ষোলো আনা

এক লড়াকু মায়ের গল্প

জিয়া চৌধুরী

১২ মে ২০১৯, রবিবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন

সেলিনা আখতার, এক লড়াকু মায়ের নাম। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেশব্যাপী সেরা জয়িতা কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম বিভাগে সেরার মুকুট তার ঘরে। নিজে দেশের প্রথম নারী সরকারি কৌঁসুলি (জিপি)। আইন পেশা ও সংসার সামলে নিজের দুই সন্তানকেও গড়ে তুলেছেন এক একজন রত্ন হিসেবে। তার দুই ছেলের বড় জন মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর বিজয় ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম। আর ছোট ছেলে অহিদুজ্জামান নূর জয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে কাজ করছেন। ঘরসংসার আর আইন পেশা সামলে, শত বাধা পেরিয়ে সেলিনা আখতার প্রতিষ্ঠিত করেছেন দুই ছেলেকে।

আইনজীবী সেলিনা আখতার। আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে আইন পেশায় যুক্ত হন। যিনি এখন নিজেই ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। কারণ দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী, যিনি গভর্নমেন্ট প্লিডার (সরকারি কৌঁসুলি) হিসেবে কাজ করেছেন। সময়টা ছিল ১৯৯৬  থেকে ২০০১। বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার ভিপি সম্পত্তিবিষয়ক সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিযুক্ত আছেন। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (বিএনডব্লিউএলএ) এবং ডেনমার্কভিত্তিক এনজিও ডানিডার (ডিএএনআইডিএ) আইন পরামর্শক হিসেবেও কাজ করছেন। তার আইনজীবী হিসেবে পথচলা শুরু ১৯৮৪ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে যুক্ত হন আইন পেশায়। সেখানকার ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন সেলিনা আখতার। সে সময় লক্ষ্মীপুরে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী আইনজীবী। নারী হিসেবে আইন পেশায় আসাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখত না কেউ। অনেকেই তাকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। বলতেন, ‘এ পেশা নারীর জন্য নয়।’

আর এখন, দৃশ্যটা তিনিই বদলে দিয়েছেন। আইনজীবী হিসেবে তিনি সফল। কথায় কথায় জানালেন নিজের পেশার শুরুর দিকের কথা ‘এক পক্ষের জমির ধান কেটে নিয়ে যায় লাঠিয়াল-দস্যুরা। মামলা লড়ে আসামিদের সাজা নিশ্চিতের ভার পড়ল আমার ওপর। যুক্তিতর্ক আর জেরায় আসামিদের বিরুদ্ধে সেদিন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করাতে পেরেছিলাম। ওটাই আইন পেশায় প্রথম আনন্দ ও বড় পাওয়া।’ জীবনের এই সুখস্মৃতির কথায় তার চোখ চিকচিক করে ওঠে। খানিকটা আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন তিনি।

সঙ্গে মনে পড়ল ব্যর্থতার গল্পও। আশির দশকে কোনো এক মামলায় আসামিদের জামিন করাতে পারেন নি সেলিনা আখতার। এই নিয়ে তার মন খারাপ হয়েছিল ভীষণ। সেদিন তখনকার বিচারক তাকে আশার বাণী শুনিয়ে বলেছিলেন, ‘সব মামলাতেই আইনজীবীরা জিতবেন এমন নয়। আপনি অনেক ভালো করছেন, আপনাকে সামনে এগিয়ে যেতেই হবে।’ বিচারকের এমন কথায় সেদিন মনোবল খুঁজে পেয়েছিলেন সেলিনা আখতার। সেই থেকে আর কখনো মনোবল হারান নি। সফল আইনজীবীর বাইরেও তার আরেকটি পরিচয় আছে। বর্তমানে এনিগমা আইটি অ্যান্ড সাপ্লাই সলিউশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ৪০টিরও বেশি জেলায় এর কার্যক্রম চলছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status