শেষের পাতা

‘বিআরআই কোনো ব্যর্থ খেলা হবে না’

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১৯ মে ২০১৯, রবিবার, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী মনে করেন, চীনের বহুমাত্রিক উদ্যোগে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বিভিন্নভাবে সহায়তা করবে। বিআরআইকে বিশ্বায়নের এশিয়া চ্যাপ্টারের ‘সবচেয়ে বড় কর্মসূচি’ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ওই উদ্যোগে সবচেয়ে বেশি দেশ, বিপুল বিনিয়োগ এবং বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যাকে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে চীন। বেইজিংয়ের ভাষায়- এটিই হচ্ছে একুশ শতাব্দীর বৃহত্তম উন্নয়ন প্রকল্প। বর্তমান সময়ে এটি (বিআরআই) শুধুমাত্র ভালো একটি উদ্যোগ-ই নয়, এটা বাংলাদেশের জন্যেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে নব প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ-চীন সিল্ক রোড ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। ফোরামের সভাপতি ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জু, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।  ড. গওহর রিজভী বিআরআই এর গুরুত্ব এবং এর সীমাবদ্ধতা বিশেষত: কূটনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও এতে বাংলাদেশের যোগদানের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এরইমধ্যে যোগাযোগের বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। উন্নয়নের কাঙ্খিত লক্ষ্য নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সরকার যেসব উদ্যোগ এবং লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে তা বাস্তবায়নে বিআরআই সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস।

বিদ্যমান আঞ্চলিক উদ্যোগগুলোর সঙ্গে বিআরআইর কনফ্লিক্ট বা সংঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা বা উদ্বেগের কোন কারণ নেই। বিআরআই’র সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক অন্যান্য জোট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে না। এ নিয়ে অন্য দেশের সঙ্গেও সংঘাতের কোনো আশংকা নেই। আমি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলতে চাই এটা কোন ব্যর্থ (জিরো সাম-গেম) খেলা হবে না। এটি অবশ্যই সফলকাম (পজেটিভ সাম-গেম) হবে। বৈচিত্রময় এমন সব উদ্যোগ থেকে আমরা লাভবান হতে পারি। এ সময় আঞ্চলিক বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গও টানেন তিনি। বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান এবং নেপাল চতুর্দেশীয় বিবিআইএন কানেক্টিভিটি নেটওয়ার্ক এবং বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমার চতুর্দেশীয় ইকোনমিক করিডোর বিসিআইএম-ইসি রয়েছে। ওই দু’টি ফোরাম বিআরআই উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। এছাড়া আমরা বিমসটেকের সঙ্গে আছি।

এইসব উদ্যোগ একসঙ্গে আমাদের উন্নয়নে অবদান রাখছে। বিআরআইও নানাভাবে আমাদের উন্নয়নের জন্য একটি পারপজ-মেড প্রকল্প। তিনি বলেন, বাংলাদেশ শুধু বিআরআই এর সুযোগ সুবিধাই নেবে না, এটি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ, উন্নয়ন, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও কাজ করবে। তবে উপদেষ্টা এটাও বলেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই বৈশ্বিক দ্বন্দ্ব থেকে দূরে রাখতে হবে এবং ঢাকার উচিৎ আমাদের নিজস্ব স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করা। উপদেষ্টা তুলনামূলক আলোচনায় বলেন, এখানে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বা ধারণা রয়েছে, যেটি ভারত প্রমোট করছে। বাংলাদেশ এই দুই প্রকল্পের (ইন্দো-প্যাসিফিক এবং বিআারআই) মধ্যে কোনো সংঘাত দেখছে না। এই দুই প্রকল্পেরই লক্ষ্যে পৌঁছানো ও উন্নয়নের জন্য নিজস্ব কারণ ও উদ্যেশ্য রয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ভিশন ২০২১, এজেন্ডা ২০৩০ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখিত প্রকল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো একসঙ্গে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। তিনি গত ১০ বছরে ইন্দো-চায়না সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ভারত এখন চীনের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। তিনি ঢাকায় নবপ্রতিষ্ঠিত বেল্ট ফোরামের শুভ কামনা জানান। বলেন, এতে আমার কোনো রিজার্ভেশন নেই বরং যারা এটি গঠনে সাহায্য করেছেন তাদের সবাইকে অভিনন্দন।

রাষ্ট্রদূত যা বললেন- অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জু বলেন, উভয় দেশের জনগণের অধিকতর কল্যাণ নিশ্চিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ‘নবযুগ’ অর্থাৎ উত্তম ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে ঢাকা-বেইজিং একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। তিনি বলেন, যেহেতু আগামী বছর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫তম বার্ষিকী, তাই সহযোগিতা এবং কর্মপন্থার সংযোগ ও মানুষে-মানুষে বন্ধন আরও গভীর করার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে আমাদের একত্রে কাজ করা দরকার। রাষ্ট্রদূত নব প্রতিষ্ঠিত ফোরামের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ-চীন সিল্ক রোড ফোরাম সঠিক সময়েই যাত্রা শুরু করেছে। তাদের অনেক কিছু অর্জন করার সম্ভাবনা রয়েছে। চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের কূটনীতির মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-এর রয়েছে কূটনৈতিক চিন্তা। উভয় নীতি দু’দেশের জন্য সমান সহযোগিতার নতুন সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশিদের শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ দেশ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন এবং চীনাদের স্বপ্ন জাতীয় পুনরুজ্জীবন- ব্যাপার দু’টি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং এতে অনেক অভিন্ন বৈশিষ্ট রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত নতুন ফোরাম চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের ভালো গল্প তুলে ধরতে মনোযোগ দেবে এবং দু’দেশের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন হিসেবে গড়ে উঠবে।

সভাপতির বক্তৃতায় দিলীপ বড়ুয়া বলেন, সিল্ক রোডের ধারণাটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সর্বক্ষেত্রে দু’দেশের যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, তার নেতৃত্বে ৪৯ সদস্যের বাংলাদেশ ফোরাম গঠন করা হয়েছে। যেখানে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন দ্য ফিনান্সিয়্যাল এক্সপ্রেসের নির্বাহী সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান। উল্লেখ্য, ঢাকার চীনা দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। ২০১৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল বাংলাদেশ এবং চীনের প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ ছিল সবচেয়ে বড় বাজার। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বছর প্রতি ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধিতে বর্তমানে ১৮ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status