বাংলারজমিন
পঞ্চগড়ে চারশ’ খামারির স্বপ্নভঙ্গ
১৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিলো ‘স্বপ্নতরী’
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
১৪ মে ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:০১ পূর্বাহ্ন
লাখ লাখ টাকার স্বপ্ন দেখিয়ে চারশ’ জন উদ্যোক্তা খামারির স্বপ্নভঙ্গ করে ১৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এখন লাপাত্তা স্বপ্নতরী সার্ভিসেস লিমিটেড নামের নাম সর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান। টার্কি মুরগি প্রতিপালন প্রকল্পের মাধ্যমে মাত্র ৯০ দিনের মাথায় লাখ টাকার স্বপ্ন দেখায় ওই ভুয়া প্রতিষ্ঠানটি। হঠাৎ বড়লোক হওয়ার আশায় এনজিও’র ঋণ অথবা জমি বিক্রি বা বন্ধক দিয়ে টাকা সংগ্রহ করে তা লগ্নি করে এখন পথে বসেছে চারশ’ ব্যক্তির চারশ’ পরিবার। আগে কোম্পানির চেয়ারম্যান প্রতারক মানিক চন্দ্র মোবাইল ফোন রিসিভ করলেও কয়েকদিন ধরে তার ব্যবহৃত দু’টি মোবাইল ফোনই বন্ধ। অবশেষে তারা তাদের টাকা উদ্ধারে শরণাপন্ন হয়েছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি আবেদন জমা দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগে জানা যায়, দিনাজপুরের বীরগঞ্জের ‘স্বপ্নতরী সার্ভিসেস লিমিডেট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান টার্কি মুরগি প্রতিপালনের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়। যার রেজিঃ নং-সি-১৪৫৫১৯/১৯। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মানিক চন্দ্র রায়ের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদরের গড়েয়া এলাকার গড়েয়া গোপালপুর গ্রামে। তার বর্তমান ঠিকানা দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার ৪নং ওয়ার্ডের সুজালপুর স্লুইচগেট এলাকায়। এই প্রতিষ্ঠানটি এলাকাভিত্তিক এরিয়া ম্যানেজার, ইউসি ও এফও নিয়োগ দিয়ে তাদের মাধ্যমে টার্কি মুরগি প্রতিপালন প্রকল্পের নামে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল এমনটি শহরাঞ্চলের সহজ সরল মানুষদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। তারা প্রতিটি প্যাকেজ ২৪ হাজার ৮শ’ টাকা করে মানুষদের কাছে স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র করে টাকা হাতিয়ে নেয়। চুক্তি অনুযায়ী মুরগির বাচ্চা দেয়ার পর পরবর্তী ৯০ দিন মুরগির খাবার ও চিকিৎসা খরচ কোম্পানি থেকে বহন করবে। ৯০ দিন পর কোম্পানি সেই মুরগি নিয়ে যাবে। এ সময় খামারিকে প্যাকেজ প্রতি সাড়ে ৮ হাজার টাকা লাভসহ সর্বমোট ৩৩ হাজার ৩শ’ টাকা প্রদান করবে। এভাবে একেকজন খামারি একটি থেকে শুরু করে ২৫-৩০টি প্যাকেজের জন্য কোম্পানির প্রতিনিধির হাতে টাকা দিয়ে স্ট্যাম্পে চুক্তিবদ্ধ হয়। অনেককে আবার ওই পরিমাণ টাকার চেকও প্রদান করে। লোকজনদের আস্থা অর্জন করার জন্য প্রথম কিস্তিতে ৯০ দিনের মধ্যে পুরো লভ্যাংশের টাকা প্রদান করে কোম্পানিটি। এদের অনেককে আবার লাভের টাকা দেয়ার পর মূল টাকা না দিয়ে আরো বেশি টাকার লাভের লোভ দেখিয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়। এরা তাদেরকে আর মুরগির বাচ্চাও দেয়নি। চুক্তি অনুযায়ী মেয়াদপূর্তির পর তাদের আসল টাকাও ফেরত দেয়নি কোম্পানিটি।
পঞ্চগড় জেলা সদরের হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জিয়াবাড়ি সর্দারপাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, প্রতিটি প্যাকেজ ২৪ হাজার ৮শ’ টাকা হিসেবে তিনি দুইটি প্যাকেজের জন্য ৪৯ হাজার ৬শ’ টাকা প্রদান করে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী বাচ্চা প্রদানের তিন মাস মুরগির বাচ্চার খাদ্য ও ওষুধ কোম্পানি বহন করবে। তাকে শুধুমাত্র দেখভাল করতে হবে। দুইটি প্যাকেজে ১৭ হাজার টাকা লাভসহ ৯০ দিন পর তাকে ৬৬ হাজার ৬শ’ টাকা দেয়ার কথা। তাকে দুইটি প্যাকেজের জন্য ২০টি মুরগির বাচ্চা দেয়া হয়। কিন্তু মুরগির বাচ্চা দেয়ার পর কোম্পানির লোকজনের কোনো খোঁজখবর না থাকায় মেয়াদপূর্তির আগে ১৫টি মুরগি মরে যায়। এখন তারা মুরগি নিতেও আসে না এবং টাকাও দেয় না। আমার মতো অনেক খামারি এখন পথে বসেছে।
