দেশ বিদেশ

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

যে কারণে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের একটি দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি

মানবজমিন ডেস্ক

১৫ জুন ২০১৯, শনিবার, ৯:০০ পূর্বাহ্ন

প্রায় দেড় বছর আগে বাংলাদেশের দারিদ্র্যবিমোচন বিষয়ক একটি কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল দ্য ইকোনমিস্ট। ‘অন দ্য বাইকস’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনটি ২০১৮ সালের ২৭শে জানুয়ারি প্রকাশ পায়। এক লাখেরও বেশি দরিদ্র্র কৃষককে সাময়িকভাবে শহরে কাজ করতে যাওয়ার শর্তে ক্ষুদ্র পরিসরে ঋণ দিচ্ছিল ‘এভিডেন্স অ্যাকশন’ নামের একটি দাতব্য সংস্থা। সবদিক দিয়েই কর্মসূচিটি ন্যায্য মনে হচ্ছিল। ধান রোপণের পর যখন তেমন কিছু করার থাকে না তখন ওই সময়টুকুতে স্বল্প ঋণ নিয়ে শহরে কাজ করতে যাওয়ার প্রস্তাব বেশ কার্যকরী হওয়ার কথা ছিল। শহরে কাজ করতে যাওয়া ওইসব কৃষক, রিকশাচালক, নির্মাণ শ্রমিক ও এরকম কম মজুরির কাজ পেয়েছিল। তবে এতেই তাদের ভাগ্যে বিপুল পরিবর্তন এসেছিল। পুরো কর্মসূচিটি দেখে মনে হয়েছিল এতে সত্যিই দারিদ্র্য দূর হবে।
দুঃখজনক ব্যাপার হলো, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সবকিছু ভুল দিকে পরিচালিত হলো। এভিডেন্স অ্যাকশনের কর্মকর্তাদের কানে গুঞ্জন এলো যে, কর্মসূচিটির সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি সরকারি একজন কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়েছে। কিন্তু গুঞ্জনটির পক্ষে তাদের কাছে কোনো প্রমাণ ছিল না। আরো হতাশাজনক খবর আসে পরবর্তীতে, যখন কর্মসূচির বার্ষিক তথ্য প্রকাশ পায়। তাতে দেখা যায় যে, ২০১৭ সালে আগের চেয়ে অনেক কমসংখ্যক কৃষককে শহরে কাজ করতে যেতে রাজি করানো গেছে। চলতি মাসের ৬ তারিখ এভিডেন্স অ্যাকশন তাদের কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয়। প্রথমদিকে যে পরিকল্পনাটি দেখে মনে হয়েছিল এটি দরিদ্রতা বিমোচনের অলৌকিক ওষুধ, বর্তমানে তা উন্নয়নমূলক প্রকল্প কেন ব্যর্থ হয় সে বিষয়ক একটি সতর্কবার্তা মাত্র।
থিংকট্যাংক সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের জাস্টিন স্যান্ডেফুর জানান, যেসব মঙ্গলজনক প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে অত্যন্ত সফল হয়, পরবর্তীতে বেশিরভাগ সময়ই সেগুলো ব্যর্থ প্রকল্পে পরিণত হয়। এসব প্রকল্পের বেশিরভাগ পরীক্ষামূলক পর্যায়গুলোর দেখাশোনা করে থাকে পিএইচডি শিক্ষার্থীরা। যখন বড় ধরনের দাতব্য সংস্থা বা সরকার এসব প্রকল্পের দায়িত্ব নিয়ে নেয় তখন অনেককিছুই পাল্টে যায়। বেড়ে যায় নিয়ম ও নীতি, অসদাচরণের হার। বড় ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিরোধীর সংখ্যাও থাকে বড়। একবার কেনিয়ায় এক দাতব্য সংস্থা দেখায় যে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার নম্বরে উন্নতি আসে। পরবর্তীতে সরকার দেশজুড়ে এমনভাবে চুক্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়। কিন্তু রাজনৈতিক বিরোধীদলগুলো প্রকল্পটির সমালোচনা করে যে, এই শিক্ষকরাও সাধারণ শিক্ষকদের মতোই শ্রমিকসংঘের প্রতিনিধি। অপ্রত্যাশিতভাবে, স্যান্ডেফুর ও অন্যরা প্রকল্পটি মূল্যায়ন করে দেখেন যে, সরকারের এই সংস্কারে কোনো উন্নতি হয়নি।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সমস্যাটি সম্ভবত টার্গেট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে হয়েছে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের শহরে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়া ‘অভিবাসন আয়োজকদের’ অনেকেই প্রত্যাশা করেছিল তারা প্রত্যেকে ৪৫০ জনের বেশি মানুষকে রাজি করাতে পারবে। ওই পরিস্থিতিতে বাকি সবাই যা করতো, তারাও হয়তো তাই করেছিল- পুরুষদের টার্গেট করেছিল। কেননা, পুরুষদের পূর্বে শহরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে ও তাদের জন্য শহরে যাত্রা করাটা নারীদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে সহজ। এই পুরুষরা এমনিতেই শহরে আসা-যাওয়া করে। আর এজন্যই প্রকল্পটি তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারেনি।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মুশফিক মোবারক অ্যাকশন এভিডেন্সের ওই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রকল্পটি তৈরিতে তার ভূমিকা ছিল। তিনি বলেন, এই প্রকল্পটির ব্যর্থতা এটা প্রমাণ করে যে, কোনো প্রকল্প যখন ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করে তখন তথ্য সংগ্রহ করা ও বিশ্লেষণ করা অব্যাহত রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তিনি এটাও বলেন যে, খুব সম্ভবত এই ব্যর্থতা থেকে সমপূর্ণ ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্তই নেয়া হবে। মোবারক বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো অব্যাহতিহীন ও টানা তথ্য সংগ্রহ ও এর বিশ্লেষণ বেশ ধীরগতির, ব্যয়বহুল ও কঠোর পরিশ্রমের কাজ। গবেষকরা যখন তথ্য আবিষ্কার করেন তখন অস্বস্তিকর তথ্যও বেরিয়ে আসে। এর চেয়ে প্রকল্পটি ভালো চলছে, এমনটা ভাবাই বেশি সহজ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status