বাংলারজমিন

পাকুন্দিয়ায় ধানের দামে হতাশ চাষিরা

সাখাওয়াত হোসেন হৃদয়, পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) থেকে

১৯ মে ২০১৯, রবিবার, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে এবছর বোরো আবাদ করেছেন এখানকার কৃষকরা। তবে বাজারে ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ চাষিরা। শ্রমিক সংকট, বেশি পারিশ্রমিকে শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে ও সব খরচ শেষে যে বাজার দর পাওয়া যাচ্ছে তাতে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতে করে ধান চাষে অনেক চাষিই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বর্তমান বাজারে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকা দরে। আর একজন শ্রমিকও নিতে হচ্ছে একই দরে। অর্থাৎ এক মণ ধানের দরে একজন শ্রমিক। এ অর্থে কৃষকেরা যে ধান ফলিয়েছেন তাতে এত দরে শ্রমিক নিয়ে সকল খরচ হিসেব করে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। এতে চরম হতাশ ধান চাষিরা।  উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯ হাজার ৫১ হেক্টর অর্জিত হয়েছে ৯ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমি। তন্মধ্যে উচ্চফলনশীল জাতের ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬৫ হেক্টর অর্জিত হয়েছে এক হাজার ৩৭০ হেক্টর। উফশীর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯ হাজার ৪৪ হেক্টর অর্জিত হয়েছে ৮হাজার ২৪৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি পরিমাণ জমিতে এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে।  চলতি বছর ব্রি-২৮সহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছেন চাষিরা। ব্রি-২৮ধান চাষিরা পুরোদমে হতাশ। এ জাতের ধানে চিটা ধরে ফলন বিপর্যয় হয়েছে। যেখানে কানি (৩৫ শতাংশ) প্রতি ১৫-১৬ মণ ধান পাওয়ার কথা সেখানে ধান হয়েছে ৫-৬ মণ। তবে ভিন্ন চিত্র হাইব্রিড জাতের ধানে। চলতি মৌসুমে ঘনঘন বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান নষ্ট হলেও হাইব্রিডের ফলন হয়েছে বাম্পার। কিন্তু বাজারে ধানের দাম না পেয়ে চাষিদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। সরজমিন উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়নের পূর্বকুমারপুর গ্রামের আল আমিনের ধানের জমিনে গিয়ে তিন শ্রমিকসহ তাকে ধান কাটায় ব্যস্ত দেখা যায়। সে জানায়, ৫৫০ টাকা রোজে তিনজন শ্রমিক নিয়ে ধান কাটছেন। ৫ কাঠা (পৌনে ৯ শতাংশে এক কাঠা) জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন হোসেন্দী পূর্বকুমারপুর গ্রামের মো.আল আমিন। ৫ কাঠা থেকে ধান পেয়েছেন ৫ মণ। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী পাঁচ মণ ধান বিক্রি করে শ্রমিক খরচসহ যাবতীয় খরচের হিসেবে শেষে পুরোটাই লোকসান তার। তবে ৩২ শতক জমিতে হাইব্রিড-১২০৩ জাতের ধান করেছিলেন। ব্রি-২৮ জাতের ধানের ফলন বিপর্যয় হলেও হাইব্রিড ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে বাজার দর অনুযায়ী এ ধান বিক্রি করেও লাভের মুখ দেখা দুষ্কর বলে জানান এ কৃষক। ধানের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করে কৃষকদের বাঁচাতে সরকারের কাছে আকুতি করেন তিনি।
হোসেন্দী উত্তরপাড়া গ্রামের ধান চাষি মো. রোকন উদ্দিন জানান, দেড় কানি জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। এতে ফলন বিপর্যয় হয়েছে। সব ধান চোচা (চিটা) হয়ে গেছে। এত দামে শ্রমিক নিয়ে ধান কেটে মাত্র ৬-৭ মণ ধান পেয়েছেন। বর্তমান বাজার দরে এতে তিনি লোকসান গুনছেন।  
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের ধান চাষি আবদুল মতিন জানান, ৬৮ শতক জমিতে হাইব্রিড-১২০৩ জাতের ধান চাষ করেছেন। এতে তার ভালো ফলন হয়েছে। তবে চড়া দামে শ্রমিক নিয়ে ধান কেটে ও সব খরচ বাদ দিয়ে বাম্পার ফলন সত্ত্বেও ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হচ্ছেন তিনি। এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল হাসান আলামিন মানবজমিনকে বলেন, এ উপজেলায় ধানের ফলন ভাল হয়েছে। কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করে খাদ্য বিভাগে তালিকা দেয়া হচ্ছে। খাদ্য বিভাগ ধান ক্রয় করলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status