পঞ্চগড় জেলা সদরের গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার রফিকুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের শুরুতে আমার কাছ থেকে ১২টি প্যাকেজের জন্য দুই লাখ ৯৭ হাজার ৬শ’ টাকা গ্রহণ করে। ৯০ দিন পর মুরগি নিয়ে তারা লাভের এক লাখ দুই হাজার টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে। বাকি লাভের টাকা দেয়ার আগে তারা ৯০ দিন পর দ্বিগুণ লাভ দেয়ার জন্য নতুন করে চুক্তি করে আমার কাছ থেকে আরো দুই লাখ ৯৭ হাজার ৬শ’ টাকা নেয়। এই টাকা নেয়ার পর তারা আমাকে আর টার্কি মুরগির বাচ্চা দেয়নি। তারা বলে যে মুরগির দরকার নেই। মেয়াদ শেষে আপনি পুরো লাভসহ আসল টাকা ফেরত পাবেন। আগামী ২৪শে মে আমার চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এখন শুনছি তারা লাপাত্তা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য স্বপ্নতরী সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মানিক চন্দ্র বর্মনের ব্যবহৃত মোবাইলে (০১৭৪০৮১৯৩৭৭, ০১৩০৩১১৫০১৪) যোগাযোগের একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও দু’টি নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পঞ্চগড় জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ দাস বলেন, আমরা আগে জেনেছিলাম পঞ্চগড়ে খামার আকারে টার্কি মুরগির চাষ হচ্ছে। আমরা সেসব খামারে গিয়ে চিকিৎসা দিতাম। চিকিৎসার জন্য তাদেরও কর্মী ছিল। খামারিরা ওই স্বপ্নতরী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে টার্কি পালন করেছিল। সেখানে আমাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল না। এখন মুরগি বিক্রি না হওয়া ও খামারিদের টাকা না দেয়ার বিষয়টি শুনতে পাচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের কোনো করণীয় নেই।
পঞ্চগড় জেলা সদরের হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জিয়াবাড়ি সর্দারপাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, প্রতিটি প্যাকেজ ২৪ হাজার ৮শ’ টাকা হিসেবে তিনি দুইটি প্যাকেজের জন্য ৪৯ হাজার ৬শ’ টাকা প্রদান করে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী বাচ্চা প্রদানের তিন মাস মুরগির বাচ্চার খাদ্য ও ওষুধ কোম্পানি বহন করবে। তাকে শুধুমাত্র দেখভাল করতে হবে। দুইটি প্যাকেজে ১৭ হাজার টাকা লাভসহ ৯০ দিন পর তাকে ৬৬ হাজার ৬শ’ টাকা দেয়ার কথা। তাকে দুইটি প্যাকেজের জন্য ২০টি মুরগির বাচ্চা দেয়া হয়। কিন্তু মুরগির বাচ্চা দেয়ার পর কোম্পানির লোকজনের কোনো খোঁজখবর না থাকায় মেয়াদপূর্তির আগে ১৫টি মুরগি মরে যায়। এখন তারা মুরগি নিতেও আসে না এবং টাকাও দেয় না। আমার মতো অনেক খামারি এখন পথে বসেছে।
পঞ্চগড় জেলা সদরের গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার রফিকুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের শুরুতে আমার কাছ থেকে ১২টি প্যাকেজের জন্য দুই লাখ ৯৭ হাজার ৬শ’ টাকা গ্রহণ করে। ৯০ দিন পর মুরগি নিয়ে তারা লাভের এক লাখ দুই হাজার টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে। বাকি লাভের টাকা দেয়ার আগে তারা ৯০ দিন পর দ্বিগুণ লাভ দেয়ার জন্য নতুন করে চুক্তি করে আমার কাছ থেকে আরো দুই লাখ ৯৭ হাজার ৬শ’ টাকা নেয়। এই টাকা নেয়ার পর তারা আমাকে আর টার্কি মুরগির বাচ্চা দেয়নি। তারা বলে যে মুরগির দরকার নেই। মেয়াদ শেষে আপনি পুরো লাভসহ আসল টাকা ফেরত পাবেন। আগামী ২৪শে মে আমার চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এখন শুনছি তারা লাপাত্তা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য স্বপ্নতরী সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মানিক চন্দ্র বর্মনের ব্যবহৃত মোবাইলে (০১৭৪০৮১৯৩৭৭, ০১৩০৩১১৫০১৪) যোগাযোগের একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও দু’টি নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পঞ্চগড় জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ দাস বলেন, আমরা আগে জেনেছিলাম পঞ্চগড়ে খামার আকারে টার্কি মুরগির চাষ হচ্ছে। আমরা সেসব খামারে গিয়ে চিকিৎসা দিতাম। চিকিৎসার জন্য তাদেরও কর্মী ছিল। খামারিরা ওই স্বপ্নতরী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে টার্কি পালন করেছিল। সেখানে আমাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল না। এখন মুরগি বিক্রি না হওয়া ও খামারিদের টাকা না দেয়ার বিষয়টি শুনতে পাচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের কোনো করণীয় নেই।