠেছে।
এদিকে, বাজেটে ভোজ্যতেলের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা তুলে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এতো দিন পরিশোধনকারীরা তিন পর্যায়ে ৫ শতাংশ করে ভ্যাট আমদানি পর্যায়ে দিতেন। তাদের জন্য এ বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন তিন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। যদিও রেয়াত সুবিধা থাকবে। এতে ভোজ্যতেলের ওপর করভার ৩ টাকার মতো বাড়তে পারে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকদিন আগেও প্রতি মণ পাম অয়েলের দাম ছিল ১,৮৯০ টাকা। এখন মণপ্রতি পাম অয়েলের দাম বেড়ে হয়েছে ১,৯৮০ টাকা। অর্থাৎ বাজেট ঘোষণার পর পাম অয়েলের দাম বেড়েছে মণপ্রতি ৯০ টাকা। একইভাবে সয়াবিন তেলের দাম মণপ্রতি ৫০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২,৮০০ টাকা। সুপার পাম অয়েলের দাম ৬০-৭০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২,২০০ টাকা। বাজারে ভোজ্যতেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম আরো বাড়বে বলে অভিমত পাইকারি ব্যবসায়ীদের। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, বাজেট ঘোষণার পর থেকেই চিনি ও ভোজ্যতেলের ডিও কেনার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। দাম আরো বেড়ে যাবে, এমন গুজবে বাজারে পণ্য দুটির চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে মজুত রয়েছে, তারা বেশি দামে চিনি ও ভোজ্যতেলের ডিও বিক্রি করছেন।
সিটি গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, চিনির দাম বাজেটেই বেড়ে গেছে। আগে প্রতি কেজি চিনি আমদানিতে ১৪ টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। নতুন ঘোষণায় শুল্ক হয়েছে ১৮ টাকা। তবে শুল্ক বৃদ্ধিতে পাইকারিতে বাড়তি চাহিদা থাকলেও মিলপর্যায়ে সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো সংকট নেই।
মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর সরকার ট্যাক্স বাড়িয়েছে। বাড়তি ট্যাক্সের কারণে ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই। এরই মধ্যে পাম অয়েলের দাম ব্যারেলপ্রতি বেড়েছে ১০০ ও ভোজ্যতেলের ১২০ টাকা করে। এ প্রভাব তো খুচরা বাজারে পড়বেই। প্রস্তাবিত বাজেটের ট্যাক্স তো এখনো কার্যকর হয়নি, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যবসার নিয়মই এটা। বাজেটের আগে যেসব ব্যবসায়ী পণ্য মজুত রেখেছেন, তারা তো এখন বাড়তি দাম আদায়ের চেষ্টা করবেনই। এটাই ব্যবসার নিয়ম। আবার ধরেন, যেসব পণ্যের দাম কমিয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রেও তো ব্যবসায়ীদের লোকসান হবে। এদিকে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নতুন করে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাবে অস্থির হয়ে উঠেছে গরম মসলার বাজার। অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষণার পর পরই বেড়ে গেছে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দাম আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে আমদানি করা গরম মসলায় ৬০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আগামী অর্থবছর থেকে মসলা আমদানিতে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। এ কারণে বাজেট ঘোষণার পর থেকে জিরা, দারুচিনি, মিষ্টি জিরা, এলাচ, জয়ত্রি ও গোলমরিচের দাম বেড়ে গেছে। এর মধ্যে জিরার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি প্রায় ১০ টাকা। এছাড়া এলাচ, জয়ত্রি, দারুচিনি ও গোলমরিচের দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাফেজ মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, আগে গরম মসলা আমদানিতে ৬০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। নতুন বাজেটে আরো ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ঘোষণা এসেছে। এ কারণে মসলার দাম কিছুটা চড়া।
বেসরকারি চাকরিজীবী শাখাওয়াত বলেন, বাজেটে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করার সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু যেসব পণ্যের দাম কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলোয় প্রভাব পড়েনি। বাজারে এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে ২,২৫০ টাকায়। বাজেট ঘোষণার পর এলাচের দাম বেড়ে প্রতি কেজি ২,৩০০ থেকে ২,৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, কয়েক দিনের ব্যবধানে জিরা মানভেদে ১০-১৫ টাকা বেড়ে ৩২০-৩৫০, মিষ্টি জিরা ২০ টাকা বেড়ে ১৩০-১৪০, গোলমরিচ ২০ টাকা বেড়ে ৩৭৫ ও দারুচিনি ২০ টাকা বেড়ে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী ও মসলা আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশের বেশিরভাগ গরম-মসলাই আমদানি নির্ভর। আগে মসলা আমদানিতে ৬০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। তবে নতুন করে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় আমদানি খরচ বেড়ে যাবে। এতে আমদানি করা বিদেশি গরম মসলার দামে প্রভাব পড়বে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status