এক্সক্লুসিভ

রমজানের আগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকার

স্টাফ রিপোর্টার

২৫ এপ্রিল ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:৫৯ পূর্বাহ্ন

পবিত্র রমজানের প্রাক্কালে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, মিডনাইট ভোটের সরকারের মন্ত্রীরা যা বলেন, সাথে সাথে তার উল্টোটা ঘটে। ক’দিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী ঘটা করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন- রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়বে না। তারপর দিনই হু হু করে দাম বেড়েছে প্রায় সকল পণ্যের। রমজানের প্রাক্কালে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য সরকারকে ধিক্কার জানিয়েছেন তিনি। গতকাল দুপুরে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারও পিয়াজের দাম প্রতি কেজি বিক্রি হয় ২৫ টাকায়। আগের সপ্তাহে দাম ছিল ২০ টাকা। মঙ্গলবার সবকটি বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৬ থেকে ২৭ টাকায়। একইভাবে এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছিল ৮০ টাকায়। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা। আলু প্রতি কেজি ১৬ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়।

চিনি ৫২ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ৯০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৮ টাকায়। রিজভী বলেন, এভাবে ছোলা, ডাল, আদা, ময়দা, কাঁচা মরিচসহ সবরকম নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। অল্প আয়ের মানুষেরা রমজানের আগেই আঁতকে উঠছেন হু হু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের এই মূল্যবৃদ্ধিতে। তিনি বলেন, সারা ঢাকা শহরে ওয়াসার দুষিত পানির সরবরাহে জনজীবন এখন ভয়ঙ্কর রকম সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নির্বিকার। বাড়ীতে বাড়ীতে টায়ফয়েড, ডায়রিয়া, জ্বর মহামারী আকার ধারণ করেছে। ফলে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। রিজভী বলেন, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজে ওয়াসার পানি পান করেন না, অথচ তিনি বলছেন-ওয়াসার পানি ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ। অবৈধ সরকার নিজে টিকে থাকার জন্য সারা জাতিকেই অসুস্থ বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে। আমরা সরকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াসার মানববিধ্বংসী নীতির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার আহবান জানাচ্ছি।

বিপজ্জনক অবস্থায় কিশোরী-তরুণী-ছাত্রীরা
রিজভী বলেন, খবরের কাগজ খুললেই নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, লাশ আর মৃত্যুর হাতছানি। লক্ষীপুরের দগ্ধ তরুনীর মৃত্যু, চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় হাত-পা বেঁধে স্কুল ছাত্রীকে নির্যাতন, নোয়াখালীর সেনবাগে স্কুল ছাত্রীকে আটকে রেখে নির্যাতন, ঝালকাঠিতে স্কুল ছাত্রীর লাশ উদ্ধারের সংবাদে গণমাধ্যম পরিপূর্ণ। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় বসবাস করছে কিশোরী-তরুণী-ছাত্রীরা। তিনি আরো বলেন, দেশে অনাচার-বিচারহীনতা, নারী-শিশু নির্যাতনসহ অপরাধ ও নিয়ম বহির্ভূত আচরণ এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। এতে ভেঙ্গে পড়েছে সমাজের বন্ধন। এই সামাজিক অপরাধের পেছনে যারা জড়িত তারা অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের লোক। অপরাধ প্রণতার এই বেপরোয়া রূপের একমাত্র কারণ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের অতিমাত্রার দখল ও লুটের ক্ষুধা। তারা শুধু মানুষের সহায়-সম্পত্তিই নয়, নারীদের উপরও ঝাঁপিয়ে পড়ছে আদিম বর্বরতার চেতনা ধারণ করে। তারা শাস্তির বদলে ক্ষমতার শীর্ষে বসা লোকজনের আনুকুল্য পাচ্ছে।

আওয়ামী সংগঠনগুলো এখন মূর্তিমান আতঙ্ক
রিজভী বলেন, মধ্যরাতের ভোটের পর আওয়ামী সংগঠনগুলো এখন বেপরোয়া, মনুষ্যত্বহীন, লাগামহীন, উদ্ধত এক মূর্তিমান আতঙ্ক। এদের কারনে বাংলাদেশে এখন ঘাতক ও মৃত্যুরই সহাবস্থান। ১৯শে এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি বাশারের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র ব্যক্তি এলাকার দরিদ্র মানুষ কালা মিয়ার পা কেটে নেয়। কালা মিয়ার পুত্র বিপ্লবের দু’পায়ের রগও কেটে দেয়। এই ঘটনায় শিউরে উঠেছে দেশবাসী। থানা’র ওসি বলেছে- অনেক বড় এলাকা কালা মিয়ার কর্তনকৃত পা পাওয়া যাচ্ছে না। কালা মিয়ার স্ত্রী জানিয়েছেন- স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেই সহ-সভাপতির ভয়ে তারা গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে গিয়েছিল।

পুলিশ দুস্কৃতিকারিদের টিকিটিও এখন ছুঁতে পারেনি। এই পৈশাচিক ঘটনা বিচারের মুখ দেখবে কি কোনদিন? রিজভী বলেন, শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী বোমা হামলায় দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নিন্দা, প্রতিবাদ ও শোক জানানো হয়েছে। এই হামলা মানবতা ও মানবজাতির বিরুদ্ধে এক ভয়ঙ্করতম অপরাধ। এই বোমা হামলা দেশ-কাল ও সভ্যতার জন্য এক বড় ধরণের কলঙ্ক। শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় বাংলাদেশী যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা, আহতের আশু সুস্থতা কামনা ও তাদের পরিবার-পরিজনকে সমবেদনা জানাচ্ছি। সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status