এক্সক্লুসিভ

চোখের ইশারায় চলবে হুইলচেয়ার!

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

২১ মে ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:০০ পূর্বাহ্ন

যারা চলতে, কথা বলতে, হাত নাড়াতে ও দাঁড়াতে অক্ষম তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার মতো এক বিশেষ হুইলচেয়ার বানিয়েছেন চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র আনোয়ার হোসেন। যে হুইলচেয়ারে জিপিএস ব্যবহার করে রোগীর অভিভাবক সার্বক্ষণিক জানতে পারবেন রোগীর অবস্থান। এ ছাড়া রোগীর চোখের ইশারায় কিংবা হাতের সামান্যতম নড়াচড়ায় চলবে এই হুইলচেয়ার। যার নাম বায়োনিক হুইলচেয়ার। যে হুইলচেয়ারে সব ধরনের প্যারালাইজড রোগীদের কথা মাথায় রেখে করা হয়েছে ৬ ধরনের কন্ট্রোলিং সিস্টেম। ১. চোখের ইশারায়, ২. মাইন্ড অয়েভ (মনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত) সিস্টেম ৩. হাতের নড়াচড়ার মাধ্যমে, ৪. ভয়েসের মাধ্যমে, ৫. জয়স্টিকের মাধ্যমে এবং ৬. মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র আনোয়ার হোসেন বলেন, কালের পরিক্রমায় সবাই একদিন বৃদ্ধ হবে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী যুদ্ধে গিয়ে এবং সড়ক দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে হাত-পা হারাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। হাত-পা হারানোর পর তারা অনেকটা নিঃসঙ্গ, পঙ্গু অবস্থায় জীবনযাপন করেন। এ ছাড়া অনেকেই সঠিক পরিচর্যার অভাবে মারাও যাচ্ছেন। তাদের এই নিঃসঙ্গ জীবন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার জন্যই এই বায়োনিক হুইলচেয়ার।

চেয়ারটি মূলত প্যারালাইজড রোগীদেরজন্য বানানো। তাই সব ধরনের প্যারালাইজড রোগীদের কথা চিন্তা করে এটিতে এমন সব ফিচারস রাখা হয়েছে যাতে করে যেকোনো ধরনের প্যারালাইজড রোগীরা এর সুফল ভোগ করতে পারেন।

আনোয়ার হোসেন বলেন, এটি এমন একটি সিস্টেম যার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে রোগী চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় চিকিৎসক রোগীকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে পারবে। রোগী মনিটরিংয়ের জন্য এই চেয়ারে রয়েছে অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা। প্রাথমিক পর্যায়ে এই চেয়ারে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, হার্টবিট এবং এর বাইরে অন্য কোনো কারণে রোগী উত্তেজিত হয়ে ছটফট শুরু করলে তা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা আছে।

এখানে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা মনিটরিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে টেমপারেচার এবং হিউমি ডিটিসেন্সর। রোগীর হার্টবিট মনিটরিংয়ের জন্য ব্যবহার করেছে হার্টরেট মনিটরিং সেন্সর, এই সেন্সরের সাহায্যে হার্টবিট ডিটেকশনের পাশাপাশি এমন ব্যবস্থা রেখেছে যেন রোগীর হার্টবিট অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার এবং রোগীর আত্মীয়স্বজনদের মোবাইলে অটোম্যাটিক্যালি মেসেজ এবং মেইল চলে যাবে। এ ছাড়া রোগী যদি কোনো কারণে ছটফট করতে শুরু করে (খিঁচুনি) তা ডাক্তার এবং রোগীর আত্মীয়স্বজনদের জানানোর জন্য মোবাইলে অটোম্যাটিক মেসেজ এবং মেইল চলে যাওয়ার সিস্টেম রয়েছে।

তাছাড়া ইমারজেন্সি কোনো কারণে রোগী কাউকে কোনো কিছু জানানোর জন্য এই চেয়ারে একটি ইমারজেন্সি পুশবাটন রয়েছে, এই বাটন প্রেস করা মাত্রই ডাক্তার এবং রোগীর আত্মীয়স্বজনদের মোবাইলে অটোম্যাটিক্যালি মেসেজ এবং মেইল চলে যাবে।

এই চেয়ারের সঙ্গে যুক্ত থাকবে মেডিসিনারি মাইন্ডার নামের একটা বক্স। এই বক্সের মধ্যে ছোট ছোট আরো ছয়টি বক্স থাকবে এবং ওই ছয়টি বক্সে থাকবে রোগীর ছয় বেলার ওষুধ, যখনই ওষুধ খাওয়ার সময় হবে ঠিক তখনই অটোম্যাটিক্যালি বক্সে এলার্ম বেজে উঠবে। যেই বেলার ওষুধ খাওয়ার সময় হয়েছে ঠিক ওই বেলার বক্সের এলইডি জ্বলে উঠবে এবং ওষুধের নামসহ সেবিকার মোবাইলে মেসেজ চলে যাবে।

পরবর্তীতে অটোম্যাটিক্যালি মেডিসিন রিমাইন্ডার বক্সের ছয়টি বক্স থেকে যেই বেলার ওষুধ খাওয়ার সময় হয়েছে ঠিক ওই বক্সটা খুলে ওষুধ বের করে দেবে। পেসেন্ট মনিটরিং সিস্টেমে রোগীর সব ডাটা ওয়েবসাইটে প্রদর্শন এবং ভবিষ্যতে কোনো কারণে আগের ডাটা দেখার জন্য রাখা হয়েছে বর্তমান যুগে সবচাইতে বেশি আলোচিত (ওড়ঞ) ইন্টারনেট অবথিংকস সিস্টেম।

আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে এই বায়োনিক হুইলচেয়ারটি বানানোর জন্য প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এটি বাজারজাত করার ক্ষেত্রে এর খরচ আরো কমিয়ে আনা যাবে।

তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসার আরো আধুনিকায়নে এই যন্ত্র বানিয়েছি। এর আগে আমি বায়োম্যাডিকেল হিউমেনয়েড রোবট ডক্টোবট তৈরি করেছি। তারই সূত্র ধরে এই বায়োনিক হুইলচেয়ার তৈরির পরিকল্পনা।
চলতি বছরের ৫ই এপ্রিল মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি ইউনিভার্সিটির রোবোলিউসান ২০১৯তে এটি প্রথম রানার্সআপ অর্জন করে বলে জানান আনোয়ার হোসেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status