বাংলারজমিন
কাগাবলায় থামছে না পাহাড় কাটা
ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
৪ মে ২০১৯, শনিবার, ৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
অবাধে চলছে পাহাড় কাটা। উজাড় হচ্ছে বন। আবাস্থল আর খাদ্য সংকটে পড়ছে ওই এলাকার বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য। মহাহুমকিতে বন্য পরিবেশ। আর চরম ঝুঁকিতে পড়ছেন ওই এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা। মানবসৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের এমন নির্মম দৃশ্য এখন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবলা ইউনিয়নের আথানগিরি ও বোরুতলায়। ওই পাহাড়ি এলাকা থেকে প্রতিদিনই টিলার মাটি কেটে বিক্রি করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। সকাল থেকে বিকাল র্নিবিঘ্নে পাহাড় কাটছেন প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক। আর ওই কাটা মাটি পরিবহনে করে অন্যত্র নিচ্ছে ১৫-২০টি ট্রাক। নিমিষেই উধাও হচ্ছে পাহাড়ি মাটি। এখন নিত্য দিনই তাদের এমন বেআইনি কর্মযজ্ঞ চলমান। কিন্তু দেখার যেন নেই কেউ। স্থানীয় দু’একজন প্রতিবাদ জানালেও নানা কায়দায় তা বন্ধ করে দিচ্ছে ওরা। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করাও অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাই কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না ওই পাহাড়খেকোদের। ওই চক্রের এমন আগ্রাসী মনোভাবে প্রতিবছরই ভূ-মানচিত্র হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে পাহাড়ি এই জনপদ। দুর্গম এলাকার অজুহাতে পাহাড় কাটার খবর পেলেও অভিযানে যেতে আগ্রহী হন না সংশ্লিষ্টরা। তাদের এমন খোঁড়া অভিযোগের গাফিলতিতে আস্কারা পাচ্ছে ওই পাহাড় খেকোচক্র। এমন অভিযোগ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ওই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয় একটি চক্র পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করতে বেপরোয়া হয়ে উঠে। তাদের এমন নিধনযজ্ঞে ধ্বংস হয় পাহাড়ি টিলা আর জীববৈচিত্র্য। সরজমিন ওই এলাকায় গেলে চোখে পড়ে কোনো প্রকার সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই একটি প্রভাবশালী চক্র পাহাড় কেটে ধ্বংস করছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যকে। এতে করে হুমকিতে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। কেউ কেউ পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসতঘর বানাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সড়ক ও বতভিটা তৈরির অজুহাতে পাহাড় কাটছেন। তবে স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্য পাহাড় কাটা রোধে তারা অভিযান চালালে কিছু দিন থামলেও পরে আবারাও যেই সেই। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবলা ইউনিয়নের আথানগিরি ও বোরুতলায় এখন অবাদে পাহাড় কাটা চলমান। গেল মাসদিন থেকে দল বেঁধেই চলছে এই নিধনজজ্ঞ। ওই এলাকায় শুষ্ক মৌসুম এলেই নির্বিচারে চলে পাহাড় কাটা। আর বর্ষা মৌসুমে ঘটে পাহাড় ধসের ঘটনা। প্রতিদিন ওই এলাকা থেকে প্রায় ১৫-২০টি ট্রাক পরিবহন করছে পাহাড়কাটা মাটি। এভাবে পাহাড় কাটার কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে পাহাড় ও বনাঞ্চলের আয়তন। একে-অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে সরকারে খাস ভূমিতে বসবাস সহ নানা অজুহাতে চালাচ্ছেন এই নিধনযজ্ঞ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দার জানা সবুজ মিয়া, আসুক মিয়া ও মাছুম মিয়ার নেতৃত্বেই চলে এই পাহাড় কাট। তারা প্রশাসন ও সরকার দলীয় রাজনীতিবীদদের নাকি ম্যানেজ করেই চালান এই অপরাধকর্ম। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে কেউই এই কর্মযজ্ঞের প্রতিবাদ করতে চান না। কিন্তু চোখের সামনে প্রকৃতির এই বিশাল ক্ষতি দেখে তারা চরম হতাশ। পাহাড় কাটার বিষয়ে স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা জানান এই ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায় পাহাড় কাটছে একটি প্রভাবশালী চক্র। যখনই পাহাড় কাটার খবর তারা পান তাৎক্ষণিক বিষয়টি প্রশাসনকে জানান। কিন্তু ওরা আসার আগেই পাহাড় কাটারস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এবিষয়ে আপার কাগাবলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজির উদ্দিন জানান আগে বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি ওই এলাকায় পাহাড় কাটা হচ্ছে জেনে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে যারা কাটছেন তাদের পাহাড় না করতে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি পাহাড়কাটা বন্ধে সকলকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন দুর্গম এলাকা হওয়ার সুবাদে ওই পাহাড় খোকে চক্র সুযোগ নেয়। আমরা অভিযানে গেলে পালিয়ে যায়। পরে আবারও পাহাড় কাটা শুরু করে। পাহাড় কাটা বন্ধে ওদের বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কয়েকবার অভিযান হয়েছে খুব শিগগিরই ওখানে আরো অভিযান হবে এবং উপজেলা জুড়েই এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।