শেষের পাতা

ইতালিতে প্রদর্শিত হলো ড. ইউনূসের জীবনীভিত্তিক অপেরা

মানবজমিন ডেস্ক

২৭ মে ২০১৯, সোমবার, ১০:২০ পূর্বাহ্ন

নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ইতালির ফানো শহরে ‘২৭ ডলার’ নামের একটি ভিন্নধর্মী অপেরার প্রিমিয়ার শো-তে যোগ দেন ২০শে মে। অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত টুরিস্ট নগরী ফানোর ‘তেয়াত্রো দেল্লা ফরচুনা’য় (থিয়েটার অব লাক) বিপুলসংখ্যক দর্শকের উপস্থিতিতে প্রদর্শিত হয় অপেরাটি।

উরবিনো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর প্রফেসর ভিলবার্তো স্টচ্চি-র বিশেষ আমন্ত্রণে প্রফেসর ইউনূস এই অপেরা শো-তে যোগ দেন। অপেরা ‘২৭ ডলার’-এর প্রযোজক ইতালিয়ান ন্যাশনাল সিঙ্গারস এসোসিয়েশন। এতে সহায়তা দিয়েছে উরবিনো বিশ্ববিদ্যালয়, ‘কার্লো বো’, ফানো মিউনিসিপ্যালিটি, তেয়াত্রো দেল্লা ফরচুনা ফাউন্ডেশন ও ইমাজেম এসআরএল। প্রায় আট বছরের প্রস্তুতি শেষে অপেরাটি মঞ্চায়িত হয়েছে। প্রফেসর ইউনূসের জীবনী এবং দরিদ্র মহিলাদের নিকট আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে তাঁর সংগ্রামের কাহিনী বিধৃত হয়েছে এই অপেরায়।

১৯৯৭ সালে প্রকাশিত প্রফেসর ইউনূসের গ্রন্থ 'Banker to the Poor'-এ অনুপ্রাণিত হয়ে অপেরাটি তৈরি হয়। এর রচয়িতা পাওলা সামোজ্জিয়া ও পরিচালক আন্দ্রিয়া মিরো ও কার্লো মাগরি। অপেরাটি উপস্থাপন করেন ইতালিয়ান ন্যাশনাল সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাম্বাসেডর ও ইউনিভার্সিটি অব উরবিনোর আট অ্যান্ড কালচারাল প্রজেক্টের শিল্প নির্দেশক সোপ্রানো ফিলিসিয়া বনগিওভান্নি। মূল অভিনয় শিল্পী ছিলেন সোপ্রানো ফিলিসিয়া বনগিওভান্নি এবং টেনর ক্রিশ্চিয়ানো ক্রেমন্নিনি।

সোপ্রানো গ্রামীণ ব্যাংকের নারী ঋণগ্রহীতাদের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং টেনর প্রফেসর ইউনূসের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এটি ছিল একটি পুরুষ শাসিত পৃথিবীতে নারীদের সংগ্রামের ও ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র মুক্তির সফল প্রচেষ্টার একটি শৈল্পিক উপস্থাপনা। অপেরাটি তার অনবদ্য ধ্বনি, সুর ও ঐক্যতানের মাধ্যমে সে সময়কার নারীদের অসহায়ত্ব তুলে ধরে। অপেরাটি শুরু হয় হস্তশিল্পে নিয়োজিত কয়েকজন দরিদ্র নারী মহাজনদের নিকট মাত্র ২৭ ডলার ঋণ থেকে মুক্ত হয়ে কীভাবে নিজেদের জীবনকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত করতে সক্ষম হয় তার কাহিনী দিয়ে।

‘২৭ ডলার’ অপেরাটিতে তুলে ধরা হয়েছে অর্থায়নের জগতে দরিদ্রদের প্রবেশ তাদের জন্য কী অপরিসীম সুযোগ তৈরি করে এবং কীভাবে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি ও আর্থিক শিক্ষার মধ্যদিয়ে একটি মূল্যবোধভিত্তিক অর্থনৈতিক সংস্কৃতি ও টেকসই সমাজ গড়ে ওঠে- যেখানে ব্যক্তি মানুষ একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।

