ইংল্যান্ড থেকে
টেমস না দেখে যাবো কোথায়?
ইশতিয়াক পারভেজ, লন্ডন থেকে
২ জুন ২০১৯, রবিবার, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন
সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে শাসন করেছিলেন রাজা জেমস। সে সময় তিনি একবার কর্পোরেশন অব লন্ডন থেকে ২০,০০০ পাউন্ড দাবি করেছিলেন। কিন্তু লন্ডন শহরের মেয়র একটি পাউন্ডও দিবেন না। ক্ষিপ্ত রাজা বার্তা পাঠালেন- ‘আপনাকে ও আপনার শহরকে চিরতরে ধ্বংস করে দেব। আমার আইন আদালত, এমনকি প্রাসাদকে এবং আমার আইনসভাকে উইনচেস্টার নয়তো অক্সফোর্ডে স্থানান্তরিত করব। এবং ওয়েস্টমিনিস্টারকে জনশূন্য করে ফেলব। আপনার কী হবে ভেবে দেখুন!’ কিন্তু মেয়র একটুও না ঘাবড়ে বললেন- ‘লন্ডনের বণিকদের জন্য সব সময় সান্ত্বনা থাকবে হে মহামহিম রাজা! কারণ আপনি সব নিলেও আপনার সঙ্গে টেমস নদীকে নিয়ে যেতে পারবেন না।’ হ্যা, খ্রীস্টপূর্ব ৫৫ সালে জুলিয়াস সিজারের নাম দেয়া নদী টেমেসাস বা টেমসকে কেউ আজও নিয়ে যেতে পারেনি। ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ কাভার করতে এসে সেই টেমস না দেখে যাবো কোথায়? কেউ কেউ বলতে পারেন নদীমাতৃক দেশ থেকে এসে ‘একটি’ নদী দেখতে এত আগ্রহ কেন? কেনই হবে না? সেই ছোট্টবেলা থেকে এই নদীর কত গল্প শুনেছি। মনে হতো এ যেন কোন রূপকথারই অংশ! এবার তার পাড়ে দাঁড়িয়ে সত্যি মুগ্ধ হলাম। জানি, আমিও পারবো না টেমস নদী নিয়ে আসতে, শুধু স্মৃতি ছাড়া।
পেশাগত কারণে স্বপ্নের সেই টেমস নদীর সঙ্গে আমার দূরত্বটা এবার শেষ হয়েছে। ঠিক পাড় ঘেসে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ অনুভব করার চেষ্টা করেছি পড়ন্ত বিকেলটা। সবুজে ঘেরা লন্ডনের সুরম্য অট্টালিকাগুলো দু’পাশে সরিয়ে আপন মহিমাতে বয়ে চলছে এই নদী। কবিতা, আর গল্পে পড়া টেমসের সঙ্গে এই টেমসের যেন কোনো ফারাক নেই। পাঠকদের কিছু তথ্য জানাতে চাই। টেমস নদীর উৎপত্তি দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের কটসওল্ড গিরিশ্রেণির জলপ্রবাহ থেকে। এটি পূবদিকে ৩৫০ কিলোমিটার পথ বেঁকে যায়। এখন এর সঙ্গে অন্যান্য নদী এসে মিলিত হয়ে শেষ পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার প্রশস্ত মোহনার মধ্য দিয়ে উত্তর সাগরে গিয়ে মিশেছে। যুক্তরাজ্যে এত বড় নদী আর নেই তা বললে ভুল হবে। ওয়েলসের কার্ডিফে সেভেরন নদীর দৈর্ঘ্য ৩৫৪ কিলোমিটার। কিন্তু সেভেরন দৈর্ঘ্যে বড় হলেও টেমসের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কাছে একেবারেই নগণ্য।
পাঠক বিরক্ত হবেন না, এসব বইয়ের পাতায় আপনারা পাবেন, জানি। তবে কিছু কিছু বিষয় না বলে পারছি না। লন্ডনে রাজা-রানী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, এমনকি দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটক, বণিক সবাই দুঃখ অথবা মনের সুখ নিয়ে টেমসের পাড়ে আসবেই। তাই দুই পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য খাবারের দোকান, পাব, বিয়ার বার। এমনকি ছোট ছোট নৌকাতে নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বার। সকাল থেকে রাত টেমসের দু’ধারে শুধু হাসির ঝনঝানি। তার মাঝে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ হয়তো গোপনে ফেলছেন দীর্ঘশ্বাস। হয়তো সেখানেই বিসর্জন দিতে চাইছেন অনেক বছরের জমানো কোনো কষ্ট।
টেসম নদীর উপরে বেশ কয়েকটি ব্রিজ রয়েছে। বলে রাখা ভালো, নদীর উপর পাথুরে সেতু আর নৌপুলিশ- এই দুটির প্রথম সাক্ষীও কিন্তু এই টেমস নদী। ১২০৯ সালে ৩০ বছরব্যাপী টেমস নদীর ওপর পাথরের তৈরি এক সেতুর কাজ শেষ হয়েছিল। যেটা ইউরোপে প্রথম নির্মিত সেতু। অসাধারণ কাঠামোর ওপর দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও এমনকি একটা গির্জাও ছিল, সেটাতে দুটো টানাসেতু ছিল আর প্রতিরক্ষার জন্য এর দক্ষিণ পাড়ে ছিল টাওয়ার। তবে এখানে এক সময় ঘিঞ্জি অবস্থা সৃষ্টি হয়। নোঙ্গর করা জাহাজগুলোতে বেড়ে যায় চুরি। এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য লন্ডনে বিশ্বের প্রথম নদীপথে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল, যা আজও আছে। আমাদের দেশের মতো এই নদীতে যত্রতত্র কেউ পাড়ে নামতে পারেন না। আছে নদীর বুকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট স্থান থেকে পর্যটন জাহাজ। দুই পাড়ে নদীর ঘাট থেকে পর্যটকদের সেই জাহাজে চড়ার অপেক্ষায় দেখা গেলো। একটা সময় রাজা-রানীদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র ছিল এই নদী। যে কারণে এর পাশে তারা গড়ে তুলেছিলেন প্রাসাদ। সেই বড় বড় প্রাচীন শত বছরের প্রাসাদের সঙ্গে এখন টেমস নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে আধুনিক হোটেল, বাণিজ্যিক ভবন। তবে এর ঐতিহ্য মিলিয়ে যায়নি এক ফোঁটাও।
এখনো নদীর উপর সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে লন্ডন ব্রিজ যার আসল নাম টাওয়ার ব্রিজ। যার নিচ দিয়ে বড় জাহাজ গেলে তা দু’ভাগ হয়ে যায়। এছাড়াও ঢংঢং আওয়াজে নগরবাসীর ঘুম ভাঙাতে, কাজের সময় জানাতে আছে ‘বিগ বেন’ ঘড়ি। টেমসের উপর আছে ছোট-বড় অনেক সেতু। দুই ধারে আছে হাঁটার জন্য চওড়া রাস্তা। যেসব সড়কে এক সময় সদর্পে ঘোড়া হাঁকিয়ে বেড়িয়েছেন রাজা, রানী, রাজপুত্ররা। রানীর দেশের মন ভালো করে দেয়া নদীর পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়েছে এই ‘টেমস’ যদি সঙ্গে নিতে পারতাম! তাহলে বাংলাদেশেও কী আসতো এমন ‘সমৃদ্ধি?’
