বাংলারজমিন
‘ভাইরে গাঙ্গে আঙ্গোরে মাইরা ফ্যালাইছে’
নুরে আলম জিকু/হাসান পিন্টু, লালমোহন (ভোলা) থেকে
১৬ জুন ২০১৯, রবিবার, ৮:২৭ পূর্বাহ্ন
‘ভাইরে গাঙ্গে (নদীতে) আঙ্গোরে মাইরা ফ্যালাইছে। ৪ বার গাঙ্গে ভাইঙ্গা নিছে আঙ্গো বসতঘর। এ্যাহন থাকমু কই।’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন ৪৫ বছর বয়সী জাহানারা বেগম। স্বামী পরিত্যক্তা জাহানারার ১ ছেলে, ২ মেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন ঢালচর ইউনিয়নের আনন্দবাজার এলাকা পাশের বেড়িবাঁধে। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বছর খানেক আগে। ছেলে অন্যের নৌকায় মাছ ধরে। তারও ছেলে-মেয়ে আছে। দিনে যা আয় হয় তার উপরই পরিবারের সবাই নির্ভরশীল। নিজস্ব জায়গা জমি নেই। সরকারি বেড়ির পাশে বাস করছে। মেঘনা নদী বেড়ি ভেঙে নিলে আবার অন্য বেড়িবাঁধে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এভাবে ৪ বার বসতভিটা নদীরগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন ছাপড়া ঘরে বসবাস করছে। জাহানার বেগমের মতো ভিটেমাটি ছাড়া শত শত পরিবার। পরিবারের শেষ সম্বলটুকুও এখন মেঘনা নদীর গর্ভে। নদী বেষ্টিত এই ইউনিয়নটিতে ২০ হাজারের অধিক মানুষের বাস। জেলেদের ধরা মাছ ও কৃষকের ক্ষেত্রের ফসলে ভরপুর এই এলাকা। ২০০ বছর আগে সাগর মোহনায় গড়ে ওঠা ঢালচর প্রাকৃতিকভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। আছে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র তারুয়া দ্বীপ। প্রতি বছর এখানে দেশি-বিদেশি অর্ধলক্ষাধিক পর্যটক বেড়াতে আসে। জেলেরা সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ করে প্রথমে এই ঢালচরে ওঠে। দেশের রপ্তানিকৃত ইলিশের এক-তৃতীয়াংশ আসে ঢালচর থেকে। ফলে স্থানটি ইলিশ রপ্তালির প্রাণকেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। সম্প্রতি মেঘনার ভয়াল গ্রাসের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ছোট্ট এই দ্বীপটি। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসছে ঢালচর। নদী ভাঙনের ফলে বহুলোক বসত ভিটা বাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে শত শত একর জমি। দিশাহারা এখানকার বাসিন্দা। এই বর্ষার মৌসুমেই ভাঙন আতঙ্ক বেশি। কৃষকের চাষের জমিও রাতারাতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ পরিবার নিজের শেষ সম্বল হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এ জনপদ ত্যাগ করেছেন। আবার কেউ কেউ নিজের ভিটে মাটি নদীর মাঝে বিলীন হওয়ার পর আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে, ঝুপড়ি ঘরে ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে। তারা বেঁচে থাকার তাগিদে আশ্রয় খুঁজছে। তবুও এ জনপদের প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দা স্বপ্ন দেখে এখানেই থাকার। ঢালচরের বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া, সাহেব আলী মিয়াজী, মো. ফিরোজ, সাইফুল ইসলাম, তাসনুর বেগম বলেন, এখানে প্রায় ৪০-৪৫ বছর ধরে জীবনযাপন করছি। তবে বিগত কয়েক বছরের ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে এ চরের অনেকাংশ। ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েছে বসতভিটা, ফসলি জমি, আশ্রয় কেন্দ্র, স্কুল-মাদরাসা, মসজিদসহ সরকারি বহু স্থাপনা। যার ফলে অনেকেই এখান থেকে চলে গেছে অন্যত্র। যদি খুব শিগগিরই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে পুরো ঢালচরই নদী মাঝে বিলীন হয়ে যাবে।
ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার বলেন, ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে অনেক তদবির করেছি কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে কিছুতেই কিছু হয়নি। কিছুদিন আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে শিগগিরই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে কবে নাগাদ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। দ্রুত যেন ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সরকারের কাছে সেই দাবি জানাই। এছাড়াও যাদের ঘরবাড়ি ও জমি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে তাদের জন্য যেন ভূমি ও আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা করা হয়। এ ব্যাপারে ভোলা পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আলম জানান, ঢালচরের ভাঙন রোধে আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রকল্পটি পাশ হলে খুব দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। এরপর আর ঢালচরের ভাঙন থাকবে না।
ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার বলেন, ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে অনেক তদবির করেছি কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে কিছুতেই কিছু হয়নি। কিছুদিন আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে শিগগিরই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে কবে নাগাদ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। দ্রুত যেন ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সরকারের কাছে সেই দাবি জানাই। এছাড়াও যাদের ঘরবাড়ি ও জমি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে তাদের জন্য যেন ভূমি ও আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা করা হয়। এ ব্যাপারে ভোলা পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আলম জানান, ঢালচরের ভাঙন রোধে আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রকল্পটি পাশ হলে খুব দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। এরপর আর ঢালচরের ভাঙন থাকবে না।