শো শেষে সাংবাদিকরা প্রফেসর ইউনূসের সাক্ষাৎকার নিতে এলে তিনি বলেন, ‘কাহিনীটি যেভাবে চিত্রায়ন করা হয়েছে তাতে আমি অভিভূত। অপেরা শিল্পীদের অসাধারণ দক্ষতা শোটিকে একটি শক্তিশালী কাহিনীতে পরিণত করেছে। কাহিনীর নারীদের দুঃখ-দুর্দশার পাশাপাশি সমাজে আত্ম-প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সংগ্রাম অপেরাটির প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ্য করে তুলেছে।’
অপেরাটি দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন উরবিনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, ইতালির বিশিষ্ট অপেরা ব্যক্তিত্বগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।
প্রফেসর ইউনূস উরবিনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রায় ১৫,০০০ ছাত্র এখানে অধ্যয়ন করে। এরপর প্রফেসর ইউনূস এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত একটি ‘ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
ওই দিন অপরাহ্ণে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একটি আড়ম্বরপূর্ণ ও আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূসকে বিশ্ব ব্যাপী মানবতার কল্যাণে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বোচ্চ সম্মাননা  ‘রেক্টর্স সীল’ প্রদান করা হয়।
২১শে মে রোমে ফিরে এসে প্রফেসর ইউনূস বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন। জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক হোসে গ্রাৎজিয়ানো দ্য সিলভা। তার বক্তব্যে বাংলাদেশের নোবেল জয়ী ক্ষুধা ও বিরোধের সাথে যুক্ত বিভিন্ন ইস্যু বিষয়ে তাদের চিন্তাধারা পুনর্বিবেচেনা করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানান যাতে সামাজিক সংহতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের মানুষদেরকে বিশেষ করে তরুণদের উদ্যোক্তায় পরিণত করা সম্ভব হয়।

‘খাদ্য নিরাপত্তা ও শান্তি বিষয়ক খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ীদের মৈত্রীর কাজের অগ্রগতি মূল্যায়ন ও মনিটর করতে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালকের আমন্ত্রণে প্রফেসর ইউনূস সংস্থাটির সদর দপ্তরে আসেন। প্রফেসর ইউনূস এই সংগঠনের দুজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যর একজন। সংঘাত ও ক্ষুধার দুষ্ট চক্র মোকাবিলায় ২০১৬ সালে ১২ জন নোবেল বিজয়ীকে নিয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘আমরা যদি ভিন্নভাবে চিন্তা না করি, ভিন্নভাবে কাজ না করি- তাহলে দারিদ্র, ক্ষুধা, জলবায়ু বিপর্যয় ও সংঘাত কখনোই দুর করা সম্ভব হবে না।’

এই সংগঠনে আরো যে নোবেল লরিয়েটগণ রয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন ইয়েমেনের নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী তাওয়াক্কুল কারমান, ইরাকী ইয়াজিদি মানবাধিকার কর্মী নাদিয়া মুরাদ যিনি ধর্ষণকে যুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য ২০১৮ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন এবং কলম্বিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস যাকে নিজ দেশের ৫০ বছরের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ অবসানের জন্য ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।

রোমে অবস্থানকালে প্রফেসর ইউনূস ইতালিয়ান পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা ও ইতালীর ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক নিকোলা জিনগারেত্তির সাথে সাক্ষাৎ করেন। দারিদ্র্য ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এবং বেকারদেরকে উদ্যোক্তায় পরিণত করতে প্রফেসর ইউনূসের তত্ত্ব ও তার প্রয়োগ নিয়ে তারা দীর্ঘ আলোচনা করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status