পেশাগত কারণে স্বপ্নের সেই টেমস নদীর সঙ্গে আমার দূরত্বটা এবার শেষ হয়েছে। ঠিক পাড় ঘেসে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ অনুভব করার চেষ্টা করেছি পড়ন্ত বিকেলটা। সবুজে ঘেরা লন্ডনের সুরম্য অট্টালিকাগুলো দু’পাশে সরিয়ে আপন মহিমাতে বয়ে চলছে এই নদী। কবিতা, আর গল্পে পড়া টেমসের সঙ্গে এই টেমসের যেন কোনো ফারাক নেই। পাঠকদের কিছু তথ্য জানাতে চাই। টেমস নদীর উৎপত্তি দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের কটসওল্ড গিরিশ্রেণির জলপ্রবাহ থেকে। এটি পূবদিকে ৩৫০ কিলোমিটার পথ বেঁকে যায়। এখন এর সঙ্গে অন্যান্য নদী এসে মিলিত হয়ে শেষ পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার প্রশস্ত মোহনার মধ্য দিয়ে উত্তর সাগরে গিয়ে মিশেছে। যুক্তরাজ্যে এত বড় নদী আর নেই তা বললে ভুল হবে। ওয়েলসের কার্ডিফে সেভেরন নদীর দৈর্ঘ্য ৩৫৪ কিলোমিটার। কিন্তু সেভেরন দৈর্ঘ্যে বড় হলেও টেমসের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কাছে একেবারেই নগণ্য।
পাঠক বিরক্ত হবেন না, এসব বইয়ের পাতায় আপনারা পাবেন, জানি। তবে কিছু কিছু বিষয় না বলে পারছি না। লন্ডনে রাজা-রানী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, এমনকি দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটক, বণিক সবাই দুঃখ অথবা মনের সুখ নিয়ে টেমসের পাড়ে আসবেই। তাই দুই পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য খাবারের দোকান, পাব, বিয়ার বার। এমনকি ছোট ছোট নৌকাতে নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বার। সকাল থেকে রাত টেমসের দু’ধারে শুধু হাসির ঝনঝানি। তার মাঝে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ হয়তো গোপনে ফেলছেন দীর্ঘশ্বাস। হয়তো সেখানেই বিসর্জন দিতে চাইছেন অনেক বছরের জমানো কোনো কষ্ট।
টেসম নদীর উপরে বেশ কয়েকটি ব্রিজ রয়েছে। বলে রাখা ভালো, নদীর উপর পাথুরে সেতু আর নৌপুলিশ- এই দুটির প্রথম সাক্ষীও কিন্তু এই টেমস নদী। ১২০৯ সালে ৩০ বছরব্যাপী টেমস নদীর ওপর পাথরের তৈরি এক সেতুর কাজ শেষ হয়েছিল। যেটা ইউরোপে প্রথম নির্মিত সেতু। অসাধারণ কাঠামোর ওপর দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও এমনকি একটা গির্জাও ছিল, সেটাতে দুটো টানাসেতু ছিল আর প্রতিরক্ষার জন্য এর দক্ষিণ পাড়ে ছিল টাওয়ার। তবে এখানে এক সময় ঘিঞ্জি অবস্থা সৃষ্টি হয়। নোঙ্গর করা জাহাজগুলোতে বেড়ে যায় চুরি। এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য লন্ডনে বিশ্বের প্রথম নদীপথে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল, যা আজও আছে। আমাদের দেশের মতো এই নদীতে যত্রতত্র কেউ পাড়ে নামতে পারেন না। আছে নদীর বুকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট স্থান থেকে পর্যটন জাহাজ। দুই পাড়ে নদীর ঘাট থেকে পর্যটকদের সেই জাহাজে চড়ার অপেক্ষায় দেখা গেলো। একটা সময় রাজা-রানীদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র ছিল এই নদী। যে কারণে এর পাশে তারা গড়ে তুলেছিলেন প্রাসাদ। সেই বড় বড় প্রাচীন শত বছরের প্রাসাদের সঙ্গে এখন টেমস নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে আধুনিক হোটেল, বাণিজ্যিক ভবন। তবে এর ঐতিহ্য মিলিয়ে যায়নি এক ফোঁটাও।
এখনো নদীর উপর সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে লন্ডন ব্রিজ যার আসল নাম টাওয়ার ব্রিজ। যার নিচ দিয়ে বড় জাহাজ গেলে তা দু’ভাগ হয়ে যায়। এছাড়াও ঢংঢং আওয়াজে নগরবাসীর ঘুম ভাঙাতে, কাজের সময় জানাতে আছে ‘বিগ বেন’ ঘড়ি। টেমসের উপর আছে ছোট-বড় অনেক সেতু। দুই ধারে আছে হাঁটার জন্য চওড়া রাস্তা। যেসব সড়কে এক সময় সদর্পে ঘোড়া হাঁকিয়ে বেড়িয়েছেন রাজা, রানী, রাজপুত্ররা। রানীর দেশের মন ভালো করে দেয়া নদীর পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়েছে এই ‘টেমস’ যদি সঙ্গে নিতে পারতাম! তাহলে বাংলাদেশেও কী আসতো এমন ‘সমৃদ্ধি?’