বাংলারজমিন
বড়লেখায় স্ত্রীকে আগুনে ঝলসে দিলো স্বামী
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
১৩ জুন ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৬ পূর্বাহ্ন
স্বর্ণালংকার না দেয়ায় আছমিনা বেগম (২৫) নামে এক গৃহবধূর শরীর আগুনে ঝলসে দিয়েছে তার পাষণ্ড স্বামী। গত ৪ জুন ভোররাতে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুছেগুল গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার ওই নারী একই ইউনিয়নের জফরপুর গ্রামের ছমির উদ্দিনের মেয়ে। অভিযুক্ত স্বামী সাহেদ আহমদ মুছেগুল গ্রামের আনু মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার ওই নারীর বাবা বাদী হয়ে বড়লেখা থানায় মামলা করেছেন। আগুনে আছমিনার শরীরের অন্তত ৬০ ভাগ পুড়ে গেছে। মামলা ও নির্যাতিতার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের জফরপুর গ্রামের হতদরিদ্র ছমির উদ্দিন ৩ বছর পূর্বে মূছেগুল গ্রামের আনু মিয়ার ছেলে সাহেদ আহমদের সাথে মেয়ে আছমিনা বেগমের বিয়ে দেন। তাদের ২ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে প্রায়ই স্বামীর মারধরের শিকার হতেন আছমিনা। তবুও সংসার ধরে রাখার চেষ্টায় মুখ বুজে সব সহ্য করতেন তিনি। কিন্তু নির্যাতন বন্ধ হয়নি । ঘটনার কয়েকদিন আগে আছমিনার কানের স্বর্ণের অলংকার বিক্রি করার চেষ্টা করেন স্বামী সাহেদ। বিষয়টি বুঝতে পেরে আছমিনা ওগুলো বাবার বাড়িতে গিয়ে রেখে আসেন। গত ৪ জুন ভোররাতে আছমিনার কাছে স্বর্ণের অলংকার চায় সাহেদ। তখন আছমিনা বাবার বাড়িতে রেখে আসার কথা জানায়। এতে সাহেদ ক্ষুব্ধ হয়ে ঘরে থাকা আছমিনার সব কাপড় চোপড় জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আছমিনা বাধা দিতে গেলে শারীরিকভাবে আঘাত করে আগুনের মধ্যে চেপে ধরে রাখে। এতে আছমিনা বেগমের শরীরের বেশিরভাগ অংশই ঝলসে যায়। এরপর মুমূর্ষু অবস্থায় আছমিনাকে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেখে পাষণ্ড স্বামী সাহেদ আহমদ পালিয়ে যায়। জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে খবর পেয়ে আছমিনার বাবা-মা ও বোন বড়লেখা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মুমূর্ষু আছমিনাকে দেখতে পান। এ সময় চিকিৎসকরা আছমিনাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ওইদিন দুপুরেই আছমিনাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৫ দিন চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আছমিনা বেগমকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। বর্তমানে সে মুমূর্ষ অবস্থায় তার বাবার বাড়ি রয়েছে। খবর পেয়ে বড়লেখা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও নির্যাতিতা নারীর বাবার বাড়ির লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে। এ সময় পুলিশ নির্যাতিতাকে আইনী সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার আছমিনার বাবা বাদী হয়ে আছমিনার স্বামী ও শ্বাশুড়িকে আসামী করে মামলা করেন। মামলার বাদী ও আছমিনা বাবা ছমির উদ্দিন বলেন, ‘মাত্র ৫ দিন চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়েকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি গরিব মানুষ। মেয়েকে যে চিকিৎসা করাবো। এই সামর্থ নেই। বাড়িতে কষ্ট করছিল। মেয়ের উন্নত চিকিৎসা দরকার। উপজেলা চেয়ারম্যান ও পুলিশের সহযোগিতায় রাতে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে।’
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক। স্থানীয়ভাবে খবর পেয়েই একজন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) ঘটনাস্থলে পাঠাই। নির্যাতিতার পরিবারকে মামলা করতে বলি। পরে তার বাবা বাদী হয়ে দুজনের নামে এজাহার দিয়েছেন। এজাহারভুক্ত দুই আসামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পোড়া শরীর নিয়ে ৯ দিন ধরে অস্য যন্ত্রণায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সে। তাই মেয়েটির উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাহায্যে আমি নিজেই ঢাকা পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক। স্থানীয়ভাবে খবর পেয়েই একজন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) ঘটনাস্থলে পাঠাই। নির্যাতিতার পরিবারকে মামলা করতে বলি। পরে তার বাবা বাদী হয়ে দুজনের নামে এজাহার দিয়েছেন। এজাহারভুক্ত দুই আসামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পোড়া শরীর নিয়ে ৯ দিন ধরে অস্য যন্ত্রণায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সে। তাই মেয়েটির উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাহায্যে আমি নিজেই ঢাকা পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি।