এক্সক্লুসিভ

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

যুদ্ধ করলে ইরান ধ্বংস হয়ে যাবে

মানবজমিন ডেস্ক

২১ মে ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:২১ পূর্বাহ্ন

মার্কিন স্বার্থে হামলা চালালে ইরান ধ্বংস হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে রোববার এ সতর্কতা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এক টুইটে তিনি বলেছেন, যদি ইরান যুদ্ধ করতে চায়, তাহলে সেটা হবে দেশটির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি। ইরানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আর কখনো হুমকি দিও না। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি, অনলাইন বিবিসি।  

সাম্প্রতিক সময়ে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। পারস্য উপসাগরে এ দুটি দেশের মধ্যে যেকোনো সময় একটি যুদ্ধ শুরু হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে এ অঞ্চলে যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ এবং বি-৫২ বোম্বারস মোতায়েন করেছে। ইরানের ‘হুমকির’ জবাবে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি। তবে তারা সুস্পষ্ট করে বলে নি, কী সেই হুমকি। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে এই বর্ণনাকে ব্যাপক সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।

কয়েক দিনে যুক্তরাষ্ট্র মিশ্র ইঙ্গিত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে যে, ইরানের মতো একটি শত্রুর মুখোমুখি হওয়া নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্ত্রিপরিষদের ভেতরে ভিন্নমত রয়েছে। ওদিকে ইরাকে তাদের কূটনৈতিক মিশন থেকে অপ্রয়োজনীয় স্টাফদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ইরান সমর্থিত ইরাকি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর হুমকির কথা উল্লেখ করে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রোববার ইরাকের রাজধানী বাগদাদে গ্রিন জোন এলাকায় একটি কাতিউশা রকেট ছোড়া হয়েছে। এই এলাকায় সরকারি বিভিন্ন অফিস, যুক্তরাষ্ট্রের মিশনসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস অবস্থিত। তবে ওই রকেট কে বা কারা ছুড়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন ইরান ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন এবং প্রশাসনকে সেদিকে ঠেলে দিচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসনের অন্যরা এর বিরোধিতা করছেন। ওদিকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই অঞ্চলে নতুন একটি যুদ্ধের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে। বলা হয়েছে, যুদ্ধের বিরোধী তেহরান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ রাজিফ রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনাকে বলেছেন, আমরা নিশ্চিত যুদ্ধ হবে না। আমরা কেউ যুদ্ধ চাই না। অন্য কেউই ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করার সাহস দেখাতে আসবে না।

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বেশ কয়েকটি শক্তিধর রাষ্ট্র। কিন্তু সেই চুক্তি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। নতুন করে দেশটির বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করেন। ব্যাস, শুরু হয় ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা।

ওদিকে পারস্য উপসাগরে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং নিজেদের তেল স্থাপনায় ইয়েমেনি হুতিদের ড্রোন হামলার পর জরুরি ভিত্তিতে উপসাগরীয় দেশগুলোর সহযোগিতামূলক সংগঠন জিসিসি এবং আরব লীগের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন সৌদি আরবের বাদশা সালমান। ৩০শে মে আলাদা ওই বৈঠক হওয়ার কথা পবিত্র মক্কা নগরীতে। সৌদি আরবের অভিযোগ, হুতিদের ওই হামলায় নির্দেশ দিয়েছিল ইরান। কিন্তু ইরান জোর দিয়ে সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। সৌদি আরব জরুরি বৈঠক আহ্বান করে জানিয়ে দিয়েছে, তারা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না। তবে নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য তারা প্রস্তুত।

কয়েকদিনে পারস্য উপসাগরে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। তার মধ্যে তেলবাহী ট্যাংকারে ‘রহস্যময় সাবোটাজ হামলা’ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া সৌদি আরবের অশোধিত পাইপলাইনে ইয়েমেনের বিদ্রোহীরা গোপন ড্রোন হামলা চালায়। এ হামলার পর বাংলাদেশ কড়া নিন্দা জানিয়েছে।

কয়েকদিন আগেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না। কিন্তু এখন ট্রাম্পের বক্তব্যে সেখান থেকে সরে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বলেছিলেন, তিনি আশা করেন ইরানের সঙ্গে কোনো যুদ্ধ হবে না। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফও বলেন, যুদ্ধের কোনো সম্ভাবনা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধ লেগে যাওয়ার আশঙ্কায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে সমুদ্র সীমায় (সৌদি) বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা এবং সৌদি আরবের মধ্যে দুটো তেল ক্ষেত্রে হুতি সন্ত্রাসীদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ৩০শে মে জিসিসি ও আরব লীগের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলেও চীন, রাশিয়া, বৃটেন এবং ফ্রান্স এখনো ইরানের সঙ্গে করা চুক্তি ধরে রেখেছে। বিবিসির প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষক জনাথন মার্কাস বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন চান ইরানের সঙ্গে করা এই পরমাণু চুক্তি পুরোপুরি ভেস্তে যাক।

ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তার ফলে ইরানের অর্থনীতি দিনে দিনে সংকটে নিমজ্জিত হচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য যেন ইরান তাদের তেল অন্য দেশের কাছে বিক্রি করতে না পারে। এ ছাড়া গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সবচেয়ে সুসজ্জিত বাহিনী রেভুলুশনারি গার্ডকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status