প্রথম পাতা

মানব পাচার

সিলেটে এনামের বিরুদ্ধে মামলা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৮ মে ২০১৯, শনিবার, ১০:১১ পূর্বাহ্ন

জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশনের ‘আলোচিত’ ইয়াহিয়া ওভারসিজের মালিক সিলেটের এনামুল হক তালুকদার। ভূমধ্যসাগর ট্র্যাজেডির পর এনামের নাম সিলেটের মানুষের মুখে মুখে রটেছে। এ কারণে গা ঢাকা দিয়েছিল সিলেটের এনাম। বন্ধ করে রাখেন মোবাইল ফোনও। সেই এনামের বিরুদ্ধে সিলেটে মামলা  হয়েছে। মানবপাচার ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে এ মামলা করা হয়। আর মামলার পরপরই র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছে এনাম। মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও দমন আইনে গতকাল শুক্রবার ভোররাতে ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় এ মামলা করেন ভূমধ্যসাগরে নিহত আব্দুল আজিজের ভাই ফেঞ্চুগঞ্জ মুহিদপুর গ্রামের মফিজ উদ্দিন।

মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, সিলেটের রাজা ম্যানশনের নিউ ইয়াহিয়া ওভারসিজের মালিক গোলাপগঞ্জ উপজেলার পনাইরচক গ্রামের মৃত আব্দুল খালিক উরফে কটাই মেম্বারের ছেলে এনামুল হক, একই উপজেলার মানিককোনা হাওরতলা গ্রামের ইলিয়াস মিয়ার পুত্র জায়েদ আহমেদ, ঢাকার রাজ্জাক হোসেন, সাইফুল ইসলাম, মঞ্জুর ইসলাম ওরফে গুডলাক ও তাদের সহযোগী আরো ১০-১৫ জন ইতালিতে পাঠানোর নাম করে মানবপাচার করে। লিবিয়ায় আটকে রেখে মারপিট করে মুক্তিপণ আদায় করে। এজাহারে তিনি আরো উল্লেখ করেন, অভিযুক্তরা গত বছরের ৪ঠা ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ১০ই মে পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে টাকা আদায় করে। এ ব্যাপারে ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ওসি আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জানিয়েছেন, মামলা রেকর্ডের পর আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

এখনো নিখোঁজ সাব্বির: ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বসন্তরাগাঁও নিবাসী মৃত আব্দুল খালিকের ছেলে সাব্বির খালিক এখনো নিখোঁজ রয়েছে। সে বিশ্বনাথের কাটলিপাড়া দক্ষিণ গ্রামের চমক আলীর ছেলে রফিক মিয়ার মাধ্যমে ১২ লাখ টাকায় পাঁচ মাস আগে লিবিয়া গিয়েছিল। তার পরিবার সূত্র জানায়, গত ১১ই মে নৌকাযোগে ইতালি যাওয়ার আগে ৮ই মে মোবাইল ফোনে সাব্বির খালিক তাদের সঙ্গে কথা বলে। সে জানায় দালালারা ‘গেম’ এর জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছে। এরপর থেকে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেন নি তারা। এ ঘটনায় নিখোঁজ সাব্বিরের স্বজন জালালাবাদ থানায় শাহ আলম বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।

খোকনের বাড়িতে কান্না: লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ রেদওয়ানুল ইসলাম খোকনের বাড়িতে কান্না থামছে না। ছেলের শোকে বাবা ইলিয়াস আলী হতবাক হয়ে পড়েছেন। আর মা জোছনা বেগমের অবস্থা আরো করুণ। নিখোঁজ খোকনের বাড়ি বিশ্বনাথের নওধার মাঝপাড়ায় গিয়ে দেখা যায় বাড়িতে সুনশান নীরবতা। খোকনের বাবা ইলিয়াস আলী ও মা জোছনা বেগম কথাই বলতে পারছেন না। খোকন সিলেট সরকারি কলেজে বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। গ্রামের পার্শ্ববর্তী বৈরাগী বাজারে খোকনের বড়ভাই রেজাউল ইসলাম রাজু’র একটি ফাস্ট ফুডের ব্যবসা রয়েছে। যেখানে খোকন ও তার বাবা বেশিরভাগ সময়ই বসতেন। প্রায় ৭ মাস আগে বাজারের পাশের কাঠলি পাড়া গ্রামের চমক আলীর ছেলে আদম ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম রফিক তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ইতালি পাঠানোর সুবর্ন সুযোগের কথা বলেন। একপর্যায়ে তাদের ফাঁদে ফেলে সাড়ে ৮ লাখ টাকায় জাহাজে করে এক মাসের মধ্যে ইতালি পাঠাবে বলে চুক্তি করে রফিক। পরবর্তীতে ব্র্যাক ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ৮ লাখ টাকা ঋণ তুলে দালাল রফিককে দেন তারা।

পরে গত নভেম্বর মাসের শেষের দিকে খোকনকে লিবিয়া পাঠায় দালাল রফিক। সমপ্রতি লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবির পর থেকে নিখোঁজ হয় খোকন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্বনাথ থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, ভূমধ্যসাগর থেকে সিলেটের বিশ্বনাথের নিখোঁজ কারো লাশ উদ্ধার হয়েছে এবং শনাক্ত হয়েছে বলে তাদের কাছে কোনো মেসেজ নেই। তবে, নিশ্চিত হয়ে কেউ যদি থানায় মামলা করেন তাহলে সব প্রকার আইনি সহায়তা দেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status