ইংল্যান্ড থেকে

ঐতিহ্যে আধুনিক ওভালে অপেক্ষায় বাংলাদেশ

ইশতিয়াক পারভেজ, লন্ডন থেকে

১ জুন ২০১৯, শনিবার, ১০:০০ পূর্বাহ্ন

লন্ডনের ঐতিহ্যের টাওয়ার ব্রিজ ধরেই যেতে হয় দ্য ওভাল স্টেডিয়ামে। কিছুটা দূরেই আছে হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে টেমস নদী। এই মাঠে একসময়  খেলা হতো ফুটবল ও রাগবি। ১৮৭০ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ এখানেই খেলেছিল ইংল্যান্ড। অষ্টাদশ শতকে ক্রিকেট ক্লাব সারে স্টেডিয়ামটি অধিগ্রহণ করে। এরপর থেকেই ফুটবলের গোলপোষ্ট উঠে এখানে শুরু হয় ২২ গজের লড়াই। বিশ্বের দ্বিতীয় ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম টেস্টটি দ্যা ওভালেই খেলেছিল ইংলিশরা। শুধু তাই নয় প্রথমবারের মতো ফ্লাড লাইটে ক্রিকেট খেলা হয় এখানেই। এক কথায় ঐতিহ্যের সঙ্গে এখানে  ছোঁয়া লাগে ক্রিকেটের আধুনিকতার। ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৯৯ সালের চারটি বিশ্বকাপের আসর বসে এখানেই। এই বিশ্বকাপে উদ্বোধনী ম্যাচসহ পাঁচটি  খেলা হবে ঐতিহ্যের ধারক ওভাল স্টেডিয়ামে। কাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই মাঠেই টাইগাররা ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের মিশন শুরু করবে। গতকাল থেকে তারা এখানে আনুষ্ঠানিক অনুশীলন শুরু করে। স্থানীয় সময় সকাল ১০ টায় এখানে অনুশীলনে আসে বাংলাদেশ দল। এরপর একটা পর্যন্ত ঘাম ঝরিয়ে ফিরে যায় টিম হোটেলে।
সকালে থেকেই ওভাল স্টেডিয়াম জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনুশীলনে ভীষণ ব্যস্ত বাংলাদেশ দল। একদিকে ব্যাটসম্যানরা অন্য দিকে বোলাররা। মাঠের এক কোণে ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে ব্যাটিং অনুশীলনে ব্যস্ত ছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। এছাড়াও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও লিটন দাসের দিকেও ব্যাটিং কোচের ছিল আলাদা মনোযোগ। কারণ লিটন রানে ফিরলেও এখনো ধারাবাহিক নয়। আর ২০১৫ বিশ্বকাপ ও ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নায়ক মাহমুদুল্লাহও ফর্মে নেই। সেই সঙ্গে তার কাঁধের ইনজুরিটাও ভোগাচ্ছে। দলের ইনজুরি নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। এর মধ্যে গতকাল অনুশীলনে দলের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম আঘাত পাওয়াতে তাকে নিয়েও বেড়েছে নতুন চিন্তা। সৌম্য সরকার ওভালে বেশ ভালভাবে নিজের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তার হাসি দেখেই তা অনুমান করা যায়। মুশফিকুর রহীম ছিলেন সব সময়ের মত অনুশীলনে মনোযোগী এক ছাত্রের মত।  
অন্যদিকে বোলারদের মধ্যে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে কঠিন কোনো অনুশীলন করতে দেখা গেল না। আগে থেকেই জানা কিছুটা চোটে আছেন এই তরুণ পেসার। ফিজিও থিয়ান চন্দ্রমোহনের সঙ্গে তাকে  ওভালের সবুজ ঘাসের মাঝে বেশ কয়েকটা চক্কর দিতে দেখা গেল। এরই মাঝে  কেমন আছে জানতে চাইলেই বড় একটি হাসি দিলেন। বললেন, ‘ভালো আছি। সব ঠিকঠাকই আছে।’ তবে সময়ই বলে দিবে কতটা ঠিক আছেন এই তরুণ পেসার। এছাড়াও বিশ্বকাপ দলে চমক হিসেবে সুযোগ পাওয়া আবু জায়েদ রাহীকে দেখা গেল বেশ ঘাম ঝরাতে। পেসার মোস্তাফিজুর রহমান বেশ কিছুক্ষণ নেটে বল হাতে সময় দিয়েছেন। এই পেসারের উপরই দলের অনেক কিছু নির্ভর করছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা অনুশীলনের ফাঁকে প্রধান কোচ স্টিভ রোডস, নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গে বেশ ব্যস্ত সময় কাটান আলোচনা করে। দীর্ঘক্ষণ তারা মাঠের মাঝে কথা বলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না এ যে রণ কৌশল নিয়ে আলোচনা। দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইংলিশদের কাছে হারলেও তারা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে সেটি সবারই জানা। অন্যদিকে সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ নিজেদের স্পিন আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বেশ ভালভাবেই। তবে প্রথম একাদশে দু’জনের খেলার সম্ভাবনা একেবারেই কম।
লন্ডনের কেনিংটনে অবস্থিত ওভাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামটি। ইংলিশদের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট ম্যাচগুলো এখানে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। শুধু ক্রিকেট কেন? যে কোনও খেলার সবচেয়ে বড় মাঠের স্বীকৃতি ইংল্যান্ডের দ্য ওভালের। দক্ষিণ লন্ডনের মাঠটি ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটের জনপ্রিয় ক্লাব সারের হোমগ্রাউন্ড হিসেবেও পরিচিত। ২৩ হাজার ৫০০ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই মাঠেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বন্দিদের আটকে রাখার পরিকল্পনা করে ব্রিটিশরা। এখানেই কাল বিশ্বকাপ যুদ্ধে নামবে বাংলাদেশ । এই মাঠে ২০০৫-এ প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলে টাইগাররা। এরপর ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই মাঠে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যায় মাশরফি বিন মুর্তজার দল। তবে ব্যাট হাতে এখানে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩০৫ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে ৮ উইকেটের বড় জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড। তবে এই মাঠে তৃতীয় খেলাটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। আর  শেষ পর্যন্ত সেই ভেসে যাওয়া ম্যাচে পাওয়া পয়েন্টের সুবাদেই সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ পায় টাইগাররা। যা এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের জন্য এক অনুপ্রেরণা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status