বাংলারজমিন
অসহায় সেই গৃহবধূর পাশে মানবিক মানুষ
চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
২৬ মে ২০১৯, রবিবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন
চুনারুঘাটের অসহায় সেই গৃহবধূর পাশে দাঁড়িয়েছেন বেশ কয়েকজন মানবিক মানুষ। তারা গৃহবধূ জেসমিনকে পুনর্বাসনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ২৪শে মে ‘সন্তানদের মুখে খাবার দিতেই পথে নেমেছি’ শিরোনামে মানবজমিনে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তারপর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চুনারুঘাট থানার ওসি কেএম আজমিরুজ্জামান জেসমিনের খবরাখবর নেন। তিনি বলেছেন, জেসমিনের বসতঘর নির্মাণসহ দোকানের ব্যবস্থা করে দেবেন। এ ছাড়াও তিনি বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর নজরে আনারও আশ্বাস দেন। অপরদিকে আহম্মদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আবেদ হাসনাত চৌধুরী সনজু, জাহাঙ্গীর ট্রাভেলসের কর্ণধার, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম, ওষুধ ব্যবসায়ী আলমগীর, লিটন জমাদার, দুলাল মিয়াসহ বহু হৃদয়বান ব্যক্তি জেসমিন ও তার ৩ সন্তানের জন্য সহায়তা প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিদেশ থেকেও অনেকে ফোন করে জেসমিনের খবরাখবর নিয়েছেন। উপজেলার আহম্মাবাদ ইউনিয়নের গেড়ারুক গ্রামের গৃহবধূ জেসমিন ও তার অবুঝ ৩ সন্তানকে রেখে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় স্বামী সজল হক। বিয়ের পরের বছরই প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয় ইয়াসিন। বিবাহিত জীবনের ৯ বছরের মাঝে জেসমিন ৩ সন্তানের মা হয়ে যান। প্রতিবন্ধী ইয়াসিনের জন্ম নেয়াটাকে স্বামী সজল মেনে না নিয়ে সে বাড়ি থেকে চলে যায়। জেসমিন প্রতিবন্ধী ইয়াসিন (৮), জিহান (৪) এবং দেড় বছরের নিশু কন্যাকে নিয়ে বিপাকে পড়েন। প্রথমে এ বাড়ি ও বাড়ি গিয়ে ঝি- এর কাজ করে ৩ সন্তানের ভরণ পোষণ চালানোর চেষ্টা চালান। এতে সন্তানের মুখের খাবার না জুটায় প্রতিবন্ধী ইয়াসিনকে বাজারে তুলতে বাধ্য হন তিনি। সেই হতভাগীর বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ গ্রামে। আনোয়ার নামের এক ঘটক তাকে ১৩ বছর বয়সে বিয়ে দেয় চুনারুঘাট উপজেলার গেড়ারুক গ্রামের আঃ হকের পুত্র সজল হকের সঙ্গে। গায়ে-গতরে জেসমিন যে বেশ সুন্দরী ছিল তা এখনো স্পষ্ট। জেসমিনের সঙ্গে সেদিন কথা হয় স্থানীয় আমু রোড বাজারে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। প্রতিবন্ধী ইয়াসিনকে মাটিতে শুয়ে রেখেছেন তিনি। ফুটফুটে জিহান মা’য়ের পাশেই ঘুরাঘুরি করছিলো, খেলা করছিলো। আর নিশু দিব্যি ঘুমাচ্ছিলো মায়ের কোলে। এ অবস্থায় অনেকেই সাহায্যের থালায় টাকাকড়ি ফেলছিলেন। পত্রিকা এবং ফেসবুকে জেসমিনকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে অনেকেই সহায়তার আশ্বাস দেন। জেসমিন বলেন, আমি আপনাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। আমিও আর ১০টা নারীর মতো কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে বাঁচতে চাই। সন্তানদের মানুষ করতে চাই। আমি ভিক্ষা করতে চাই না।