বাংলারজমিন
অন্ধ হয়ে বাড়ি ফিরলো মিলন
মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
২০ মে ২০১৯, সোমবার, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই ইউনিয়নের বানিয়াচালা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন-জাহানারা দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে মিলন হোসেন (১৬)। চাচাতো ভাই মামুনের সঙ্গে ডিশ সংযোগ সহযোগী হিসেবে কাজ করতো সে। কিন্তু সেই কাজের টাকা চাওয়াই যেন কাল হলো তার। চাচাতো ভাইয়ের টেস্টারের আঘাতে দুটি চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। ৩৬ দিন ঢাকা মেডিকেলের চক্ষু বিভাগে চিকিৎসার পর গতকাল বাড়ি ফিরে মিলন। মিলনের বড় বোন নাসরিন জানান, গত ১২ই এপ্রিল বিকালে উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের ইমপ্রেস নিউটেক্স গ্রুপ সংলগ্ন আনিস মুন্সির বাসায় চাচাতো ভাই মামুন ও অপর ডিশ সংযোগকারী আল-আমিনের সঙ্গে ডিশ লাইনের তাঁর মেরামত করতে যায় মিলন। পরে সন্ধ্যার দিকে মামুন আমার বাবাকে ফোন করে জানায়, মিলন কাজ করার সময় তিন তলা ভবন থেকে পড়ে আহত হয়েছে। তাকে কুমুদিনী হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। পরে আমরা হাসপাতলে ছুটে গিয়ে মিলনকে অবচেতন অবস্থায় দেখতে পাই। পরে মিলনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ভর্তি করা হয়। মিলনের ডান চোখ এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় যে ওর ডান চোখটি অপসারণ করতেই হয়। সেখানে ড. ফরিদুল হোসেন ও সিএ নাসিমা আক্তারের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলে। মিলনের ডান চোখ এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় যে ওর ডান চোখটি অপসারণ করতেই হয়। বাঁ চোখটিরও ভালো হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলে ড. ফরিদুল হাসান সূত্রে জানা গেছে। এরপর ঘটনার ১২ দিন পর কথা বলতে সক্ষম হয়েই মিলন আমাদের জানায় কোন দুর্ঘটনা নয় কাজের টাকা চাওয়ায় চাচাতো ভাই মামুন তাঁর চোখে টেস্টার দিয়ে আঘাত করে। মুঠোফোনে মিলনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন আল-আমিনের সঙ্গে কাজের টাকা নিয়ে কথা বলায় মামুন পরিকল্পিতভাবে তাকে আনিস মুন্সীর তিনতলা ভবনের ছাদে নিয়ে কেন টাকা চাইলো তার ব্যাখ্যা জানতে চায়। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতে থাকা টেস্টার দিয়ে মিলনের ডান চোখে আঘাত করে চাচাতো ভাই মামুন। সহযোগিতা নেয়া হয় অপর ডিশ সংযোগকারী আল-আমিনেরও। তারপর আর কিছু বলতে পারে না মিলন। এ ঘটনার ২৬ দিন পর মিলনের মা টাঙ্গাইল জুুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মিলনের চাচাতো ভাই মামুন (২৫), আল-আমিন (১৯) ও ডিশ ব্যবসায়ী কবির হোসেন (৪০) এর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার ওসি একেএম মিজানুল হক জানান, সংবাদকর্মী মারফত এমন ঘটনা শুনে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তবে এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ নিয়ে কখনো কেউ আসেনি। শুক্রবার পর্যন্ত আদালতে করা মামলার কোনো নথিও তার কাছে পৌঁছায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।