শেষের পাতা

ছিনতাইকারীরা নিয়ে গেল সাত তরুণের ‘স্বপ্ন’

জিয়া চৌধুরী

১৫ মে ২০১৯, বুধবার, ১০:২১ পূর্বাহ্ন

সাত তরুণের প্রতিষ্ঠান ‘অ্যানড্রয়েড টোটো কোম্পানি: এটিসি’। বাজারে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক যেকোনো নতুন পণ্য এলে তার ভিডিও রিভিউ বানায় আশিকুর রহমান তুষারের এই প্রতিষ্ঠান। মুঠোফোন, গ্যাজেট, ল্যাপটপ, ডিএসএলআর ক্যামেরা অথবা গেমিং সফ্‌টওয়্যারের মতো প্রযুক্তি পণ্যের ভালো-মন্দ তথ্য তুলে ধরে ইউটিউব-ফেসবুকে ছাড়েন এটিসির  সদস্যরা। এসব রিভিউ থেকে নিজের পছন্দের পণ্য বেছে নেয়া সহজ হয় গ্রাহকদের। অনেকটা শখের বসে শুরু করলেও ‘এটিসি’ এখন প্রায় ৩৫ তরুণের স্বপ্নের কারখানাও। পড়াশোনার চালিয়ে যাবার পাশাপাশি নিজেদের আগ্রহ আর অভিজ্ঞতায় কিছুটা আর্থিক লাভের মুখও দেখতে শুরু করেছে এটিসির সদস্যরা। তবে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুরে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে ম্লান হতে বসেছে এসব তরুণদের স্বপ্ন। কৌশলে নম্বরপ্লেট ছাড়া মোটরসাইকেল ব্যবহার করে ছিনতাই মিশনে যোগ দেয় দু’জন। প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে মিরপুর মডেল থানার পাশে এমন ছিনতাইয়ের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে ঘটনাটিকে ছিনতাই মানতে নারাজ মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তার মতে এটি ছিনতাই নয় চুরির ঘটনা। এটিসি’র উদ্যোক্তা আশিকুর রহমান তুষার গতকাল মানবজমিনকে জানান, বাজারে আসা নতুন একটি মুঠোফোনের ভিডিও রিভিউ বানাতে মিরপুরের একটি রেস্তোরাঁয় যাচ্ছিল তার দলের দুইজন সদস্য। এদের একজনের সঙ্গে কালোব্যাগে ছিল দুইটি ক্যামেরা, দুটি লেন্স একটি নতুন স্মার্টফোন ও কিছু তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য। মিরপুর ৬০ ফিট সড়ক দিয়ে রিকশায় করে মিরপুর দুই নম্বর এলাকায় যাওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেল ছোঁ মেরে ব্যাগটি নিয়ে যায়। ব্যাগে প্রায় আড়াই লাখ টাকা দামের জিনিসপত্র ছিল বলেও জানান আশিকুর রহমান তুষার। তিনি মানবজমিনকে বলেন, কয়েক বছর ধরে তিলে তিলে ছোট্ট একটি প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের টিমের প্রত্যেক সদস্যই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অথচ ছিনতাইকারীদের এক মুহূর্তের ছোবলে আমাদের অন্তত ৩৫জন তরুণের স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনার পরে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন তারা। তবে, মিরপুর মডেল থানা পুলিশ আন্তরিক হলে ছিনতাইকারীদের ধরা সম্ভব বলেও জানান আশিকুর রহমান তুষার। ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় রিকশায় থাকা এটিসি’র সদস্য জুলফিকার রহমান রিফাত হতাশার সুরে জানান, কি আর বলবো? হাসিখুশি সকালটা এক নিমিষেই দুঃখে পরিণত হলো। দুপুর আড়াইটার দিকে মিরপুর ৬০ ফিট থেকে রিকশায় করে পিজ্জাবার্গে একটি মুঠোফোনের ভিডিও রিভিউ বানাতে যাচ্ছিলাম আমরা দু’জন। ক্যামেরা-লেন্স, মোবাইল সব একটা ক্যালো ব্যাগে আমার কাছে ছিল। মনিপুরের একটু আগে ইফা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে হঠাৎ একটা মোটরবাইক এসে আমাদের ক্রস করে যাবার সময় হাত থেকে ছোঁ মেরে ব্যাগটা নিয়ে দ্রুত চলে যায়। ব্যাগ টান দেয়ায় আমিও রিকশা থেকে পড়ে যাই। সামনে তাকালে দেখতে পাই মোটরসাইকেলটিতে কোন নম্বরপ্লেট নেই। পরে আরেকজন মোটরসাইকেল আরোহীর সাহায্য নিয়ে ছিনতাইকারী মোটরসাইকেলটির পেছন পেছন যেতে থাকি। কিন্তু তারা দ্রুত গলির ভিতরে ঢুকে যাওয়ায় ছিনতাইকারীদের শেষ পর্যন্ত ধরতে পারিনি। রিফাত জানান, ব্যাগে সনি আলফা এ৬৩০০, সনি আলফা এ৬৫০০ মডেলের দুটি ক্যামেরা, কিট ও সিগমা লেন্স, পাওয়ার ব্যাংক, আইটেল স্কাইপি মডেলের মুঠোফোন এবং আরো কিছু প্রযুক্তিপণ্য ছিল ব্যাগটিতে। ছিনতাইকারীদের দুজনের মাথায় কালো রংয়ের হেলমেট ছিল, পেছনে থাকা ছিনতাইকারীর পরণে ছিল কালো শার্ট ও কমলা রংয়ের প্যান্ট। পরে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানিয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন এটিসির’র উদ্যোক্তা আশিকুর রহমান তুষার। ছিনতাইকারীরা আগ থেকে তাদের ফলো করছিল বলেও ধারণা করছেন এটিসির সদস্যরা। তবে, ছিনতাইকারীদের মোটরসাইকেলে নেমপ্লেট না থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। একটি সূত্রে জানা গেছে, চক্রটি বহুদিন ধরে মিরপুর এলাকায় ছিনতাই করে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে নম্বরপ্লেট ছাড়া মোটরসাইকেলে করে ছিনতাই করে চক্রের সদস্যরা। একই সঙ্গে দুজনে হেলমেট পরা থাকায় তাদের চিহ্নিত করাও কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের একজন সদস্য। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির গতকাল রাতে মানবজমিনকে বলেন, আইনের ভাষায় এটা ছিনতাইয়ের মধ্যে পড়ে না। কোন ব্যক্তিকে জোর করে কোন কিছু কিংবা ভয়ভীতি দেখিয়ে কোন কিছু নিয়ে গেলে সেটাকে আমরা ছিনতাইয়ের মধ্যে ধরবো। তবে, গতকাল মনিপুর এলকায় যেটা ঘটেছে সেটা ছিনতাই নয় চুরি। চলন্ত অবস্থায় কোন কিছ টান দিয়ে নিয়ে গেলে এটা চুরির মধ্যেই পড়ে। তারপরও আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো। এদিকে, ছিনতাইয়ের ঘটনার আশপাশে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান আশিকুর রহমান তুষার। আবেগজড়িত কণ্ঠে তিনি অনুরোধ করে বলেন, আমাদের ঈদটাকে মাটি করবেন না। এত বছর ধরে পরিশ্রম করে দাঁড় করানো এই ভিত্তিটাকে ভেঙে দিবেন না। দয়া করে আমাদের জিনিসগুলো ফিরে পাবার ব্যবস্থা করুন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status