এক্সক্লুসিভ

ডান্সক্লাবে পরিচয়, নুর-অন্তরার অতঃপর যা ঘটলো

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৪ মে ২০১৯, শুক্রবার, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন

দু’জনের বাড়ি সুনামগঞ্জের একই এলাকায়। কেউ কাউকে চিনেন না। ঢাকার ডান্সক্লাবে পরিচয়। এরপর থেকে প্রেম। পরে বিয়ে। অনেক ঘটনার পর অবশেষে ডিভোর্স। আর ডিভোর্স দিয়ে স্ত্রী অন্তরার মামলার আসামি হলেন নুর আহমদ। এখন পুলিশ তদন্ত করছে বিষয়টি। তবে- সুনামগঞ্জ সদরের নারায়ণতলা এলাকায় এ নিয়ে কানাঘুষার অন্ত নেই। যতটা না বেশি আলোচিত হচ্ছেন নুর আহমদ তার চেয়ে বেশি জল্পনা দেখা দিয়েছে অন্তরাকে ঘিরে। সমাজপতিরা বার বার বিষয়টিকে মিটমাটের চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু অন্তরাকে তারা ফিরিয়ে আনতে পারেননি সুপথে। সুনামগঞ্জের জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের নারায়ণতলা কোনাপাড়া গ্রামের মোকসেদ আলীর ছেলে নুর আহমদ। একই এলাকার আমপাড়া গ্রামের ময়দর আলীর মেয়ে মোছা. অন্তরা।

নুর এবং অন্তরার সম্পর্ক প্রায় ৪ বছরের। ইমামের মাধ্যমে বিয়ে করে তারা ঘর-সংসার করেছেন। কিন্তু লিখিতভাবে এফিডেভিট হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। নুর আহমদের ভাষ্য মতে- ঢাকার ডান্সবারের মেয়ে অন্তরা। বাড়ি সুনামগঞ্জেই। কিন্তু তিনি তা জানতেন না। একদিন এক ডান্সবারে অন্তরার সঙ্গে তার দেখা। ২০১৫ সালের শেষ দিকে তাদের দেখা হওয়ার পর পরিচয়ও হয়। সেই সূত্র ধরে তারা প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। অন্তরাকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি। ২০১৬ সালের ১লা এপ্রিল ইমামের মাধ্যমে অন্তরাকে বিয়ে করেন। বিষয়টি জানতো না নুর আহমদের পরিবার।

বিয়ের পর অন্তরা তার মায়ের সঙ্গে বাসাতেই থাকে। বিয়ের এক মাসের মাথায় নুর আহমদ জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব চলে যান। সেখানে চলে যাওয়ার সময় অন্তরাকে তার মা ফুলনেছা বেগমের কাছে রেখে যান। এবং সৌদি আরব গিয়ে তিনি প্রতি মাসে ৩৫-৪০ হাজার টাকা অন্তরার খরচ বাবদ পাঠান। প্রায় আড়াই বছর সৌদি আরবে ছিলেন নুর আহমদ। এই আড়াই বছরের মধ্যে অন্তরা আবার যেইসেই। আবারো ডান্সক্লাব হয়ে ওঠে তার ঠিকানা। নুর আহমদ অভিযোগ করেন- উচ্চাভিলাষী মা ফুলনেছার কারণে অন্তরা আবার সেই পথে পা বাড়ায়। সৌদি আরব থেকে বিষয়টি জেনে প্রতিবাদ করেন। এ সময় নুর আহমদ সৌদি আরবে থেকে শাশুড়ির সঙ্গে কথা বললেও কোনো সান্ত্বনা পাননি।

বরং ফুলনেছা- অন্তরার ওপর ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন। এরপরও নুর আহমদ সরল মনে অন্তরা ও তার মাকে প্রতি মাসে খাওয়া-থাকা বাবদ টাকা দিয়ে যাচ্ছিল। এদিকে- গত ৮ই ফেব্রুয়ারি সৌদি আরব থেকে ছুটি কাটাতে দেশে ফিরেন নুর আহমদ। স্ত্রী হিসেবে ঘর সংসার শুরু করেন। এই সময়ের মধ্যে তাদের বিয়ের চূড়ান্ত বৈধতা দিতে নুর ও অন্তরা সুনামগঞ্জের আদালতে এফিডেভিট করেন। ১৭ই ফেব্রুয়ারি তারা আদালতে ১০ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে এফিডেভিট করেন। এদিকে- আদালতে এফিডেভিটের পরপরই বদলে যেতে থাকে অন্তরা। নুর আহমদ জানান- তিনি সৌদি আরবে থাকার সময় অন্তরার সঙ্গে একাধিক পরপুরুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি তিনি লোকমুখে জানলেও বিশ্বাস করেননি। কিন্তু দেশে আসার কিছু দিনের মধ্যে বিষয়টি খোলাসা হয়ে যায়। এমনকি স্বামীর কাছে থাকা অবস্থায় সে পরপুরুষের সঙ্গে মিলতে সুনামগঞ্জ ও সিলেটে চলে আসে। ঢাকার ডান্সক্লাবেও ফিরে যায়। বিষয়টি তার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি প্রতিবাদ করেন। আর প্রতিবাদের সূত্র ধরে শুরু হয় পারিবারিক অশান্তি। পারিবারিক কলহের পর অন্তরা ও তার মা ফুলনেছা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বার বার সালিশ বৈঠকে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা চালানো হয়। এরপরও অন্তরা সুপথে ফিরেনি।

পরপুরুষের সঙ্গ ছাড়েনি। এ কারণে এফিডেভিট করার দুই মাসের মাথায় ১৮ই এপ্রিল আদালতের মাধ্যমে অন্তরাকে ডিভোর্স দেন নুর আহমদ। ডিভোর্সপত্রে নুর আহমদও জানান- ‘তার স্ত্রী প্রায় সময় গর্হিত কাজ করে। সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও সে আসেনি।’ ওদিকে- ডিভোর্স দেয়ার পরপরই নুর আহমদ তার ডিভোর্সি স্ত্রী অন্তরা ও তার মা ফুলনেছাকে অভিযুক্ত করে সুনামগঞ্জ সদর থানায় একটি অভিযোগ করেন। এতে উল্লেখ করেন অন্তরা কিংবা তার মা তাকে নানাভাবে ক্ষতি সাধনের চেষ্টা চালাচ্ছে। মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে নানাভাবে হুমকিও দিচ্ছে। এদিকে- ডিভোর্সের পর অন্তরা ২৫শে এপ্রিল সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নুর আহমদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর মামলা করেন। মামলায় তিনি নুর আহমদের পিতা মুকশেদ আলী, মা আমেনা খাতুন, ভাই পিয়ার আহমদ ও বোন পারভিনকে আসামি করেছেন। আর্জিতে অন্তরা দাবি করেন- ১৭ই ফেব্রুয়ারি বিয়ের পর নুর আহমদ তাকে তার পিতার বাড়িতে তুলে নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার পর নুর আহমদের আসল চরিত্র তার কাছে প্রকাশ পায়। এ সময় নুর আহমদ সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য ২রা মার্চ তার কাছে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আর এই দাবিতে তাকে মারধর করা হয়। এ কারণে তিনি পিত্রালয়ে চলে যান বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন।

এদিকে- সুনামগঞ্জ আদালতে মামলা করলে আদালত সেটি সুনামগঞ্জ থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। আগামী মাসের শুরুতে আদালতে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি এখন তদন্ত করছে সুনামগঞ্জের পুলিশ। এ ব্যাপারে অন্তরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। অন্তরার মা ফুলনেছা জানিয়েছেন- তার মেয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে সেটি সত্য নয়। নুর আহমদ তার মেয়ে অন্তরাকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিল। কিন্তু সৌদি থেকে ফেরত আসার পর তার পরিবারের প্ররোচনায় পড়ে অন্তরাকে ডিভোর্স দিয়েছে। তিনি বলেন- অন্তরা বিয়ের পর অনেকটা শুধরে গেছে। সাংসারিক হতে চেয়েছিল। নুর আহমদের অভিযোগ অন্তরার চেয়ে তার মায়ের দিকেই বেশি। তিনি বলেন- অন্তরার মায়ের উচ্চ ভিলাষিতার খায়েস মেঠাতে সৌদি থেকেও আড়াই বছরে প্রায় ১২ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন। টাকা দেয়ার পরও অন্তরা তার মায়ের প্ররোচনায়ই পরপুরষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। সাংসারিক হতে দেয়া হয়নি অন্তরাকে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status