বাংলারজমিন

নিকলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

অসামাজিক কাজের আখড়া

নিকলী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

২৫ মে ২০১৯, শনিবার, ৯:১৪ পূর্বাহ্ন

১৮ মাসের প্রকল্প। আর এ প্রকল্প ১১ বছরে শেষ হয়েছে অর্ধেক। যেটুকু কাজ হয়েছে সেটুকুর দেখভালের অভাবে নির্মিতব্য ভবনগুলোয় ফাঙ্গাস আর পরগাছায় ছেয়ে গেছে। স্থানে স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। ভিতরাংশ হয়ে উঠেছে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভয়াশ্রম। নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের এহেন অবস্থা আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্মিতব্য ৪টি ভবন। হাসপাতাল সীমানার উত্তর প্রান্তে নার্স ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী কোয়ার্টার। আগাছা আর ফাঙ্গাসে জবুথুবু। পেছনের দিকে বড় ধরনের একাধিক ফাটল। ভিতরে উৎকট গন্ধ। অসমাপ্ত মেঝের নানা স্থানে শেয়ালের গর্ত আর মল-মূত্র। দরজা-জানালার বালাই নেই। পরিত্যক্ত পলিথিন, বোতল, পেস্টিংয়ের (ড্যান্ডি) কৌটাসহ গাঁজা ও ইয়াবা সেবনে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি ছড়ানো-ছিটানো। হাসপাতাল সংলগ্ন গ্রামের ঈশিন জানান, এই ভবনটি এখন নেশাখোরদের দখলে। নিচতলায় পথচারীদের জরুরি প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদন ও দোতলায় নেশার রাজ্য ‘মাদক ভবন’ হিসেবে ভবনটি পরিচিত। নিকটবর্তী মাইজহাটি গ্রামের আবদুল জলিল, সাদির মিয়া জানান, একটি ভবন জুয়াড়িদের দখলে। অন্যটি দেহ ব্যবসায়ীদের দখলে। প্রকল্পের মূল ভবনেরও একই দশা বলে জানান পাশের মার্কেট মালিক হাসান আলী। তিনি আরও বলেন, মাঝে মধ্যে পুলিশের টহলের কারণে এখন অপরাধীদের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমেছে। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা অনেকেই এসব অপরাধীর শিকার হয়েছে। চলমান স্বাস্থ্য সেবার ৩১ শয্যার আবাসিক ভবনের ছাদের শেডেও দেখা মিলে নিয়মিত ইয়াবা আড্ডার আলামত। হাসপাতালে কর্মরত ওয়ার্ড বয় বয়ান হোসেন বলেন, নেই সীমানা প্রাচীর। নির্মিতব্য ভবনগুলোও অরক্ষিত। নানা অপরাধীদের আখড়া। প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটছে। আবাসিক কর্মচারীরা আতঙ্কে দিনাতিপাত করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, নিরাপত্তা ও বাসস্থান সুবিধার অভাবে ডাক্তারও এখানে আসতে চান না। বাধ্য হয়ে কাউকে বদলি করলেও কর্মক্ষেত্রে অনিয়মিত।
নিকলী উপজেলা পরিষদের নব দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আহসান মো. রুহুল কুদ্দুস ভূইয়া জনি ও ভাইস চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক জানান, কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনের এমপি আলহাজ আফজাল হোসেন বেশ কিছু দিন আগে এ সংক্রান্ত একটি ডিও লেটার পাঠিয়েছেন। বিভিন্ন সভায়ও বিষয়টি উপস্থাপন করা হচ্ছে। শিগগিরই রি-টেন্ডার দিয়ে আরও ২টি নতুন বিল্ডিংসহ নতুন ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে সারা দেশের বেশ কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় মেসার্স কাজল বিল্ডার্স, ২৯০/১ সোনারগাঁও রোড, হাতিরপুল, ঢাকা নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মূল হাসপাতাল ভবন ছাড়া দোতলা বিশিষ্ট ৩টি কোয়ার্টার নির্মাণে প্রাক্কলিত দর ধরা হয় ৫ কোটি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। কার্যাদেশ নং-১১২/ তাং: ১৯/০৮/২০০৮ইং। কার্যাদেশ চুক্তি মূলে ২০০৮ সালের ১৩ই অক্টোবরে শুরু হয়ে ২০১০ সালের ১২ই এপ্রিলের মধ্যে ভবন নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ সমাপ্তির কথা। ঠিকাদার কাজ শুরু থেকেই নানা অনিয়মে জড়িয়ে যায়। ৪০% কাজ শেষ হওয়ার আগেই উত্তোলন করা হয় ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অজ্ঞাত কারণে বন্ধ করা হয় কাজ। ২০১৩ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নিকলীতে আগমন উপলক্ষে ফাটল আর ছেয়ে যাওয়া ফাঙ্গাসের ওপর তড়িঘড়ি করে শেষ করা হয় প্রায় ৬০% কাজ। তারপর থেকে দেখা নেই নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মেসার্স কাজল বিল্ডার্সের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status