শেষের পাতা

রঙ লাগিয়ে ঈদে সড়কে নামছে লক্করঝক্কড় বাস

মারুফ কিবরিয়া

২৭ মে ২০১৯, সোমবার, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন

ঈদকে সামনে রেখে নতুন রঙ লাগিয়ে সড়কে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে লক্করঝক্কড় বাস। ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাসের মেরামত কাজ চলছে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্কশপে । ঈদে নগরবাসীর বেশিরভাগই ছুটে যান আপন ঠিকানায়। ঘরমুখো মানুষে ঈদযাত্রায় ব্যস্ততাও থাকে সড়ক মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের। অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদ যাত্রায় বেশি চাপ থাকে বলে বাড়তি বাহনেরও প্রয়োজন হয়। এই সুযোগে অনেক বাস কোম্পানি পুরনো-ভাঙাচুরা বাস সড়কে নামিয়ে দেয়। ঈদযাত্রার আগেই সেসব বাসে নতুন রঙ দিয়ে সাজিয়ে নেয়ার কাজে ব্যস্ত এখন কোম্পানির মালিকরা। সরজমিন নগরীর কয়েকটি ওয়ার্কশপ ঘুরে পুরনো বাসগুলোর ঘষা-মাজার চিত্র চোখে পড়েছে।

ঈদকে সামনে রেখে লক্কড়ঝক্কড় দূরপাল্লার সড়ক পরিবহনের গাড়িগুলোকে নতুন রঙ দিয়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। প্রশাসনের নজর এড়াতে কৌশল হিসেবেই মেরামত ও রঙ তুলির এই আঁচড় দেয়া হচ্ছে বলে জানান ওয়ার্কশপের মিস্ত্রিরা। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী- ডেমরা এলাকা ছাড়াও মাতুয়াইল, কাজলা, জুরাইন, বাবুবাজার, কেরানীগঞ্জ এলাকার ওয়ার্কশপে পুরনো বাস মেরামতের কাজ চলছে। বিশেষ যাত্রাবাড়ীর কাজলা, মাতুয়াইল এলাকার প্রতিটি গ্যারেজে ঈদকে সামনে রেখে শ্রমিকরা বিরামহীন কাজ করছেন। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরনো বাসে নতুন সিট লাগানো, রঙ করা, জানালা মেরামতসহ নানা কাজ করে দিতে হচ্ছে। বাস মালিকরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি বাস যায়। চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল।

ঈদের আগের দু-তিন দিন এবং ঈদের দিন এসব লোকাল বাস দূরপাল্লার রুটে নামানো হয়। জানা যায়, ঈদের আগের দিন বেশ কিছু বাস রিজার্ভ বাস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আসার সময় যাত্রী পাওয়া যায় না বলে যাওয়ার সময় বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-চাঁদপুর, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-ফরিদপুর, ঢাকা-মানিকগঞ্জ ও ঢাকা-নরসিংদীর মতো কাছাকাছি রুটে চালানোর জন্য রাজধানীর ভেতর চলাচলকারী ভাঙাচুরা বাসগুলো নামানো হবে। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব গাড়ি শুধু দুর্ঘটনারই কারণ নয়, ঈদের ব্যস্ত মহাসড়কে বিকল হয়ে দুঃসহ দুর্ভোগের সৃষ্টি করে।

সরজমিনে দেখা যায়, মাতুয়াইলের শিকদার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ওয়ার্কশপে বেশ কয়েকটি বাস রঙ লাগানোর কাজ চলছে। এখানে হিমাচল পরিবহনের একটি বাসের কাজ চলছিল। ওয়ার্কশপের কর্মচারি মো. সালমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, দুদিন আগে বাসটি দিয়ে গেছে। ঈদের পাঁচদিন আগে ডেলিভারি দিতে হবে। ভেতরে ইঞ্জিন ভালো হলেও বাসের বাইরের অবস্থা খুব একটা ভালো না। তাই রঙ লাগনোর কাজ চালানো হচ্ছে। সালমান বলেন,আমাগো মালিকের পাঁচটা ওয়ার্কশপ। একেকটাতে ৪ থেকে ৫টা করে বাস রেখে কাজ করার ব্যবস্থা আছে। এখন হিমাচল বাস ছাড়া এখানে তিশা কোম্পানির একটা বাসের কাজ করছি। আরেকটি ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা যায়, আসছে ঈদে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে যাত্রী বহনের জন্য রাজধানীতে চলাচল করা সুপ্রভাত কোম্পানির একটি বাসে রঙ করা হচ্ছে। শ্রমিক রবিন জানান, আমাদের এখানে তো শুধু কাজ করতে নিয়ে আসা হয়। তবে যতদূর জানি বাসটি ঈদে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে পাঠানো হবে। এজন্যই খুব তাড়াতাড়ি কাজটি করতে হচ্ছে । পাশেই আরেকটি ওয়ার্কশপে চলছে পুরনো একটি বাসের বডি লাগানোর কাজ। এই ওয়ার্কশপের শ্রমিক রায়হান বলেন, ঈদে কুমিল্লার রুটে চলবে। এজন্য নতুন বডি লাগানো হচ্ছে। ২৭ রমজানের মধ্যে যত বাস আছে সব ডেলিভারি দিতে হবে। এম এম ট্রেডার্স নামের একটি ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীতে চলাচলকারী রাইদা ও দেওয়ান বাসের রংয়ের কাজ চলছে।

বাস দুটি রাজধানীতে চললেও সেখানে ঈদের সময় মহাসড়কে যাত্রী আনা নেয়ার জন্যই প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই ওয়ার্কশপের কর্মচারী আব্দুল মালেক বলেন, ঈদের সময় তো সবাই একই কাজ করে।  বাসের অবস্থা মোটামুটি ভালো হলেই ঈদে যাত্রীদের নিয়ে চলাচল করে। এই দুইটা বাসের অবস্থা একেবারে খারাপ না। কয়েকটা সিট নষ্ট হয়ে গেছে। আর রঙ লাগানোর কাজ করতে হবে। বাসের ড্রাইভার বলে গেছে ঈদের তিন দিন আগে লাগবে। এদিকে জুরাইনের আরেকটি ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের আগে মহাসড়কে নামানোর জন্য কয়েকটি কোম্পানির বাস একসঙ্গে মেরামতের কাজ চালানো হচ্ছে। ওয়ার্কশপের মালিক ফারুক মিয়া বলেন, সিলেট লাইনের দুইটা বাসের অর্ডার পাইছি। বাসগুলোর কাজ করতে হবে। এছাড়া জোনাকি, মান্নান পরিবহন, তূর্নাসহ আরো একটি বাস আমার এখানে কাজ চলছে। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে। প্রতিবারই পুরানা বাসগুলো দিয়ে যায়। ঈদের আগে আগে ঠিক করে দিতে হয়।      
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status