বাংলারজমিন

জমেছে গরিবের মার্কেট ফুটপাথ

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

১ জুন ২০১৯, শনিবার, ৯:৩০ পূর্বাহ্ন

কে না চায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদ উৎসব  করতে। ঈদের নতুন পোশাক প্রিয়জনের গায়ে পরিয়ে দিতে। কেনার সাধ্য হোক আর না হোক তবুও শেষ চেষ্টা সবাই করে ঘরের শিশুটির জন্য নতুন একটা পাঞ্জাবি একটা লাল টুপি কেনার। সেই ঈদ আর কিছু দিনের মধ্যেই আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। ঈদকে বরণ করতে নিজের বাহারি রঙে সাজাতে প্রস্তুত হচ্ছে মুসলিম সমাজ। শহরের মার্কেটগুলোতে ইতিমধ্যেই কেনা কাটার যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ধনী-গরিব সব শ্রেণির মানুষ এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছেন। দেশের সব প্রান্তের মতো উত্তর জনপদের প্রবেশদ্বার বগুড়াতেও বেশ জমে উঠেছে ঈদ মার্কেট। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত কেনা বেচায় মুখরিত হয়ে উঠেছে শহরের সবগুলো মার্কেট। নিউমার্কেট, আলতাব আলী মার্কেট, আলামীন কমপ্লেক্স, ছহির উদ্দিন মার্কেট, হকার্স মার্কেট এবং জলেশ্বরীতলার আভিজাত ফ্যাশান হাউজগুলোতে। এদিকে ঈদ মার্কেট করতে ক্রেতাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু। সময়ের সঙ্গে সামাজিকাতার পরিবর্তন হয়েছে। এখন নারীরা নিজের কেনাকাটা নিজেরাই পছন্দ করে কিনে থাকে। এজন্যই এখন মার্কেটগুলোয় নারীদের সংখ্যা বেশি। আভিজাত শ্রেণির নারী ক্রেতারা শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকার ব্রান্ডের শো-রুমগুলোতে কেনাকাটার জন্য আসে। জলেশ্বরীতলার ঠিকানা বুটিকের মালিক মাহবুবুর রহমান নিটল জানান, এবারের ঈদে নতুন অনেকগুলো কালেকশন এসেছে। এগুলোর দাম একটু বেশি হলেও জিনিস ভালো হওয়ায় ক্রেতারা কিনছে। অপর দিকে মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত ফ্যামেলির মানুষরা তাদের সাধ্যের মধ্যে ঈদের কেনাকাটার জন্য ফুটপাতকেই বেচ নিচ্ছে। কারণ ব্রান্ডের শো-রুমগুলোতে কেনা কাটার ক্ষমতা সব শ্রেণির মানুষের নেই। তাই মার্কেটগুলোর পাশাপাশি ফুটপাতে বসা খোলা আকাশের নিচের দোকানেও মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সকাল ৯টার মধ্যে বগুড়া রেলস্টশনে দুটি ট্রেন এসে থামে। একটি পশ্চিমের সান্তাহার অপরটি পূবের বোনারপাড়া থেকে আসে। এই ট্রেনগুলো থেকে প্রতিদিন বগুড়ার পার্শ্ববর্তী নওগাঁ, গাইবান্ধ এবং বগুড়ার আরো ৬ জেলার মানুষ শহরে কেনা কাটার জন্য আসে। এছাড়া বাস যোগে জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা থেকেও এখানে মার্কেট করার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসে। সকাল ১০টার মধ্যেই মার্কেটগুলো ক্রেতা বিক্রেতায় সরব হয়ে ওঠে। শ্রেণী ভেদে এইসব ক্রেতারা বিভিন্ন মার্কেটে কেনাকাটা করছে। বেচাকেনার খোঁজখবর সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মার্কেটগুলোয় ক্রেতা