দেশ বিদেশ

নেত্রকোনার দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায়

স্টাফ রিপোর্টার

২৫ এপ্রিল ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৫০ পূর্বাহ্ন

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার আটপাড়ায় দুই আসামি আঞ্জু-ছোরাপের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ নিয়ে যুদ্ধাপরাধ মামলায় রায় হলো ৩৭টি।  গতকাল বুধবার বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই রায় ঘোষণা করেন। দুই আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা সোহরাব আলী ওরফে ছোরাপ রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলো। তবে অপর আসামি হেদায়েত উল্লাহ ওরফে আঞ্জু বিএসসি পলাতক রয়েছে। ২১৮ পৃষ্ঠার রায়ে আদালত বলেছে, আসামিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনে আনা ছয়টি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি অভিযোগে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে। বাকি তিন অভিযোগের প্রত্যেকটিতে তাদের দশ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পাবেন আসামিরা। তবে সে সুযোগ নিতে হলে পলাতক হেদায়েত উল্লাহ ওরফে আঞ্জুকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। যেসব অভিযোগে তাদের ফাঁসি দেয়া হয়- অভিযোগ-২: একাত্তরের ২৩শে আগস্ট নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানার  মোবারকপুর গ্রামের শহীদ মালেক তালুকদার ও কালা চান মুন্সীকে অপহরণ, হত্যা এবং লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ। এ অভিযোগে আসামি আঞ্জুর ফাঁসির রায় হয়েছে। অভিযোগ-৩: একাত্তরের ৩০ অগাস্ট  নেত্রকোনা  জেলার মদন থানার মদন গ্রামের শহীদ  হেলিম তালুকদারকে অপহরণ ও হত্যা এবং লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ। এ অভিযোগে দুই আসামির ফাঁসির রায় হয়েছে।  অভিযোগ-৪. একাত্তরের ৩রা  সেপ্টেম্বর  নেত্রকোণা  জেলার আটপাড়া থানার সুখারী গ্রামের দীনেশ চন্দ্র, শৈলেশ চন্দ্র, প্রফুল্ল বালা, মনোরঞ্জণ বিশ্বাস, দূর্গা শংকর ভট্টাচার্য্য, পলু দে, তারেশ চন্দ্র সরকারকে অপহরণ, হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ এবং  বেশ কিছু হিন্দু পরিবারকে  দেশত্যাগে বাধ্য করা। এ অভিযোগে দুই আসামির ফাঁসির রায় হয়েছে। এছাড়া, অভিযোগ ১: একাত্তরের ২৯শে মে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানার মধুয়াখালী গ্রামে ২০-৩০টি ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং গণহত্যার সমতুল্য অপরাধ। এ অভিযোগে দুই আসামির দশ বছরের সাজার রায় হয়েছে। অভিযোগ-৫: একাত্তরের ২রা সেপ্টেম্বর  নেত্রকোণা  জেলার মদন থানার মাঝপাড়া গ্রামের হামিদ হোসেনকে অপহরণ, নির্যাতন। এ অভিযোগে দুই আসামির দশ বছরের সাজার রায় হয়েছে। অভিযোগ-৬: একাত্তরের ৬ই সেপ্টেম্বর  নেত্রকোনা  জেলার মদন থানার মদন গ্রামের ১৫০-২০০টি ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং হিন্দুদের  দেশত্যাগে বাধ্য করা। এ অভিযোগে দুই আসামির দশ বছরের সাজার রায় হয়েছে। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল বলেন, বিশ্বের মানুষ এখন গণহত্যার বিরুদ্ধে সক্রিয় ও সচেতন। ট্রাইব্যুনাল আগেও উচ্চারণ করেছেন, এবারও উচ্চারণ করলেন- গণহত্যা আর না। অন্যদিকে আসমিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আব্দুস শকুর খান বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। আর পলাতক যিনি আছেন তিনি যদি আদালত ও রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা  দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন, তাহলে আশা করি দুজনেই খালাস পাবেন। এদিকে, ২০১৭ সালের ১০ই জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়ার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ওই সময় আসামি ছিলেন তিনজন। তারা হলেন- মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির সদস্য  হেদায়েত উল্লাহ ওরফে আঞ্জু বিএসসি (৮০), এনায়েত উল্লাহ ওরফে মঞ্জু (৭০), সোহরাব ফকির ওরফে সোহরাব আলী ওরফে ছোরাপ আলী (৮৮)। আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৬টি অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আটক অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, গণহত্যা এবং দেশত্যাগে বাধ্যকরণের মতো অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা নেত্রকোনার আটপাড়া থানার মধুয়াখারী, মোবারকপুর, সুখারী এবং মদন থানার মদন গ্রামে এসব অপরাধ করেন। আঞ্জু-মঞ্জু দুই ভাই। তিনজনের মধ্যে মঞ্জু ও রাজাকার ছোরাপ আটক ছিলেন। পরে ২০১৭ সালের ২৫শে জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এনায়েত উল্লাহ ওরফে মঞ্জু।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status