শেষের পাতা

ওসির বিরুদ্ধে স্মারকলিপি

মামলার আগেই গ্রেপ্তার, শাহপরাণে তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

২৭ মে ২০১৯, সোমবার, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

‘রাত ১১টার দিকে তার হাতের মোবাইল ফোন নিয়ে বললেন- ‘নেপুর ভাই কিছু করার নেই। আপনাকে আমি গ্রেপ্তার করলাম।’-সিলেটের শাহপরাণ থানার ওসি আক্তার হোসেন এ কথা বলে সালিশ ব্যক্তিত্ব ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা নেপুরকে গ্রেপ্তার করেন বলে উপ-পুলিশ কমিশনারকে দেয়া স্মারকলিপিতে অভিযোগ করেছেন এ ঘটনার বাদী-বিবাদীর স্বজন ইলিয়াস মিয়া। তিনি দাবি করেন ওসি গ্রেপ্তার করেন    রাত ১১টায়। অথচ তিনি রাত আড়াইটায় বাদীকে এনে মামলা করিয়ে ওই মামলায় জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এ কারণে সিলেটের বহুল পরিচিত ওসি আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ খাদিমপাড়ার মানুষ। ঘটনা জমি সংক্রান্ত। অথচ ওসি নারী নির্যাতন মামলায় দায়ের করে সালিশি ব্যক্তিকে হয়রানি করছেন বলে স্মারকলিপিতে তিনি জানান। মামলার বাদী রাছনা বেগম হচ্ছেন নারী নির্যাতন মামলার আসামি নেপুর মিয়ার ভাতিজি। এই মামলার পর থেকে খাদিমপাড়া এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রায় প্রতিদিনই ওসি আক্তারের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করছে এলাকাবাসী। ওসির অপসারণ দাবিতে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন।

শাহপরাণ থানার খাদিমপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বিলাল জানিয়েছেন, বয়োবৃদ্ধ নেতা নেপুর মিয়াকে বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার এবং পরবর্তীতে মামলা রেকর্ড করে নিজেই আইনের প্রতি অসম্মান  দেখিয়েছেন। তিনি জমি ব্যবসা সহ নানা ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায় এখানে ওসি থাকার নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছেন। এখন তার কারণেই গোটা উপজেলায় অশান্তি বিরাজ করছে। পাড়ায় পাড়ায়, মামলা-পাল্টা মামলা দায়ের করে ওসি শাহপরাণ এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করেছেন। গতকাল সিলেটের উপ-পুলিশ কমিশনারের কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়ে দেয়া স্মারকলিপিতে ইলিয়াস মিয়া উল্লেখ করেন ‘সালিশ ব্যক্তিত্ব আজমল আলী নেপুর শাহপরাণ থানায় স্ব-ইচ্ছায় রাত ৯টায় গেলে ওসি তাকে বসিয়ে রেখে উভয় পক্ষকে আপসে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে বলে আশ্বাস দিলে রাত ১১টার দিকে তার হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে বললেন নেপুর ভাই কিছু করার নেই। আপনাকে আমি গ্রেপ্তার করলাম।

এই ঘটনা শুনে তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা বিষয়টি তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় ও সালিশ ব্যক্তিত্ব হওয়ায় সালিশ নেতৃবৃন্দ ও দলীয় নেতৃবৃন্দ ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বললেও তিনি জানান তিনি এজাহারভুক্ত আসামি। অথচ রাত আড়াইটায় বাদিনীকে দিয়ে থানায় এজাহার পেশ করিয়ে বাদিনীর চাচা শ্বশুর ও আমার চাচা আজমল আলী নেপুর সাহেবকে আটক করে পরদিন জেল হাজতে প্রেরণ করেন।’ তিনি বলেন, ‘বাদিনী পারিবারিক একটি রাস্তার বিরোধ ধরে উল্লিখিত মিথ্যা মামলা দায়ের করে পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করছেন। এলাকাবাসী মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সিলেট শাহপরাণ (রহ.) মাজার গেইটে মানববন্ধন কর্মসূচি করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গত ২৩শে মে বাদিনীর ও আমাদের গ্রামের সম্মুখে বাজারে মুরাদপুরের শত শত লোক মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে এবং বাদিনীর হাত থেকে ও মামলা থেকে বর্ণিত মামলার আসামি ইলিয়াস মিয়া ওরফে বতাই মিয়া, রুবেল মিয়া, হোসেন মিয়া, তুরুত মিয়া, সালিশ ব্যক্তিত্ব এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুরুব্বি আজমল আলী নেপুর সহ সকলের ওপর থেকে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ও শাহপরাণ থানার বিতর্কিত ওসি আক্তার হোসেনকে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন এলাকাবাসী। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা সাজিয়ে পূর্বের ন্যায় সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য মামলাবাজ রাছনা বেগম ভূমিখেকোদের কু-পরামর্শে মামলা দায়ের করেছেন।

বাদিনী তার এজাহারে যেসব ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন এবং সংবাদ সম্মেলনে ফের ঘটনার বর্ণনার কোনো মিল নেই। ওই ঘটনার প্রতিবাদমুখর হওয়ায় আমার দোকানপাট ও জমিজমা ভূমিখেকোদের হাত থেকে রক্ষা পায়। বাদিনী ও তার সহযোগীরা নিজের হাতে স্থানীয় ফার্মেসিতে ব্যান্ডেজ করিয়ে আবেগ সৃষ্টি করে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রভাবিত করে উক্ত মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা দিয়ে বিষয়টি সরজমিন তদন্ত করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে। এদিকে রাছনা বেগম সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেছেন, তার জমি দখলে নিতে একটি পক্ষ হামলা চালিয়েছে। ঘরে গিয়ে তাকে মারধর করেছে। এ ঘটনায় তিনি মামলা করেছেন। পরে পুলিশ কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। এদিকে গত শুক্রবার সিলেট সফরে এসেছিলেন সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। নেপুর মিয়ার বিরুদ্ধে ওসি শাহপরাণের অমানবিক আচরণের বিষয়টি তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা নেপুর মিয়া থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন বলে জানান এলাকার মানুষ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status