বাংলারজমিন

মেঘনার ভাঙনের কবলে লাউরা কদমচাল

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

২৫ মে ২০১৯, শনিবার, ৮:৩৭ পূর্বাহ্ন

মেঘনা নদী ভাঙনের মুখে কদমচাল ও লাউরার দুটি গ্রাম সঙ্গে নির্মাণাধীন  রাস্তা। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের কদমচাল অন্যটি বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নের লাউরা নাজিরপুর। বিগত বছর কয়েক যাবৎ এই দুইটি এলাকায় ব্যাপক ভাঙনের ফলে স্থানীয় সংসদ রেজওয়ান আহাম্মদ তৈফিক তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিলেও ভাঙন চলমান রয়েছে। এদিকে বাঙ্গালপাড়া হতে চাতলপাড় পর্যন্ত নদীর তীর ঘেঁষে ৩২ ফুট উচ্চতা ও ২৪ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট ৭ কিলোমিটার এলজিইডির নির্মাণাধীন রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। রাস্তাটি ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এলজিইডি কর্তৃক বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কাজটি ২০১৬-১৭-১৮ অর্থবছরে শেষ করার কথা থাকলেও মেসার্স এমএএইচ কনস্ট্রাকশন লি: ও মুসফিকুর রহমান কাঞ্চন নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজের গতিবিধির তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুব মোর্শেদ জানান কাজ দুইটি প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগ হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের বেশি ও নদীর তীরবতী স্থান থাকায় যথাসময়ে শেষ করা যায়নি। অষ্টগ্রাম হাওরের সঙ্গে ঢাকা রাজধানী শহরের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে চাতলপাড় হয়ে নাসীরনগর, বি-বাড়িয়ার রাস্তাটি। এই রাস্তাটি বাঙ্গালপাড়া হতে নদীর পাড় ঘেঁষে চাতলপাড় পর্যন্ত যাওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে জিসি রোডসহ কয়েকটি গ্রাম। নদী হতে কোথাও ১০ ফিট আবার কোথাও ৫ ফিট আবার কোথাও কোথাও নদী ভেঙ্গে পাড়ের সংলগ্ন এসে যায়। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, নদী ভাঙন রোধে গত বছর ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। এবারও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩০ লাখ  টাকা বরাদ্দ দিয়েছে কিন্তু এখনো কাজ শুরু হয়নি। হয়ত কিছুদিনের মধ্যে জিও বস্তার কাজ শুরু হবে। গত ১৭/১৮/১৯ অর্থবছরে আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের কদমচাল বাজার ঘিরে সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে ৫শ’ মিটার ভাঙন রোধে পিআইসির মাধ্যমে ডলি কন্সট্রাকশন কাজ করেছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দায়সারা কাজ করে চলে যান। কদমচাল এলাকার মো. কাইয়ুম খান জানান, ঠিকাদারের কাজের গুণগত মান ভালো না হওয়ায় মাস যেতে না যেতেই আবারও ভাঙন শুরু হয়। আব্দুল্লাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোক্তার খাঁ জানান, নদী ভাঙনরোধে কাজ হয়েছিল তবে ভাঙন কমছে না। এভাবে ভাঙতে থাকলে হয়ত ডুবন্ত বাঁধসহ আব্দুল্লাপুর বাজার পর্যন্ত ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এবিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার মিটামইন সাবডিভিশন উপ-প্রকৌশলী মো. শাজাহান জানান ২৫০ কেজি জিও ব্যাগ সহ ব্লক দিয়ে ভাঙ্গা রোধ করার চেষ্টা করেছি। তা কতটা টেকসই হবে বলা যাচ্ছে না। কদমচাল এলাকার সাধারণ মানুষের দাবি কদমচাল আনোয়ারপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর বাড়ী হতে আব্দুল্লাপুর বাজার পর্যন্ত দ্রুত গতিতে ভাঙন রোধ করতে হবে। নতুবা ডুবন্ত বাঁধসহ নদীর পাড়ের স্কুল কবরস্থান ও কয়েকটি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। বাঙ্গালপাড়া হতে চাতলপাড়ের মাঝামাঝি অবস্থায় ৬০ ফিট অগভীর নালা ভেঙ্গে প্রধান রাস্তায় সংযোগ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো নজর দিচ্ছে না বলে সাধারণ  জনগণের অভিযোগ। এ ব্যাপারে এলাকার সাধারণ মানুষ নিয়ে মো. আরজুল মিয়া জানান, এই ভাঙ্গার কারণে এমপি মহোদয়ের নিকট অবগত করেন এবং ভাঙ্গার রোধে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও এখনো পি আইসি কাজ করছেন না। নদীর ভাঙন নিয়ে বাংগালপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনামূল হক ভূঁইয়া মানবজমিন প্রতিনিধিকে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড এ বছরও লাউরা, নাজিরপুর গ্রাম রক্ষায় ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারের নেতৃত্বে কাজ করার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, গতবছর ভাঙনরোধে ঠিকাদারের নেতৃত্ব কাজ সম্পূর্ণ হলেও  এখন পর্যন্ত বরাদ্দের টাকা পাওয়া যায়নি। তাই ঠিকাদারগণ পুনরায় এ কাজ করতে নিরুৎসায়ী। অষ্টগ্রাম ডিভিশনের প্রকৌশলী রাজু হাওলাদারের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান আমরা এখন পর্যন্ত কোনো ঠিকাদার না পাওয়ায় কাজের বিলম্ব হচ্ছে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু করবো। এ ব্যাপারে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের  প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান নদীর তীরবর্তী ভাঙন রোধে মেঘা প্রজেক্ট তৈরি করছি। অচিরেই এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। আর কিছু কিছু ভাঙন রোধে কাজ করে যাচ্ছি। এভাবে নদী ভাঙনের ফলে হাওরে নির্মিত যোগাযোগ ব্যবস্থা আবারও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status