হিসেবে বেশি ভির করছে নারী ও শিশুরা। এ দোকান থেকে সে দোকান ঘুরে ঘুরে কিনছে তাদের পছন্দের পোশাক। ফ্যাশান হাউজগুলোর তথ্যমতে, এবার তরুণীদের চাহিদা অনুযায়ী সিল্ক, হাফ সিল্ক, মুসলিম শাড়ি, থ্রি পিস, লেগিংস, টপস, কুরতা, লেডিস পাঞ্জাবি, কামিজ পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো পোশাকের নতুন নতুন ডিজাইন, কালার এবং কাপড়ের ভিন্ন কোয়ালিটি এসেছে এবার ঈদে। তরুণরা নর্মাল শার্ট প্যান্ট বেশি কিনছে। চায়না টি শার্টেরও কদর আছে। পাশাপাশি জিন্স পেন্ট, বিভিন্ন ধরনের পাঞ্জাবির চাহিদা আছে তরুণদের। বিভিন্ন শপিংমল ও বিপনিবিতানগুলো সরজমিনে দেখা গেছে, মেয়েদের ও শিশুদের পোশাকের কদরটা অনেক  বেশি । এই ঈদে বাজারে আসা শাড়িগুলোর মধ্যে মণিপুরি,  কাটিং জর্জেট, সুতি জামদানি, লেহেঙ্গা, ডেমরা জামদানি, সুতি, টাঙ্গাইল, কাতান, ঝটকা সিল্ক, চেন্নাই সিল্ক, কিরণমালা, মোম্বাই কাতানের চাহিদা বেশি। নিউ মার্কেটের শোরুমগুলোয় শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। সুতি ও টাঙ্গাইল শাড়ির ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শোরুমে ৩৫০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও জলেশ্বরীতলার অভিজাত বিপণিবিতানগুলোয় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা মূল্যের সাথী কাতান, ১০ হাজার টাকায় সিল্কের বিভিন্ন ধরনের শাড়ি কিনছে ক্রেতারা। ফ্যাশানের শীর্ষে রয়েছে জর্জেট ও নেটের তৈরি ফ্লোর টাচ জামা। এছাড়া বাজারে আসা আনারকলি, লংকামিজ, পালাজ্জো, ডিভাইডার, চাপা সালোয়ার, টাইস, স্ট্রেট প্যান্ট ও দেশি-বিদেশি অনেক থ্রি-পিস অনেকটা বাজার দখল করে আছে। আর এসব থ্রি-পিস কাপড় ও ডিজাইন ভেদে বিক্রি  হচ্ছে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা দরে। নিউ মার্কেটে আসা এক ক্রেতা মুন্নি রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল কাপড়ের দাম তুলনামলূকভাবে বেশি। জলেশ্বরীতলার এক অভিজাত বিপণিবিতনে কথা হলো কলেজপড়ুয়া তামান্নার সঙ্গে তিনি বলেন, পছন্দমতো পোশাক আছে, একটা লংকামিজ কিনলাম কিন্তু দামটা একটু বেশি। ঈদে শিশুদের কাপরের চাহিদা অনেক বেশি। ছেলেদের, শার্ট ১ হাজার ২৯০ থেকে ২ হাজার ৮৫০, প্যান্ট ১ হাজার ৩৯০ থেকে ৩ হাজার ৫৫০, পাঞ্জাবি ১ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বগুড়া রেলস্টেশনের পূর্ব পাশে লাইনের ওপর হঠাৎ মার্কেটের বেচাকেনা এখন তুঙ্গে উঠেছে। এখানকার থ্রি-পিস ব্যবসায়ী শ্রাবণ এবং কাওছার জানান, দাম কম হওয়ায় এই মার্কেটে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তরা ভিড় করছে। কম দামে তারা এই ফুটপাতের দোকানগুলোতেই চাহিদা মেটাচ্ছে। ঈদ যতই কাছে আসছে ততই শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। চলছে মধ্যরাত অবধি কেনাকাটা। ফলে দোকানিরা ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছে পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status