এক্সক্লুসিভ

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি ‘যক্ষ্মা রোগী’ ভাইরাল!

মালয়েশিয়া সংবাদদাতা

২৬ মে ২০১৯, রবিবার, ৯:৪২ পূর্বাহ্ন

মালয়েশিয়ার অন্যতম প্রদেশ পিলাকের রাজধানী আইপোতে সামাজিক যোগাযোগ মিডিয়ায় এক বাংলাদেশি টিবি আক্রান্তের কথিত পলায়ন নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এটি এতটাই ভাইরাল হয়েছে যে, স্টেট হেলথ কনজিউমার অ্যাফেয়ার্স সিভিল সোসাইটি ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন এন্ড হিউম্যান রিসোর্স কমিটিকে রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন ডাকতে হয়েছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে।

রাজধানী আইপোতে গত ২৩শে মে ওই কমিটির চেয়ারম্যান মি. শ্রীনিবাসন বলেন, এটি ফেইক নিউজ। সমপ্রতি হোয়াটসঅ্যাপে একটি বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। তাতে বলা হয়, একজন বাংলাদেশি শ্রমিক অত্যন্ত ছোঁয়াচে ক্রনিক টিউবারকিউলোসিস (যক্ষ্মা) রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। খবর রটে যে, চিকিৎসাধীন থাকা বাংলাদেশি মো. জয়াল (জয়নাল) হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছেন। আমরা তদন্ত করে দেখেছি যে, এ খবরটি ভুয়া।
এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলর শ্রীনিবাসন আরো ঘোষণা করেন, হাসপাতালগুলোতে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, ওই নামে কোনো বাংলাদেশি রোগী ভর্তি ছিল না। স্টেট সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ প্রেস কনফারেন্সে তিনি বলেন, কিন্তু স্থানীয়দের মধ্যে এই খবর আতঙ্ক ছড়ায় যে, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ বলেছে, বাংলাদেশি শ্রমিক মো. জয়াল সহজে অত্যন্ত সংক্রমণ ঘটে এমন এক ধরনের বিরল যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত। হাসপাতালের একজন রোগী তার ওই পলায়ন প্রত্যক্ষ করেন। কিন্তু তদন্তে দেখা গেছে টিবিতে আক্রান্ত এক ব্যক্তি তার এক বন্ধুর কাছে থাকতে গিয়েছিলেন।

ওই বার্তায় বলা হয়, হাসপাতালের স্টাফরা বলেছেন, কথিত ওই বাংলাদেশির টিবি খুবই খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর সেটা ১৮+, যা ডাক্তারি পরিভাষায় অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং সংক্রামক। তার কাছে যেই যাবে, সেই লোকই আক্রান্ত হতে পারে।

শ্রীনিবাসন সংবাদ সম্মেলনে তথ্য দেন, ২৩শে মে পর্যন্ত পেরাকের আশেপাশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৬৩৫ জন যক্ষ্মা রোগী নিবন্ধিত হয়েছেন। এর মধ্যে ২২ জন বিদেশি। আক্রান্ত বিদেশিদের মধ্যে শুধু একজন বাংলাদেশি। বাকিদের মধ্যে ১৩ জন ইন্দোনেশীয়। তিনজন ভিয়েতনামি, নেপাল ও মিয়ানমারের দু’জন করে। এছাড়া রয়েছেন একজন ভারতীয়।
শ্রীনিবাসন বলেন, পেরাকের যক্ষ্মা রোগীদের প্রায় ৮০ ভাগই লাংটিবি। এই আক্রান্তদের হাঁচি-কাশি যদি কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে, তাহলে তিনি আক্রান্ত হতে পারেন। তিনি বলেছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই অন্যদের থেকে আলাদা রাখতে হবে। তার পূর্ণ চিকিৎসার দরকার হবে। আর যদি তা করতে কেউ ব্যর্থ হয় তাহলে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
২৩শে মে মালয়েশিয়ার দি সান ডেইলির এক খবরে বলা হয়েছিল, মো. জয়ালের স্থানীয় চাকরিদাতা দাবি করেন যে, তাদের বাংলাদেশি টিবি আক্রান্ত কর্মী জেলাপাংয়ের হেলথ ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর তাকে আইপো জেনারেল হসপিটালে স্থানান্তর করা হয়। গত মঙ্গলবার রাতে কথিত মতে তিনি পালিয়ে যান। এ সংক্রান্ত খবরের সঙ্গে কথিত জয়ালের বাংলাদেশি পাসপোর্টের ছবিও দেয়া হয়েছিল।
স্থানীয় মিডিয়ায় এ নিয়ে একটা হৈচৈ পড়ে গেলে কর্তৃপক্ষ দ্রুত তদন্তের উদ্যোগ নেয়। পেরাকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবস্থান কম নয়। সেখানে বাংলাদেশ সরকার নিয়োজিত অনারারি কনসাল জেনারেল শেখ ইসমাইল আলাউদ্দিন দি সান ডেইলিকে বলেছেন, আক্রান্ত বাংলাদেশির পলায়নের খবর তার জানা নেই। ওই খবরে বলা হয় যক্ষ্মা বায়ুুবাহিত একটি রোগ। সাধারণভাবে মালয়েশিয়ায় যক্ষ্মার প্রকোপ অনেক আগে থেকেই বেশি। তবে সামপ্রতিক বছরগুলোতে নতুন উপসর্গ নিয়ে এটির প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ বলেছেন, বিশেষ করে সামপ্রতিক বছরগুলোতে প্রবাসী শ্রমিকদের আগমনের ফলে এর প্রকোপ আরো বেড়ে গেছে। যারা অবৈধভাবে আসছেন তাদের মাধ্যমে এই রোগ ছড়াচ্ছে বেশি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status